‘দানা’ আছড়ে পড়ার শঙ্কায় সাবধানী দিঘা, বকখালি! উপকূলের জেলাগুলিতে তুঙ্গে প্রশাসনিক তৎপরতা

বঙ্গোপসাগরে ঘনীভূত গভীর নিম্নচাপ সাইক্লোনের আকার নিয়ে আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আছড়ে পড়তে পারে বাংলা এবং ওড়িশা উপকূলে। যার প্রভাবে বুধবার থেকে শুরু করে কয়েকটা দিন দক্ষিণবঙ্গের গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে পূর্বাভাস আবহাওয়া দফতরের। ওই আশঙ্কায় দিঘা-সহ সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে বিশেষ সতর্কতার নির্দেশ দিল পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যে সমস্ত ব্লক আধিকারিককে জেলাশাসকের দফতর থেকে র্নির্দেশিকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। একই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানা, সাগর, পাথরপ্রতিমা, বকখালির মতো এলাকাগুলির জন্য। পাশাপাশি কৃষকদেরও সতর্কতামূলক বার্তা দিয়েছে রাজ্য সরকার।

বুধবার পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিলে এর নাম হবে ‘দানা’। ক্রমশ তা উত্তর এবং উত্তর-পশ্চিমে অগ্রসর হবে। আগামী বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর সকালেই বাংলা, ওড়িশা উপকূলের কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়ার সম্ভাবনা ওই ঘূর্ণিঝড়ের। এই পরিস্থিতিতে নামখানা, সাগর, পাথরপ্রতিমা, বকখালি-সহ উপকূলবর্তী এলাকায় প্রশাসনের তরফে মাইকিং করা হচ্ছে। সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী বঙ্কিমচন্দ্র হাজরার উপস্থিতিতে জেলা প্রশাসন এবং ব্লক স্তরের প্রশাসনের বৈঠক হয়েছে এক দফায়। তার পর পঞ্চায়েতের প্রধান, সদস্য এবং জনপ্রতিনিধিদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। সুন্দরবন এলাকায় ফ্লাড সেন্টারগুলোকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কাকদ্বীপ এলাকায় কন্ট্রোল রুম খুলেছে মহকুমা দফতর। আগের ঝড়ঝাপ্টার অভিজ্ঞতা থেকে আগেভাগে প্রশাসনের তরফ থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে।

আগামী দু’দিন সমুদ্র অত্যন্ত উত্তাল থাকার আশঙ্কা রয়েছে। তাই দুই জেলার মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে মাছ ধরতে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, সাইক্লোনের আগাম সতর্কবার্তার পরেই উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের জন্য ব্লক আধিকারিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ত্রাণশিবিরগুলোতে প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রীও রাখার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস মতো পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।

গত কয়েক দিন ভরা জোয়ারের সময় দিঘায় সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতি দিনই সমুদ্রের জল দিঘার গার্ডওয়াল টপকে সৈকত সরণিকে ডুবিয়ে দিচ্ছে। সামনে অমাবস্যার কটাল। সেই সময়ে আবহাওয়া খারাপ হলে সমুদ্রের চেহারা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আগামী কয়েক দিন দিঘা এবং পার্শ্ববর্তী পর্যটনকেন্দ্রের পর্যটকেরা যাতে কোনও ভাবেই সমুদ্রস্নানে না যান, সে ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। অন্য দিকে, দিঘার হোটেল ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা যাচ্ছে, পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে এখন পর্যটকদের ভিড়। তবে এর আগে একাধিক ঘূর্ণিঝড়ের অভিজ্ঞতা থেকে তাঁরা সাবধান থাকছেন বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

দানার প্রভাবে কৃষিক্ষেত্রে ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সোমবার রাজ্য সরকারের কৃষি দফতরের তরফে কৃষকদের জন্য একটি বিবৃতিতে বলা হচ্ছে, ধানের ৮০ শতাংশ দানা পেকে গেলে ফসল সত্বর যেন কেটে নেওয়া হয়। আর কাটা ধান জমিতে ফেলে না রেখে দ্রুত খামারে তুলে নেওয়ার আবেদন করা হয়েছে। পেঁপে, কলা ইত্যাদি সব্জি, পানের বরজ এবং ডাল শস্যের জমিগুলিতে নিকাশি ব্যবস্থা সত্বর ঠিক করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়ার উন্নতি-না হওয়া পর্যন্ত এই মুহূর্তে কোনও রাসায়নিক বা কীটনাশক প্রয়োগ করতে নিষেধ করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.