জমিতে দেওয়ার জন্য সার শেষ হয়ে গিয়েছিল। সেই সার কেনার জন্য ১০০ টাকা দিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী। কিন্তু সোমবার সারের দোকান বন্ধ থাকায় সেই ১০০ টাকা থেকে ৬০ টাকা দিয়ে দু’টি লটারির টিকিট কেটেছিলেন। সেই টিকিটেই ভাগ্যের চাকা ঘুরে গেল আউশগ্রামের ডাঙাপাড়ার বাসিন্দা বামাচরণ মেটের। রাতারাতি হলেন কোটিপতি। নিরাপত্তার জন্য সোমবার থেকে তিন দিন ধরে থাকতে হচ্ছে আউশগ্রামের ফাঁড়িতেই।
বামাচরণের বাড়িতে রয়েছেন বিধবা মা, স্ত্রী, এক ছেলে ও মেয়ে। সামান্য কিছুটা জমি ভাগচাষের পাশাপাশি জনমজুরি করেন। তিনি জানান, জমিতে দেওয়ার জন্য পটাশ সার শেষ হয়ে গিয়েছিল। সেটাই কিনতে ১০০ টাকা দিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী বোধন দেবী। গত সোমবার দোকানে সার কিনতে গিয়ে দেখেন দোকান বন্ধ রয়েছে। অন্য দোকানে পটাশ পাওয়া যায়নি। বাড়ি ফেরার পথে এক জন লটারির টিকিট বিক্রেতার থেকে স্ত্রীর দেওয়া ১০০ টাকার মধ্যে ৬০ টাকা দিয়ে দুই টিকিট কিনে ফেলেন বামাচরণ। ওই দিন দুপুরে খেতে বসার সময় ফোনে টিকিটের নম্বর মেলাতে গিয়ে চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যায় তাঁর। তিনি দেখেন দু’টির মধ্যে একটি টিকিটে প্রথম পুরস্কার লেগেছে। তিনি বিশ্বাসই করতে পাচ্ছিলেন না যে তিনি প্রথম পুরস্কার জিতেছেন। বাড়িতে সকলকে জানালে তাঁরাও প্রথমে চমকে ওঠেন। বামাচরণ বলেন, “দুই সিরিজ়ের টিকিট কিনি। দাম পড়ে ৬০ টাকা। অভাবের সংসারে এই টাকার দাম অনেক। টিকিটের কথা বাড়িতে কাউকে কিছু বলিনি। এর পর আমি মাঠে ছাগল চড়াতে যাই। বাড়ি এসে খেতে বসার সময় টিকিটের নম্বর মিলিয়ে দেখি আমি ফার্স্ট প্রাইজ পেয়েছি।”
তবে লটারিতে কোটিপতি হলেও দুশ্চিন্তা কমেনি বামাচরণের। নিরাপত্তার অভাবে ভুগছিলেন তিনি। তাই পুরস্কার জেতার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই তাঁর ভাইপোকে নিয়ে ছোড়া ফাঁড়িতে চলে যান। সেখানে পুলিশের কাছে নিরাপত্তার আবেদন জানান। তাঁর আবেদনে সাড়া দেয় পুলিশ। আপাতত তাঁর আশ্রয় ফাঁড়িতেই। তবে এখনও টিকিট জমা করতে পারেননি বলে একটু চিন্তায় আছেন বামাচরণ। ফাঁড়ির ইনচার্জ ত্রিদিপ রাজকে বামাচরণ বলেন, “স্যার আমি এখানেই থাকতেই চাই।” তার পর পুলিশের কাছে ঘটনাটি খুলে বলেন বামাচরণ। পুলিশও নিরাপত্তার খাতিরে ফাঁড়িতেই থাকতে বলেন তাঁকে। বাড়ি থেকে স্ত্রী দু’বেলা খাবার দিয়ে যাচ্ছেন বামাচরণকে।
বামাচরণ বলেন,“ব্যাঙ্কে নতুন অ্যাকাউন্ট করতে হবে। টিকিট ভাঙানোর জন্য কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। কিন্তু এখন পুজোর ছুটি। আমার পুরষ্কার জেতার কথা প্রচার হয়ে গিয়েছে। তাই বাড়িতে থাকার ঝুঁকি নিতে পারছি না।”
স্ত্রী বোধনদেবী বলেন, “সারাজীবন অভাবের মধ্যেই কাটিয়েছি। মা লক্ষ্মীর কৃপায় এত টাকার পুরষ্কার জেতার পর এ বছরেই বাড়িতে লক্ষ্মীপুজো করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু স্বামীকে থানায় থাকতে হচ্ছে। তাই পরের বছর মায়ের পুজো করব।
কিন্তু কী করবেন এত টাকা দিয়ে? বামাচরণ বলেন, “পঞ্চাশ লাখ টাকা এমআইএস করব। একটা বাড়ি করব। দু’বিঘা জমি কেনারও ইচ্ছে আছে। তবে যাই করি না কেন এই গ্রাম ছেড়ে কোথাও যাব না। টাকা পেয়েছি বলে শহরে গিয়ে থাকার কোনও পরিকল্পনা নেই।”