৯০ ডিগ্রিতেও ‘মুখোমুখি’! মধ্য কলকাতায় মঙ্গলবার পরস্পরকে সমকোণে ছেদ করবে দুই কার্নিভাল-রেখা

আন্দোলন এবং উৎসবের জ্যামিতি দেখতে চলেছে মঙ্গলবারের মধ্য কলকাতা। দেখতে চলেছে দিদির কার্নিভাল বনাম দ্রোহের কার্নিভালের যুদ্ধ।

আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের ‘আমরণ অনশন’-এর প্রতি সংহতি জানিয়ে মঙ্গলবার ‘দ্রোহের কার্নিভাল’ ডেকেছে ‘জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টর্স। বিকাল ৪টের সময়ে রানি রাসমণি রোডে ওই জমায়েতের ডাক দেওয়া হয়েছে। ডাক্তারদের আটটি সংগঠনের যৌথ মঞ্চের ওই কর্মসূচিকে সমর্থন জানিয়ে আরও বেশ কিছু মঞ্চ রানি রাসমণিতে জমায়েতের আহ্বান জানিয়েছে। সমর্থন করেছে মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপকদের সংগঠনও। আবার মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টেয় রেড রোডে রাজ্য সরকারের পুজো কার্নিভাল।

অবস্থানগত দিক থেকে রানি রাসমণি রোড এবং রেড রোড পরস্পরের ৯০ ডিগ্রি কোনাকুনি। ডোরিনা ক্রসিং থেকে গঙ্গামুখী সোজা রাস্তাটি রানি রাসমণি রোড। যা গিয়ে পড়েছে নেতাজি মূর্তির পাদদেশে। তার বাঁ’দিকেই রেড রোড। অর্থাৎ, রেড রোডও এসে মিশেছে নেতাজি মূর্তিরই পাদদেশে। জ্যামিতিক পরিভাষায় পরস্পরের ৯০ ডিগ্রিতে সংঘটিত হবে দুই কার্নিভাল। ‘রাজনৈতিক’ ভাবে মুখোমুখি দুই যুযুধান কার্নিভাল-রেখা আসলে জ্যামিতিক ভাবে পরস্পরকে ছেদ করবে সমকোণে।

দ্রোহের কার্নিভালের প্রস্তুতি

রাজ্যের তরফে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ রানি রাসমণি রোডে দ্রোহের কার্নিভাল না করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন উদ্যোক্তাদের। নবান্নের তরফে যুক্তি দেওয়া হয়েছিল, ওই কর্মসূচি রাজ্যের ভাবমূর্তির জন্য ‘অমর্যাদাকর’। সে অনুরোধ মানা তো দূরস্থান, সোমবার পন্থের সঙ্গে বৈঠকে চিকিৎসকেরা উল্টে তাঁকে দ্রোহের কার্নিভালে আমন্ত্রণ জানিয়ে এসেছেন! আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে ওই বৈঠকে উপস্থিত স্বরাষ্ট্রসচিব নন্দিনী চক্রবর্তীকেও। প্রসঙ্গত, কলকাতা হাই কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, পুজোর কার্নিভালে কোনও বিঘ্ন ঘটানো যাবে না। মুখ্যসচিব সে কথাও উদ্যোক্তাদের জানিয়েছিলেন। যার প্রেক্ষিতে উদ্যোক্তারা পাল্টা জানিয়ে দেন, আইনের সীমার মধ্যে থেকেই কর্মসূচি পালন করা হবে।

সোমবারেই দেখা গিয়েছে, রানি রাসমণি রোডের একটি লেন (ভবানীপুর তাঁবুর সামনে) সম্পূর্ণ বন্ধ করে রেখেছে পুলিশ। সেই লেনটিতে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে দূরপাল্লার বাস। সন্ধ্যার পরে দেখা যায় কিছু বাসে আলোও জ্বলছে। মাঝের লেন দিয়ে কেবল গাড়ি যাতায়াত করছে। তবে এই জায়গায় অনেক সময়েই দূরপাল্লার বাস দাঁড়িয়ে থাকে। দেখা গিয়েছে, ওই লেনের অপরপ্রান্তে পুলিশের ব্যারিকেড রয়েছে। সেখানে চোখে পড়ার মতো সংখ্যায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। যদিও এই এলাকায় পুলিশ থাকে। তবে সোমবার সংখ্যাটা চোখে পড়ার মতো। সেই অর্থে দজ্রোহের কার্নিভালের কোনও প্রস্তুতি সোমবার রাত পর্যন্ত চোখে পড়েনি। বরং রানি রাসমণি রোডে বেশ কয়েকটি পুজো কর্নিভালের হোর্ডিং রয়েছে। যাতে রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবিও। তবে মঙ্গলবার কী হবে, তা নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে।

দিদির কার্নিভালের প্রস্তুতি

সোমবার বিকেলেই প্রস্তুতিপর্বের কাজ প্রায় শেষ। রেড রোডের কার্নিভালে থাকবেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। থাকবেন দেশবিদেশের অতিথিবর্গও। জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী-সহ গুরুত্বপূর্ণ অতিথিরা যেখানে বসবেন, সেই মূল মঞ্চটি তৈরি হয়েছে পুরনো জমিদার বাড়ির আদলে। মঞ্চের উল্টোদিকেই থাকছে প্রকাণ্ড এলইডি স্ক্রিন। তা ছাড়াও গোটা রেড জুড়ে প্রায় এক ডজন জায়ান্ট স্ক্রিন লাগানো হয়েছে। গোটা অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচারিত হবে সমাজমাধ্যমে। তার জন্য বিভিন্ন কোণ থেকে ব্যবহার করা হবে অসংখ্য ক্যামেরা। ড্রোন উড়িয়েও তোলা হবে ছবি।

নেতাজির মূর্তি থেকে মেরেকেটে ৫০০ মিটার দূরে রেড রোডের দু’পাশে টাঙানো হয়েছে শামিয়ানা। যা গিয়েছে একেবারে ফোর্ট উইলিয়ামের অন্যতম ফটকের লাগোয়া সিগন্যালের আগে পর্যন্ত। নেতাজি মূর্তি থেকে ফোর্ট উইলিয়ামের দিকে মুখ করলে বাঁ’দিকের শামিয়ানার তলায় যাঁরা বসবেন, তাঁদের প্রবেশ ডাফরিন রোডের দিক থেকে। উল্টোদিকের শামিয়ানায় যাঁদের বসার বন্দোবস্ত, তাঁদের প্রবেশ ফোর্ট উইলিয়ামের দিক থেকে এবং মহমেডান তাঁবুর সামনে দিয়ে।

প্রশাসন সূত্রে খবর, মোট ২৮ হাজার আমন্ত্রণপত্র বিলি করা হয়েছে। যা অন্য বারের থেকে ছ’হাজার বেশি। ফোর্ট উইলিয়ামের দিকে বসার পরিসর বৃদ্ধি করা হয়েছে। রাজ্য সরকার আয়োজিত পুজো কার্নিভালে মোট ১০৩তি পুজো কমিটি অংশগ্রহণ করবে। সোমবার সন্ধ্যার পর থেকেই রেড রোডে যান চলাচল নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে। বেশ কিছু পুজো কমিটি সন্ধ্যার পর থেকেই হেস্টিংসের দিকে শোভাযাত্রার প্রস্তুতি শুরু করেছে।

অন্যান্য বার কার্নিভাল চলে বেশি রাত পর্যন্ত। কার্নিভালে যাওয়ার জন্য সোমবার থেকেই বিভিন্ন ক্লাবে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরের আগেই অংশগ্রহণকারী ক্লাবগুলিকে তাদের প্রতিমা এবং শোভাযাত্রা নিয়ে রেড রোডের অদূরে পৌঁছতে হবে।

কী হয়, কী হয়

যেহেতু দু’টি কার্নিভালই পরস্পরের প্রায় লাগোয়া রাস্তায় হবে, তাই উত্তেজনা এবং টেনশনের সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছে না প্রশাসনের একাংশ। সূত্রের খবর, পুলিশ-পুলিশে ছয়লাপ থাকবে গোটা এলাকা। তাতে ‘অপ্রীতিকর’ পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে। তবে দুর্গা কার্নিভালে ‘জাস্টিস ফর আরজি কর’ স্লোগান উঠবে কি না, তা নিয়ে খুব নিশ্চিত নন কেউ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.