ধর্মতলার অনশনমঞ্চে অসুস্থ হয়ে পড়লেন আরও এক জুনিয়র ডাক্তার পুলস্ত্য আচার্য। রবিবার সন্ধ্যা থেকেই শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে তাঁর। পেটে ব্যথা শুরু হয় তাঁর। অনশনমঞ্চেই পুলস্ত্যর স্বাস্থ্যপরীক্ষা করেন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট’-এর চিকিৎসকেরা। তার পরই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। রাত পৌনে ১০টা নাগাদ অনশনমঞ্চ থেকে অ্যাম্বুল্যান্সে করে হাসপাতালে রওনা করানো হয় পুলস্ত্যকে। তাঁকে নিয়ে আসা হয় নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে (এনআরএস)। সেখানে জরুরি বিভাগে পুলস্ত্যর স্বাস্থ্যপরীক্ষা করছেন সিনিয়র চিকিৎসকেরা। সূত্রের খবর, পুলস্ত্যর জন্য একটি সিসিইউ শয্যা ইতিমধ্যেই প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পুলস্ত্যর চিকিৎসার জন্য এনআরএসে একটি মেডিক্যাল টিমও গঠন করা হয়েছে।
গত ৫ অক্টোবর ধর্মতলায় আমরণ অনশন শুরু করেছিলেন ছ’জন জুনিয়র ডাক্তার। তাঁদের মধ্যেই ছিলেন অ্যানাস্থেসিয়া বিভাগের পিজিটি প্রথম বর্ষের পড়ুয়া পুলস্ত্য। টানা আট দিন সেখানেই অন্যদের সঙ্গে অনশন চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু রবিবার সন্ধ্যায় তলপেটে যন্ত্রণা শুরু হয় তাঁর। সঙ্গে বমি ভাব ছিল। অনশনমঞ্চে চিকিৎসকেরা তাঁকে পরীক্ষা করেন। জানা যায়, কিটোন বডির পরিমাণও বেড়েছে। তখনই তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন আন্দোলনকারীরা।
জানা গিয়েছে, পুলস্ত্যর জন্য এনআরএসে পাঁচ সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। সেই দলে রয়েছেন জেনারেল মেডিসিন, চেস্ট, কার্ডিও, নেফ্রো এবং অ্যানাস্থেসিয়া বিভাগের বিশেষজ্ঞেরা। তাঁরাই পুলস্ত্যর স্বাস্থ্যপরীক্ষা করছেন। তার পরই সিসিইউতে ভর্তি করানো হবে বলে সূত্রের খবর। যদিও প্রথমে পুলস্ত্য অনশনমঞ্চ ছেড়ে হাসপাতালে আসতে চাননি। তবে পরে তাঁকে বুঝিয়ে হাসপাতালে নিয়ে আসেন জুনিয়র ডাক্তারেরা।
অসুস্থতার কারণে শনিবার দুই অনশনকারীকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। দুপুরে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের অনশনরত জুনিয়র ডাক্তার অলোক বর্মা এবং রাতে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অনুষ্টুপ মুখোপাধ্যায়কে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বর্তমানে সিসিইউতে রেখে তাঁদের চিকিৎসা চলছে। তার আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে ধর্মতলার অনশনমঞ্চে অসুস্থ হয়ে পড়ায় আরজি করের জুনিয়র ডাক্তার অনিকেত মাহাতোকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। আরজি করেই এখনও চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে রয়েছেন তিনি।
গত শনিবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে ধর্মতলায় মেট্রো চ্যানেলের সামনে আমরণ অনশনে বসেছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। প্রথমে ছ’জন অনশন শুরু করেন। পরের দিন তাতে যোগ দেন আরজি করের অনিকেত। এ ছাড়াও উত্তরবঙ্গের দু’জনও অনশন শুরু করেছিলেন। অনিকেত, অনুষ্টুপের পর এ বার অসুস্থ হয়ে পড়লেন পুলস্ত্য। তবে এখনও ধর্মতলায় অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন তনয়া পাঁজা, স্নিগ্ধা হাজরা, সায়ন্তনী ঘোষ হাজরা, অর্ণব মুখোপাধ্যায়। অন্য দিকে, উত্তরবঙ্গে অনশন করছেন সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়। অনশনের জেরে তাঁরাও শারীরিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন। শুক্রবার রাতে আরও দু’জন জুনিয়র ডাক্তার আমরণ অনশনে যোগ দিয়েছেন। তাঁরা হলেন পরিচয় পণ্ডা এবং আলোলিকা ঘোড়ুই।