অবস্থা এখনও স্থিতিশীল নয়, সিসিইউতে পর্যবেক্ষণে অনিকেত, গড়া হল পাঁচ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড

শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় বৃহস্পতিবার রাতেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে আরজি করের অনশনরত জুনিয়র ডাক্তার অনিকেত মাহাতোকে। গভীর রাতে ধর্মতলার অনশনস্থল থেকে তাঁকে আরজি করে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সিসিইউতে ভর্তি করানো হয়েছে তাঁকে। এখনও সেখানেই চিকিৎসাধীন তিনি। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, অনিকেতের শারীরিক অবস্থা এখনও স্থিতিশীল নয়। তাঁকে পর্যবেক্ষণে রাখা প্রয়োজন। অনিকেতের চিকিৎসার জন্য গড়া হয়েছে মেডিক্যাল বোর্ডও। শুক্রবার সকালেও অনিকেতের শারীরিক অবস্থা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে ‘জুনিয়র ডক্টর্‌‌স ফ্রন্ট’।

হাসপাতাল সূত্রে খবর, অনিকেতের শরীরে আইভি ফ্লুইড চালানো হয়েছে। রক্তের একাধিক পরীক্ষাও করা হয়েছে। আরজি করের জুনিয়র ডাক্তার আশফাক উল্লাহ নায়ার বলেন, ‘‘সঠিক সময় নিয়ে আসার জন্য প্রাণঘাতী হয়নি। কিন্তু আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসা চলছে।’’ চিকিৎসকেরাই জানাচ্ছেন, অনিকেতের শরীরে জলশূন্যতা ছিল। তাঁর মূত্রে ‘কিটোন বডি’ও পাওয়া গিয়েছে। আগামী তিন-চার দিন চিকিৎসাধীনই থাকবেন অনিকেত। এর পর খানিক সুস্থ হয়ে উঠলেও পর্যবেক্ষণে রাখা হবে তাঁকে। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে আরজি করের সিসিইউয়ের ইনচার্জ চিকিৎসক সোমা মুখোপাধ্যায় জানান, ইতিমধ্যেই তাঁরা অনিকেতের চিকিৎসায় পাঁচ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করেছেন। তাতে সোমা ছাড়াও রয়েছেন নেফ্রোলজি বিভাগের চিকিৎসক কানাইলাল কর্মকার, মেডিসিন বিভাগের সুদীপ্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, হৃদ্‌‌রোগ বিশেষজ্ঞ বিশ্বদীপ মজুমদার এবং চিকিৎসক সুজয়কুমার রায়।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ধর্মতলার মঞ্চে গিয়ে অনিকেতের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন আরজি করের চিকিৎসক সৈকত নিয়োগী। তিনি জানিয়ে দেন, অনিকেতের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁকে অবিলম্বে হাসপাতালে ভর্তি করানো প্রয়োজন। আইসিইউ-তে পর্যবেক্ষণে রাখা জরুরি তাঁকে। এর পরে রাতে অনশনমঞ্চে যান রাজ্য সরকার গঠিত চার চিকিৎসকের একটি দল। অনশনকারীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে তাঁরা জানান, অনিকেতের পাশাপাশি অনশনকারী আর এক চিকিৎসক স্নিগ্ধা হাজরারও শারীরিক অবস্থা তুলনামূলক ভাবে বেশি খারাপ। অনিকেত এবং স্নিগ্ধা দু’জনকেই হাসপাতালে ভর্তি করানো দরকার। শেষমেশ অনিকেতের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে অ্যাম্বুলেন্সে করে আরজি করে নিয়ে যান সতীর্থেরা। অনিকেতের শারীরিক অবস্থার অবনতি নিয়ে উদ্বিগ্ন জুনিয়র ডক্টর্‌‌স ফ্রন্টও। বৃহস্পতিবার রাতে তাদের তরফে বলা হয়, ‘‘আমরা জানি না আর কবে এই সরকারের টনক নড়বে। অনিকেতের শারীরিক অবস্থার অগ্রগতি সম্পর্কে আমরা আপনাদের জানাতে থাকব।’’

গত রবিবার রাত থেকে অনশন করছেন অনিকেত। তারও এক দিন আগে থেকে ধর্মতলায় মেট্রো চ্যানেলের সামনে আমরণ অনশনে বসেছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। প্রথমে ছ’জন অনশন শুরু করেন। পরের দিন যোগ দেন আরজি করের অনিকেতও। টানা অনশনে সকলেরই শরীর ভেঙে গিয়েছে। কারও কারও শারীরিক অবস্থা নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ। তবু মনোবল কমেনি কারোরই। এখনও ধর্মতলায় অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন তনয়া পাঁজা, স্নিগ্ধা হাজরা, সায়ন্তনী ঘোষ হাজরা, অনুষ্টুপ মুখোপাধ্যায়, অর্ণব মুখোপাধ্যায় এবং পুলস্ত্য আচার্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.