মেট্রো-যন্ত্রণা নিয়েই পুজো শুরু হল, দরজা বন্ধ হওয়া দায়, এসি কামরাতেও ঘাম ছুটছে, বাকি ক’দিন কী হবে

একে ভিড়ে রক্ষা নেই, লেটলতিফ দোসর! ষষ্ঠীর সকাল থেকেই মেট্রো যাত্রীদের অভিজ্ঞতা এমনই। দক্ষিণেশ্বর হোক বা দমদম, কালীঘাট হোক বা শোভাবাজার— একের পর স্টেশন ভিড়ঠাসা। যাত্রীদের উঠতে-নামতে বেগ পেতে হয়েছে বিস্তর। শুধু ভিড় নয়, একই সঙ্গে যাত্রীদের অভিযোগ মেট্রো সময়ে চলছে না। কাজ করছে না মেট্রোর ভিতরের বাতানুকূল যন্ত্রও। মেট্রো কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে মেট্রোর দরজা বন্ধ করতে সমস্যা হচ্ছে। ফলে, প্রতি স্টেশনেই নির্ধারিত সময়ের থেকে ট্রেনকে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে বেশি ক্ষণ। আর সে কারণেই মেট্রো সময়ে চালানো সম্ভব হচ্ছে না। একই সঙ্গে তাঁদের যুক্তি, অতিরিক্ত ভিড়ের কারণেই বাতানুকূল যন্ত্রের প্রভাব যাত্রীদের অনুভূত হচ্ছে না।

বুধবার সকাল থেকে ভিড়েঠাসা ছিল মেট্রো। দমদমের মতো স্টেশনে টিকিট কাটার লাইনও ছিল প্রচণ্ড লম্বা। স্টেশন চত্বর ছাড়িয়ে যায় সেই ভিড়। নিত্যযাত্রীর পাশাপাশি ঠাকুর-দর্শনার্থীদের ভিড়ে মেট্রো উপচে পড়ে। নিত্যযাত্রীদের একাংশের অভিযোগ, কলকাতায় ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে এমন অনেকেই মেট্রোয় সওয়ার হচ্ছেন, যাঁরা পাতালরেলে ওঠানামার ‘নিয়ম’ সম্পর্কে অবহিত নন। এই ‘অনিয়মিত’ যাত্রীদের জন্যই বিপাকে পড়তে হচ্ছে বলে দাবি ওই অংশের।

কাজ সেরে চাঁদনি চক স্টেশন থেকে বাড়ি ফেরার সময় সৌভিক রায়ের অভিজ্ঞতা খুবই খারাপ। বললেন, ‘‘প্ল্যাটফর্মে নেমে দেখলাম দক্ষিণেশ্বর যাওয়ার ট্রেনের সময় দেখাচ্ছে ৫:৩৭। সেই ট্রেন এল দীর্ঘক্ষণ পর। তা-ও দক্ষিণেশ্বরের বদলে এল দমদমের ট্রেন। এত লোক ঠেলাঠেলি করে উঠল যে, অনেকে নামতেই পারল না। সেন্ট্রাল স্টেশনে বাবা নেমে গেলেও ছেলে আটকে পড়েছিল ভিতরে। তাকে আমরা মহাত্মা গান্ধী রোড স্টেশনে কোনও মতে নামাতে পারলাম।’’

প্রতি দিনের মতোই চাঁদনি চকের কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য বুধবার দুপুরে শহিদ ক্ষুদিরাম থেকে মেট্রোয় উঠেছিলেন শান্তনু বসু। তাঁর কথায়, “প্রথমে মেট্রো ফাঁকাই ছিল। কালীঘাট থেকে একটা ভিড় উঠল। সাজপোশাক দেখে মনে হল তাঁরা সকলেই ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছেন। তার পরেই শুরু হল ঠেলাঠেলি, চিৎকার। বয়স্কদের জন্য খারাপ লাগছিল। তাঁদের জন্য নির্ধারিত আসনেও বয়স্ক মানুষেরা বসতে পারছিলেন না।”

নিত্যযাত্রীদের আরও অভিযোগ, প্রবল ভিড়ের কারণে মেট্রোর ভিতরে দমবন্ধকর পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। এসি চললেও ঠান্ডা অনুভূত হওয়ার বদলে শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে বলেও তাঁদের অভিযোগ। টালিগঞ্জ থেকে মেট্রোয় চার বছরের ছেলেকে নিয়ে উঠেছিলেন ইপ্সিতা দাস। তাঁর কথায়, “দমদম যাচ্ছিলাম। শোভাবাজারে মেট্রো থমকে গেল। দরজাই বন্ধ হচ্ছে না। এ দিকে ছেলে ‘মা কষ্ট হচ্ছে’ বলে চিৎকার করছে। ষষ্ঠীর দিনেই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি। জানি না বাকি দিনগুলোয় কী হবে!”

অনেকে মনে করছেন, সময়ে মেট্রো চলছে না বলে ভিড় আরও বাড়ছে। তবে মেট্রোর এক আধিকারিক বলেন, ‘‘সময়ে মেট্রো চলছে না, এটা সঠিক তথ্য নয়। অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে দরজা বন্ধ করতে সমস্যা হচ্ছে। ফলে কয়েকটি ট্রেন ছাড়তে দেরি করেছে। সেই কারণেই কিছু ক্ষেত্রে দেরি হচ্ছে।’’

যদিও স্বপন দে নামের এক নিত্যযাত্রী হতাশার সুরে বললেন, “মেট্রো কর্তৃপক্ষের আর কী ব্যাপার! ওঁরা প্রতি বছরের মতো এ বারেও বলবেন, এত মানুষ পুজোর দিনগুলোয় মেট্রোকে বেছে নিয়েছেন। আমাদের মতো যাঁদের ৩৬৫ দিনই মেট্রোকে বেছে নিতে হয়, তাঁরাই জানেন এই পাঁচ দিন আমাদের কী হাল হয়।”

নিয়মিত মেট্রোয় চড়়েন যাঁরা, তাঁদের একাংশের বক্তব্য, শোভাবাজার, কালীঘাটের মতো যে স্টেশনগুলিতে নেমে শহরের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পুজো দেখে ফেলা যায়, সেগুলিতেই সবচেয়ে বেশি ভিড় হচ্ছে। তবে অনেকের আশা, ষষ্ঠীর পর সরকারি অফিসকাছারিতে ছুটি পড়লে নিত্যযাত্রীদের ভিড় কিছুটা কমবে। আবার অন্য দিকে এই আশঙ্কাও মাথাচাড়া দিচ্ছে যে, সপ্তমী থেকে ঠাকুর দেখার ভিড় আরও বাড়লে মেট্রোয় ওঠা আরও ‘যন্ত্রণাদায়ক’ হয়ে উঠবে।

একই রকমের কথা বলছেন শ্যামনগর থেকে নিয়মিত শহরে কাজের জন্য আসা নিত্যানন্দ সরকার। তাঁর কথায়, ‘‘আমি রোজ দমদম থেকে চাঁদনি চকের রেস্তরাঁয় কাজে যাই। এখন একে ভিড়ের চাপে যাতায়াত করা দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে, তাতে মেট্রো সময়ে চলছে না। হয়রানি তাতে আরও বাড়ছে। দরজাই বন্ধ হতে চাইছে না।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.