সাত বছর আগে দিল্লির রাস্তায় এক নৃশংস ঘটনা কাঁপিয়ে দিয়ে গোটা দেশকে। তারপর থেকে বারবার লড়াইতে রাস্তায় নামতে দেখা গিয়েছে আশা দেবীকে। শুধু নিজের মেয়ের জন্য নয়, অন্যান্য ধর্ষণের ঘটনাতেও গলা ফাটিয়েছেন তিনি। তাঁর মেয়েকে ধর্ষণের ঘটনায় দোষীরা শাস্তি পায়নি আজও। বিচারের চাকা আজও ঘুরছে।
শীর্ষ আদালতে ফাঁসির রায় দেওয়া হলেও আজও সেই শাস্তি কার্যকর হয়নি। শুনানির পর শুনানি চলছে। কোনও একদিন শাস্তি পাবে ওরা। এই আশায় ঘুরছেন নির্ভয়ার মা। তাই হায়দরাবাদের এনকাউন্টারের ঘটনা তাঁকে কিছুটা সান্ত্বনা দিয়েছে। কারও সন্তান তো সুবিচার পেয়েছে!
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে এনকাউন্টার নিয়ে। নেতা-মন্ত্রীরা বলেছেন, আইনের বাইরে গিয়ে এইভাবে শাস্তি দেওয়া উচিৎ হয়নি। আর সেকথা শুনেই ক্ষোভ উগরে দিলেন নির্ভয়ার মা আশা দেবী। বললেন, ‘কোন আইনের কথা বলছেন আপনারা?’
এদিন সকালেই প্রতিক্রিয়া দিয়ে তিনি বলেন, ‘পুলিশ যা করেছে ঠিক করেছে। পুলিশের বিরুদ্ধে দয়া করে কোনও ব্যবস্থা নেবেন না।’
এরপরই India Today-র মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা কোন আইনের কথা বলছেন। আমি তো সাত বছর ধরে আইনের লড়াই লড়ছি। সুপ্রিম কোর্ট তো আড়াই বছর আগে ফাঁসির সাজা দিয়ে দিয়েছে। এই তো ২৮ তারিখে শুনানি ছিল। সেখানে বলা হয়, এখন ফাঁসি হবে না।”
সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে তিনি বলেন, ‘একের পর এক সন্তান মরে যায়। কিসের আইন? আপনারা তো আইন বানিয়ে রেখে দিয়েছেন। ফাস্ট ট্র্যাক করে রেখে দিয়েছেন। কোনোদিন দেখেছেন সেই কোর্টে জাজ আসে কিনা?’ তাঁর দাবি, আজ যদি অভিযুক্তরা পালিয়ে যেত, তাহলে সবাই বলত পুলিশ টাকা খেয়ে পালাতে সাহায্য করেছে।
সাত বছর ধরে অনেক আইন বুঝতে হয়েছে আশা দেবীকে। নির্ভয়ার শেষ ১০ দিনের লড়াই আজও ভুলতে পারেন না তিনি। বলেন, ‘আমার মেয়েকে একটু একটু করে মরতে দেখেছি। ১০ দিন বেঁচে ছিল আমার মেয়ে। আমার মেয়েকে এক চামচ জল খাওয়াতে পারিনি। আপনি কোন আইনের কথা বলছেন?’ বাবা-মায়ের আজও সুবিচার মেলেনি।
সবশেষে আরও একবার নির্ভয়ার দোষীদের ফাঁসি চেয়ে তিনি বলেন, ‘যদি আইনের কথা বলেন, তাহলে আগে আইনের ফাঁক গুলো ঠিক করুন। যাতে নির্ভয়ার ধর্ষকদের দ্রুত ফাঁসি দেওবা সম্ভব হয়।’
এদিন তিনি আরও বলেন, সরকারের আজ দেখা উচিৎ হায়দরাবাদ পুলিশ কীভাবে নজির গড়েছে। এই শাস্তিতে অত্যন্ত খুশি তিনি। তিনি আরও বলেন, ‘আমি গত সাত বছর ধরে বলে আসছি, ধর্ষকদের শাস্তি দিন। প্রয়োজন হলে নিয়ম ভেঙে শাস্তি দিন। আজ অন্তত কারও মেয়ে সুবিচার পেয়েছে।’