হ্যাঁ , এই ন্যাড়া পোড়া বা হোলিকা দহন যাই বলুন না কেন আসলে মনে মনে গেয়ে উঠতে চাই বসন্ত এসে গেছে। সত্যিই সে এসেছে সাথে নিয়ে তার পলাশ-শিমূল-অশোকের ডালি ভরা আর এই হোলি বা দোল উৎসবের জয়ধ্বনি করতে করতে।
ভগবান বিষ্ণুর ভক্ত ছিল প্রহ্লাদ। কিন্তু হিরণ্যকশিপু ওদিকে আবার ব্রহ্মাকে বুঝিয়ে (সাধনা করে) একটা দারুণ বর মানে লাইফলাইন নিয়ে রেখেছিল। যাতে কোনো জীব বা জন্তু দিনের বেলা বা রাতের বেলা হাজার চেষ্টা করেও জল-স্থল-অন্তরীক্ষের কোথাও কোন অস্ত্রের ব্যবহারে মারতে পারবে না। হিরণ্যকশিপুরা ছিল তিন ভাই-বোন। ভাই হিরণ্যাক্ষ আর বোন হোলিকা।
পুরাণ মতে বৈকুন্ঠের দারোয়ান জয় আর বিজয়। কিকারনে ওদের ডিমোশন হলে মহর্ষি কশ্যপ ও তাঁর স্ত্রী দিতির সন্তান হিসেবে হিরণ্যকশিপু আর ভাই হিরণ্যাক্ষের জন্ম। ধরিত্রী মাতাকে হিরণ্যাক্ষ একদিন আক্রমন করলে ভগবান বিষ্ণু বরাহ রূপ নিয়ে তার হত্যা করে মাতা ধরিত্রীকে রক্ষা করেন। ভাই এর মৃত্যুর জন্য হিরণ্যকশিপু তাই ভগবান বিষ্ণুর প্রতি বিদ্বেষের মাত্রা বাড়ে।
হিরণ্যকশিপু ও কয়াধুর কনিষ্ঠ সন্তান ছিল প্রহ্লাদ। ভগবান বিষ্ণুর ভক্ত হবার কারনে হিরণ্যকশিপু নিজের সন্তানকে মারার অনেক চেষ্টা করেছিল। সেরকম একটি আদেশে বলা হয় প্রহ্লাদকে পিশি হোলিকার সাথে আগুনে বসতে হবে। এদিকে ব্রহ্মার দয়ায় হোলিকার কাছে একটি শাল ছিল যা তাকে আগুন থেকে বাঁচাতে পারবে। সেই পরিকল্পনা মতো কাজ শুরু হলেও ভক্ত প্রহ্লাদের ডাকে বিষ্ণু ঐ শালটি হোলিকার কাছ থেকে হাইজ্যাক করে ভক্তকে আগের মতো আবারও রক্ষা করলেন। এটাই হোলো,হোলিকা দহণ।
আবার মধ্যযুগে সংকীর্তনকে যিনি এক নতুন উচ্চতায় নিয়েগেছিলেন সেই শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্ম তিথি হচ্ছে দোল পূর্ণিমা। রাধা কৃষ্ণ প্রেমের রূপ প্রকাশ পায় এই দোলযাত্রার আবির খেলায়।
তাই এই উৎসব যেমন একদিকে দৈত্য সংহারের অপরদিকে তেমনি প্রেম-ভালোবাশা উদযাপনেরও।
হোলিকা দহণ যা আজকাল ন্যাড়া পোড়া বা চাঁচড় পোড়া হিসেবে পরিচিত। মানে সোজা কথায় এলাকার গাছের শুকনো ডাল,পাতা ব ঐ জাতীয় সব কিছু জুটিয়ে একটা স্তূপাকার বানিয়ে তাকেই মনে মনে ভেবে নেওয়া যে ঐ পুরাতন বর্জ্যনীয়রাই আজকের দৈত্য। তাতে আগুন দিয়ে পোড়ানোতেই হোলিকার মত দানবীর দহণ।
হোলিকা দহণ কিংবা পরের দিনের খোল ,কাঁসর বাজিয়ে ফাগুয়ার ফাগ ওড়াতে ওড়াতে নগরসংকীর্তন করা আসলে নিছক রঙের খেলা নয়। আসলে এটা ভারতীয় সভ্যতা যে সংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে বহন করে চলেছে তাকে শ্রদ্ধা জানানো।