কলকাতায় মশাল হাতে জুনিয়র ডাক্তারদের সাতটি মিছিল, অন্যান্য জেলাতেও কর্মসূচি

রবিবার সন্ধ্যা আবার মিছিল দেখল মহানগর। কারও হাতে মশাল, কারও মোমবাতি, কারও হাতে আবার বিচারের দাবি চেয়ে লেখা পোস্টার। সকলের মুখে স্লোগান। আবার পথে নামলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। কলকাতায় সাতটি মশাল মিছিল করলেন তাঁরা। পাশাপাশি, জেলার মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তারেরাও পথে নামলেন। মালদহ, বাঁকুড়ায় চলল মিছিল। আন্দোলনকারীরা জানালেন, সোমবার সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর-কাণ্ডের শুনানি রয়েছে। সে দিকে তাকিয়ে এবং রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে নিরাপত্তার দাবিতে তাঁদের এই প্রতিবাদ চলবে। তাঁদের আরও দাবি, এই প্রতিবাদে আগের মতো পুজোর আগে রবিবারও তাঁদের পাশে রয়েছেন সাধারণ মানুষ।

জুনিয়র ডাক্তারেরা আগেই জানিয়েছিলেন, তাঁরা অবস্থান তুলে নিলেও প্রতিবাদ চালিয়ে যাবেন। সেই মতো নতুন কিছু প্রতিবাদের কর্মসূচিও গণ কনভেনশনের মঞ্চ থেকে ঘোষণা করেছিলেন। সোমবার সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের মামলার শুনানি রয়েছে। তার আগে রবিবার সন্ধ্যায় মশাল হাতে পথে নামলেন চিকিৎসকেরা। মুখে তাঁদের স্লোগান, ‘শোক নয় দ্রোহ চাই’। কেউ বাজালেন ঢাক। মেডিক্যাল কলেজ কলকাতা থেকে এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত মশাল মিছিল করছেন জুনিয়র ডাক্তারদের একটি দল। একই ভাবে এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ থেকে এসপ্ল্যানেড, ক্যালকাটা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ থেকে পার্ক সার্কাসের সেভেন পয়েন্ট, সাগরদত্ত মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডানলপ, আরজি মেডিক্যাল কলেজ থেকে শ্যামবাজার ফাইভ পয়েন্ট ক্রসিং এবং কেপিসি মেডিক্যাল কলেজ থেকে যাদবপুর ৮বি বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত মশাল হাতে মিছিল কর্মসূচিতে অংশ নিলেন চিকিৎসক।

মেডিক্যাল কলেজ এবং এনআরএসের জুনিয়র ডাক্তারদের মিছিল ধর্মতলায় পৌঁছনোর পর পথে ছড়িয়ে দেওয়া হয় মশালের আগুন। রাস্তায় আন্দোলনকারীরা লিখে দেন, ‘নির্যাতিতার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’। সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজের পড়ুয়াদের মিছিলে সিনিয়র ডাক্তার তমোনাশ চৌধুরী এবং উৎপল বন্দোপাধ্যায় অংশগ্রহণ করেন।

পথে জুনিয়র ডাক্তারেরা।

মেডিক্যাল কলেজ কলকাতা থেকে এসপ্ল্যানেডের পথে যাওয়ার সময় এক জুনিয়র ডাক্তার বলেন, ‘‘সোমবার সুপ্রিম কোর্টের শুনানি। তার আগে রবিবার আমাদের এই কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে। আমাদের সঙ্গে সাধারণ মানুষও রাস্তায় রয়েছেন। নিরাপত্তার দাবিতে আমাদের এই প্রতিবাদ চলবে। আমাদের দিদির উপর যে নির্যাতন হয়েছে, তার দ্রুত বিচার চাই আমরা।’’ জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গেই পথে নেমেছেন সাধারণ মানুষ। মহালয়ার আগের রবিবারে অনেকের হাতেই নেই বাজারের ব্যাগ। পরিবর্তে রয়েছে মোমবাতি, নয়তো বিচার চেয়ে লেখা পোস্টার। মুখে স্লোগান, ‘বিচার চাই’।

১৯ সেপ্টেম্বর নবান্নে মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠকের পরে জুনিয়র ডাক্তারেরা ঘোষণা করেছিলেন, পরের দিন শুক্রবার স্বাস্থ্য ভবনের সামনের অবস্থান উঠবে। তবে অবস্থান উঠলেও আন্দোলন যে চলবে, তা-ও ঘোষণা করেছিলেন তাঁরা। অবস্থান তোলা হবে না কি তা চালিয়ে যাওয়া হবে, তা নিয়ে জিবি বৈঠকে মতানৈক্য তৈরি হয়েছিল আন্দোলনকারীদের মধ্যে। পরে সেই মতানৈক্য মিটে যায়। আলোচনার প্রেক্ষিতে পরবর্তী আন্দোলনের রূপরেখা ঠিক হয়। প্রথম দফার আন্দোলনে মূলত রাজ্য সরকারের দিকেই ছিল ‘অভিমুখ’। এ বার কেন্দ্র তথা সিবিআইয়ের বিরুদ্ধেও সরব হতে চাইছেন আন্দোলনকারীরা, যার সূচনা হয়েছিল আগেই। স্বাস্থ্য ভবন থেকে সিজিও কমপ্লেক্স পর্যন্ত মিছিল করেছিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। সেই মিছিলে বহু সাধারণ মানুষও যোগ দিয়েছিলেন। গত শুক্রবার গণকনভেনশনে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মতামত শোনেন তাঁরা। এর পরেই নিজেদের পরবর্তী প্রতিবাদ কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেন তাঁরা। রবিবার মশাল মিছিলের পর বুধবার, ২ অক্টোবর মহালয়ার দিন আন্দোলনকারীরা মহামিছিলের ডাক দিয়েছেন। তার পর ধর্মতলায় মহাসমাবেশ হবে। দুপুর ১টা থেকে এই কর্মসূচি রয়েছে মহালয়ার দিন। এর মাঝে সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে নতুন করে উত্তপ্ত হয় পরিস্থিতি। সেখানে জুনিয়র ডাক্তার, স্বাস্থ্য কর্মীদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে। সেখানে শুরু হয়েছে কর্মবিরতি। সেই আবহে আন্দোলনকারীরা সোমবার সুপ্রিম কোর্টে শুনানির পর ফের কর্মবিরতির হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.