মিথ্যা নয়, অর্ধসত্য প্রচারে ভিলেন পিঁয়াজকেও লজ্জা দিচ্ছে মিডিয়া

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে একটি অর্ধসত্য প্রায় সবকটি সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে। এই প্রচারে অনুপ্রাণিত হয়ে নেটিজেনরাও শুরু করেছেন ট্রোলিং। অর্ধসত্যটি হল সংসদে দাঁড়িয়ে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেন, আমি পেঁয়াজ ও রসুন খাই না। এত অবধি প্রচার করে চুপ করেছে অধিকাংশ মিডিয়া। তার ওপর রং চড়িয়ে নিজেদের রাজনৈতিক সচেতনতা ও রসবোধের পরিচয় দিতে উঠে পড়ে লেগেছেন এক শ্রেনীর নেটিজেন। বাস্তবে এদিন এনসিপি সংসদ সুপ্রিয়া সুলে অর্থমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, আপনি কি পেঁয়াজ খান? এর জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমি এমন একটি পরিবার থেকে এসেছি যেখানে পেঁয়াজ রসুন খাওয়া হয় না। আমিও বেশি খাই না। আমার পরিবার খাঁটি নিরামিষ। লোকসভা টিভির ফুটেজ দেখলেই এই বাক্যালাপটি যে কেউ শুনতে ও দেখতে পারবেন। তবু সত্যের সন্ধানে সময় নষ্ট না করে নেটিজেনরা বিশেষ উদ্দেশ্য প্রণোদিত সংবাদেই ভরসা রেখেছেন এবং বিশেষ পারপাসফুল খবর করিয়ে টিআরপি ও পেজ হিটেই মনোযোগ দিয়েছেন ও খুশি হয়েছেন। তবে জেনে রাখা ভাল এদিন পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি নিয়ে সরকার একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে।

দাম বৃদ্ধি নিয়ে অর্থমন্ত্রী পেয়াঁজের ঘাটতির কথা উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে, পেয়াঁজ চাষ ও উৎপাদন কম হওয়ায় অস্বাভাবিকভাবে দাম বেড়ে গিয়েছে। এছাড়া দাম নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় সরকারের একাধিক পদক্ষেপের কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বাইরে পেয়াঁজের রপ্তানি বন্ধ করা হয়েছে। দেশের যেসব জায়গায় পেয়াঁজের ঘাটতি বেশি, সেখানে অতিরিক্ত পেয়াঁজ পাঠানো হচ্ছে। একইসঙ্গে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে পেয়াঁজ স্টোর থেকে বেরিয়ে কোনও মধ্যস্তকারীর হাতে না গিয়ে সরাসরি যেন বাজারে যায়। পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, ২০১৪ থেকে কিছু মন্ত্রকের অধীনে ছিলাম। যাঁরা পেঁয়াজের দাম বাড়া-কমা নিয়ন্ত্রণ করেন। আমি তাঁদের সঙ্গে পেয়াঁজ আমদানির ব্যাপারে আলোচনা করেছি। খুব শীঘ্রই এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

পশ্চিমবঙ্গের কিছু কিছু জায়গায় প্রতি কেজি ১৪০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে পেয়াঁজ। হায়দরাবাদে পেয়াঁজের দাম পৌঁছছে ১৫০ টাকায়। পেয়াঁজের দাম আকাশছোঁয়া হওয়ায়, কিছু জায়গায় পেয়াঁজ চুরির ঘটনাও ঘটছে। মধ্যপ্রদেশের এক চাষী অভিযোগ করেন, তাঁর প্রায় ৩০ হাজার টাকার পেয়াঁজ খেত থেকে চুরি হয়ে গিয়েছে।

স্টোরে পেয়াঁজ জমা রাখা নিয়ে কিছু বিধিনিষেধ জারি করেছে সরকার। এছাড়া তুর্কি থেকে ১১ হাজার মেট্রিক টন এবং ইজিপ্ট থেকে ৬ হাজার মেট্রিক টন পেয়াঁজ আমদানি করছে সরকার। ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে ইজিপ্ট থেকে এবং জানুয়ারির শুরুতে তুর্কি থেকে পেয়াঁজ চলে আসবে ভারতে। গত মাসে ১.২ লক্ষ টন পেয়াঁজ দেশীয় বাজারে যোগান হয়েছিল। এদিকে বিদেশে পেয়াঁজ রপ্তানি সম্পূর্ণ বন্ধ করেছে ভারত।

দুর্ভাগ্যবশতঃ এই তথ্যগুলি মানুষের কাছে পৌঁছবার দায় অনুভব করেনি অধিকাংশ সংবাদমাধ্যম। দুর্নীতি মামলায় জেলের হাওয়া খেয়ে আসা চিদম্বরম রসিকতাও করেছেন। তাঁর চটুল রসিকতাও প্রচার পেয়েছে। শুধু চেপে যাওয়া হয়েছে সমস্যার সমাধানে মন্ত্রী যা বলেছেন, সেই কথাগুলি। সরকারের সমালোচনা করা সংবাদ মাধ্যমের কাজ। সে কাজ করতে গিয়ে যদি অর্ধসত্য দিয়ে বাজার মাত করতে হয় তাহলে সমালোচনার বিশ্বাসযোগ্যতা থাকে না। তবে বিশ্বাসযোগ্যতা নামক বস্তুটি দিনের টিআরপি বা হিটের তুলনায় তুচ্ছাতিতুচ্ছ, সে কথা যে কোনও বুদ্ধিমান মানুষই জানেন! বিশ্বাসযোগ্য খবর পাঠক চান কিনা, এক শ্রেনীর নেটিজেন সেই বিষয়টিও প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছেন। তাঁরা খবর নয় খোরাকপ্রিয় হয়ে উঠছেন। সংবাদজগতে এটাও কম দুর্ভাগ্যজনক নয়।

সম্প্রতি এরকম ঘটনা আরও ঘটেছে। সব ঘটনার উল্লেখ করতে গেলে কাক হয়ে রোজই কাকের মাংস খেতে হয়। তবে পিঁয়াজের অস্বাভাবিক দামবৃদ্ধির মত ঘটনা, যা সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে, তাই নিয়ে এমন মিথ্যার বেসাতি, থুড়ি অর্ধসত্যের এমন কারসাজি লক্ষ্য করে বিভ্রান্ত নেটিজেন ও সাধারণ মানুষের জন্য স্বজাতির সমালোচনা করতেই হল।

তবে ভুল সীতারামনও করেছেন। স্পিকারকে অ্যড্রেস না করে ছেদো কথায় সাড়া দিয়েছেন। অপ্রয়োজনীয় কথা বলেওছেন। রাজনীতির কারবারীদের এতদিনে বুঝে ফেলা উচিত ছিল মিডিয়া চাইলে দিনকে রাত করতে পারে। বুঝে ফেলা উচিত ছিল মানুষ মিডিয়াকে যতই গালি দিক, এখনও পর্যন্ত মিডিয়াকে রাজনীতিকের চেয়ে বেশি বিশ্বাস করে।

দেবক বন্দ্যোপাধ্যায়

তথ্য সহায়তা: ভাস্কর মান্না

সৌজন্য : can stock media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.