বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের অন্যতম বৃহৎ শিক্ষাব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলির সঙ্গে অমরা আমাদের বিরাট দায়িত্বের বিষয়টিও উপলব্ধি করি। কেবল গুণগত শিক্ষার মাধ্যমেই আমরা নতুন ভারতের ভিত্তি গড়ে তুলতে পারি। আমরা প্রায় ৩৩ কোটি ছাত্র-ছাত্রীর ভবিষ্যৎ রূপরেখা তৈরি করছি। এদের সোনালি ভবিষ্যৎ তখনই তৈরি করা সম্ভব হবে যখন আমরা এদের সকলকে মানবতার স্তম্ভস্বরূপ যে চিরন্তন মূল্যবোেধ তার সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে পারব। আমি একথাবিশ্বাস করি, যদি কোনো ব্যক্তি মর্যাদার সঙ্গে জীবনযাপন করতে চান, তাহলে এটা তার কর্তব্য যে, তার কাজকর্ম যেন কোনো ভাবেই অন্যের মর্যাদাকে ক্ষুগ্ন না করে। কেউ যদি বাকস্বাধীনতা চান, তবে তাকে অন্য ব্যক্তি চিন্তাভাবনা সম্পর্কে ধৈর্য, সংযম ও সহনশীলতা দেখাতে হবে। সবথেকে আশ্চর্যের বিষয় হলো যে, বিশ্বের অধিকাংশ গণতান্ত্রিক দেশ মৌলিক অধিকারের কথা বলে থাকে, কিন্তু মৌলিক কর্তব্যবোধগুলি সম্পর্কে তারা নীরব। আমাদের সংবিধানে কর্তব্যবোধের যে বিষয়গুলি উল্লিখিত রয়েছে সেগুলি সবই সোভিয়েত রাশিয়া থেকে নেওয়া। যেদিন আমরা আমাদের কর্তব্যবোধের গুরুত্ব সম্পর্কে ছাত্র-ছাত্রীদের সচেতন করে তুলতে পারব সেদিন আমাদের অনেক সমস্যা মিটে যাবে। যখন আমরা ভারতকেন্দ্রিক ধর্মসংস্কারমূলক শিক্ষা ব্যবস্থার কথা বলি তখন আমার মনে হয় আমাদের সাংবিধানিক কর্তব্যবোধগুলি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। ৩৩ বছর পর দেশে এক নতুন শিক্ষানীতি চালু করা হচ্ছে। নতুন এই শিক্ষাব্যবস্থার উদ্ভাবনে মূল্যবোধ, ধর্মর্গত সংস্কারমূলক শিক্ষা ও ব্যাপক। গবেষণামূলক বিষয়ের প্রসার দেশে আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় এক নতুন যুগের সূচনা করবে। এই শিক্ষা ব্যবস্থার উদ্দেশ্য হলো দেশকে আন্তর্জাতিক স্তরে এক মহাশক্তিধর দেশে পরিণত করা।
আজ ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে এটা তুলে ধরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, বৈচিত্র্যময় ভারত কেবল এক রাষ্ট্র নয়, সামগ্রিকভাবে এক উপমহাদেশ যেখানে প্রতিটি কোণায় রয়েছ ঐতিহ্য, রীতিনীতি ও পরম্পরা। ভারতের মতো বৈচিত্র্যময় দেশবিশ্বের অন্যত্র বিরল, ভারতীয় সংস্কৃতি সর্বদাই মানব সভ্যতার আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে অবদান জুগিয়েছে। এখন। আমাদের প্রয়োজন, মানব সভ্যতার এই আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রের সংরক্ষণে নিজেদের উৎসর্গ করা। আধ্যাত্মিক সংস্কৃতির এই পরম্পরায় যুগ যুগ ধরে সাধুসন্তরা তাদের গভীর বিচক্ষণতা ও উপলব্ধি দিয়ে অবদান রেখেছেন। মহান এই সাধুসন্তদের নামের মধ্য দিয়েই ভারত-সংস্কৃতির ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বহু বৈচিত্র্য সত্ত্বেও যুগ যুগ ধরে আমরা একতার বন্ধনে আবদ্ধ রয়েছি। আমাদের সংস্কৃতি ‘বসুধৈব কুটুম্বক’-এর মন্ত্র এগিয়ে চলতে অনুপ্রাণিত করে, এই মন্ত্র একতা, সম্প্রীতি, সহযোগিতা, সৌভ্রাতৃত্ব, আস্থা, অহিংসা, আত্মবলিদান, নম্রতা ও সমতার মতো মূল্যবোধগুলিকে আত্মস্থ করতেও উৎসাহিত করে। আমরা একদা আমাদের চিন্তাভাবনার ওপর ভিত্তি করে বিশ্বের অগ্রণী দেশের মর্যাদা পেয়েছিলাম, আমরা আজও একবার এই চিন্তাভাবনাকে কাজে লাগিয়ে সারা বিশ্ব জয় করব। দ্রুত পরিবর্তনশীল এই ডিজিটাল যুগে আমরা কীভাবে শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে মূল্যবাধগুলির প্রসার ঘটাতে পারি তা এক বড়ো চ্যালেঞ্জ। নতুন শিক্ষানীতি প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে আমরা মূল্যবোধের উৎসগুলির সঙ্গে ছাত্র-ছাত্রীদের যোগসূত্র গড়ে তোলার চেষ্টা করছি।
বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে এটা আমাদের সৌভাগ্য যে, ভারতের এক অনন্য জনসংখ্যাগত বৈশিষ্ট্য রয়ছে। ভারত এমন এক দেশ যেখানে যুব সমাজের সংখ্যাধিক্য রয়ছে। বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতার এই যুগে জনসংখ্যার এই বৈশিষ্ট্য আমাদের আরও ক্ষুরধার করে তুলেছে। এখন আমাদের সামনে সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ হলো কীভাবে যুব সমাজকে ইতিবাচক ও গঠনমূলক উপায়ে উদ্বুদ্ধ করা যায়। আজ আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের সাংবিধানিক কর্তব্যবোধগুলি সম্পর্কে শুধুমাত্র সচেতন করাই নয়, সেই সঙ্গে প্রত্যেকেই যাতে গুরুত্বের সঙ্গে তার কর্তব্য পালন করতে পারে সেরকম এক অনুকূল পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে।
একথা অনস্বীকার্য এই নতুন শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বড়ো ভূমিকা রয়েছে। মূল্যবোধভিত্তিক শিক্ষার মাধ্যমে নতুন শিক্ষানীতিতে এমন এক পরিবেশ গড়ে তোলার চেষ্টা হয়েছে যাতে করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে কর্তব্যবোধ পালনের গুরুত্ব সম্পর্কে ছাত্র-ছাত্রীদের সচেতন করে তোলা যায়। ক্রমপরিবর্তনশীল বিশ্ব পরিস্থিতিতে কৌশলগত দিক থেকে ভারতের গুরুত্ব বজায় রাখা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আমরা এই চ্যালেঞ্জগুলি আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধের প্রসার ঘটিয়ে দূর করতে পারি।
রমেশ পোখরিয়াল
(লেখক কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী)
2019-12-05