এক গুচ্ছ নির্দেশ। সেই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পর্যবেক্ষণ। মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চে আরজি কর মামলার শুনানি শেষে ‘প্রাপ্তির’ তালিকায় চোখ বোলালে উঠে আসছে একাধিক বিষয়ে শীর্ষ আদালতের উদ্বেগও। এক নজরে মঙ্গলবার আরজি কর মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতির বেঞ্চের নির্দেশ এবং পর্যবেক্ষণের তালিকা—
আরজি কর মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ
১. উইকিপিডিয়া থেকে আরজি করে ধর্ষণ ও খুনের শিকার নির্যাতিতার নাম ও ছবি মুছে ফেলতে হবে।
২. গত ১২ সেপ্টেম্বর তদন্ত সংক্রান্ত কয়েকটি বিষয় নিয়ে সিবিআইকে চিঠি দিয়েছিলেন নির্যাতিতার বাবা। ওই বিষয়গুলি গোপনীয়। তাই সেগুলি প্রকাশ্যে আনা হচ্ছে না। সিবিআই-কে সেগুলি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।
৩. আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে জেলাশাসক, মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল ও সিনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা করে হাসপাতালে শৌচাগার এবং সিসিটিভি ক্যামেরা বসাতে হবে।
৪. মহিলা চিকিৎসকেরা সেমিনার হলে বিশ্রাম নিতে গেলে তাদের বায়োমেট্রিক নেওয়া দরকার। নিরাপত্তার জন্য স্বাস্থ্যসচিবকে এই বিষয়ে পদক্ষেপ করতে হবে।
৫. ওই ঘটনার পরে হাসপাতালের পুরো সিসিটিভি ফুটেজ সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিতে হবে পুলিশকে। ফুটেজ নিয়ে যা সমস্যা তা মেটাতে হবে। তদন্তে পুলিশকে সহযোগিতা করতে হবে।
৬. জুনিয়র ডাক্তারেরা বৈঠক করে কাজে যোগ দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও কড়া পদক্ষেপ করতে পারবে না রাজ্য।
আরজি কর মামলায় সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ
১. লাইভ স্ট্রিমিং বন্ধ করা যাবে না। এটি একটি জনস্বার্থ মামলা। ওপেন কোর্টে শুনানি হচ্ছে। আপনাদের বিষয়টি আমরা দেখব।
২. তদন্তের এই অবস্থায় আমরা রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনছি না। তাতে তদন্তে প্রভাব পড়তে পারে। সিবিআই সত্য উদ্ঘাটন করছে। রিপোর্ট দেখে আমাদের মনে হয়েছে, সব বিষয়েই এখানে রয়েছে।
৩. সিবিআই ঘুমিয়ে পড়ছে না। তাদের তদন্ত করতে আমরা পর্যাপ্ত সময় দেব। সত্য উদ্ঘাটন করার জন্য তাদের সময় দেওয়া প্রয়োজন। সিবিআই রিপোর্ট দেখে আমরা বিচলিত।
৪. কেন কলকাতা পুলিশ ২৭ মিনিটের সিসিটিভি ফুটেজ তদন্তকারী সংস্থা (সিবিআই)-কে দিল? কেন পুরো ফুটেজ দেওয়া হল না?
৫. রাজ্য কী ভাবে বলতে পারে মহিলারা রাতে কাজ করতে পারবেন না? কেন মহিলাদের জন্য সীমা টেনে দেওয়া হচ্ছে? তাঁরা এমন সুবিধা চান না। পুরুষদের মতো মহিলারাও সমান কাজ করবেন। কর্মক্ষেত্রে সকলের সমান অধিকার। রাজ্যের কাজ নিরাপত্তা দেওয়া। তারা এমন কোনও সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারে না।
৬. রাজ্যের উচিত ওই বিজ্ঞপ্তি সংশোধন করা। মহিলারা রাতে কাজ করতে পারবেন না, এটা না বলে আপনারা নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করুন। রাতে অনেক মহিলা কাজ করেন। বিমানচালক, সেনাকে রাতে কাজ করতে হয়।
৭. রাতে মহিলা চিকিৎসকেরা কাজ করতে না পারলে তাঁদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে পারে। সব ডাক্তারের জন্য একই নিয়ম হওয়া উচিত। মহিলা ডাক্তারদের কেন টার্গেট করা হল এটা বোধগম্য নয়।
৮. হাসপাতালের নিরাপত্তায় কেন চুক্তিভিত্তিক কর্মী? অভিযুক্তও এক জন অস্থায়ী কর্মী ছিলেন। মাত্র সাত দিনের প্রশিক্ষণ দিয়ে কী ভাবে নিশ্চিত নিরাপত্তা দেওয়ার আশা করেন। রাজ্য বলছে, তারা বাইরের নিরাপত্তা সংস্থার কর্মীদের দায়িত্ব দেবেন। তাদের দায়িত্ব দেওয়ার আগে ওই সব কর্মীর মানসিক অবস্থা দেখেছেন? এটা কোন প্রশ্ন নয়। মূল সমস্যা হচ্ছে নিরাপত্তার দায়িত্বে অস্থায়ী কর্মী কেন? কেন রাজ্য এমন পদক্ষেপ করছে?
৯. রাজ্যে ২৮টি সরকারি হাসপাতাল এবং সরকারের সঙ্গে যুক্ত আরও ১৭টি হাসপাতাল রয়েছে। ওই সব হাসপাতালে জুনিয়র ডাক্তারেরা কাজ করেন। ১৮-৩০ বছরের মহিলারা কাজ করেন। সেখানে যদি চুক্তিভিত্তিক কর্মী থাকে তবে বলতে হবে সেটা নিরাপদ নয়। চিকিৎসকদের নিরাপত্তার জন্য রাজ্যের উচিত হাসপাতালে পুলিশ মোতায়েন করা।
১০. হাসপাতালে ছাত্র, জুনিয়র ডাক্তার, চিকিৎসকেরা কাজ করেন। তাঁরা আমাদের বাড়ি থেকেই গিয়েছেন। তাঁরা কেউ কলকাতায় পড়তে, কেউ কাজ করতে গিয়েছেন। তাঁদের নিরাপত্তা না থাকলে কী বলব? কারও সঙ্গে কিছু ঘটার আশঙ্কা তো থাকেই।
১১. জেলাশাসকদের হাসপাতালে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো রয়েছে তা নিশ্চিত করা উচিত। এমনকি মহিলা চিকিৎসকদের বিশ্রাম কক্ষেও নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা দরকার।
১২. ওই হাসপাতালে (আরজি কর) আপনারা বলছেন ৪১৫টি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হবে। এখনও পর্যন্ত ৩৭টি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। বলতে বাধ্য হচ্ছি, কাজ অত্যন্ত ধীরগতিতে চলছে।
১৩. এটা কোনও রাজনৈতিক মঞ্চ নয়। আপনি যদি বলেন মুখ্যমন্ত্রীকে পদত্যাগের নির্দেশ দেব। সেটা আমরা দেব না। এটা আমাদের উদ্দেশ্য নয়।