প্রাচীন রীতি মেনে সোমবার পুরাতন মালদহের মোকাতিপুর এলাকায় অনুষ্ঠিত হল মূলাষষ্ঠী পুজো৷ একই সঙ্গে পুজোকে ঘিরে হল জুয়াখেলার মেলা। জুয়াখেলার জন্যই এই মূলাষষ্ঠীর মেলা এখনও লোকমুখে জুয়াখেলার মেলা হিসাবে পরিচিত হয়েছে৷। তবে এই মেলার আরও একটি নাম রয়েছে। তা হল লেউড়ি মেলা। শুধুমাত্র এই মেলাতেই চিনি দিয়ে তৈরি একধরনের স্থানীয় চকোলেট তৈরি হয়। তার নাম লেউড়ি।
এই মেলার ইতিহাস অনেক পুরোনো। প্রাচীনকালে এলাকাটি ছিল ঘন জঙ্গলে পরিপূর্ণ। এলাকার একপাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে বেহুলা নদী। সেই সময় নিজেদের সন্তান সন্ততিদের সুখ কামনায় ষষ্ঠীপুজো করতেন পুরাতন মালদহের মহিলারা। জঙ্গলে শ্বপদ জন্তুদের হাত থেকে তাঁদের রক্ষার জন্য সঙ্গে যেতেন স্বামীরাও। দিনভর চলত এই পুজো। মহিলারা পুজোতে ব্যস্ত থাকলেও স্বামীদের কোনও কাজ থাকত না। ফলে সময় কাটাতে তাঁরা নিজেদের মধ্যে জুয়া খেলতেন। এই ভাবেই এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে যায় জুয়াখেলা। মেলার নাম হয়ে যায় জুয়াড়ি মেলা।
পুজো দিতে আসা লীলা সিংহ নামে এক মহিলা জানালেন, পুজো শেষ করে আমরা বেহুলা নদীর জল মাথায় ছিটিয়ে মুখে লেউড়ি দিয়ে উপোস ভাঙি। এই একটা দিন বাড়ির ছেলে-বুড়ো সবাই একসঙ্গে জুয়া খেলে থাকে। এই একদিন পুলিশও জুয়া খেলার ঠেকে হানা দেয় না। একটা ঐতিহ্য হিসাবেই জুয়া খেলা হয়ে থাকে।
একই বক্তব্য এলাকার ৭০ বছরের বিনোদ আগরওয়ালের। তিনি বলেন, এই নদী দিয়েই একসময় লখীন্দরের দেহ ভেলায় নিয়ে ভেসে যাচ্ছিলেন বেহুলা। তাঁর ভেলা এখানে এসে ঠেকেছিল। সেই ঘাটের নাম ধোপানি ঘাট। স্বামীকে বাঁচিয়ে তুলতে তিনিই এই জায়গায় প্রথম ষষ্ঠীপুজো করেছিলেন। তারপর থেকেই এখানে মূলাষষ্ঠী তিথিতে ষষ্ঠীপুজো হয়ে আসছে।
এই পুজোয় লেউড়ি নামে একটি স্থানীয় মিষ্টি তৈরি হয়। যা এই জেলা কিংবা রাজ্যের আর কোথাও পাওয়া যায় না। তার সঙ্গে রয়েছে সকাল থেকে সন্ধে ৬টা পর্যন্ত অবাধে জুয়াখেলা এমনকি মহিলারাও এই মেলায় জুয়া খেলায় মেতে ওঠে। এবং মহিলারা জানাই যে বছরে আজকের দিনটা তাদের জন্য ছাড় রয়েছে। তার জন্যই নাকি এই মেলা লেউড়ি মেলা ও জুয়াড়ি মেলা নামেও পরিচিত৷