সন্দীপ ঘোষদের বিচারবিভাগীয় হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়ে আদালত কক্ষ থেকে সবে বেরিয়েছেন বিচারক। তখনও এজলাসেই বসে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ এবং আরও তিন অভিযুক্ত। তাঁদের ঘিরে তৈরি রাখা কড়া নিরাপত্তার বলয়। রয়েছেন পুলিশ কর্মী। রয়েছেন সিবিআইয়ের আধিকারিকেরা। এর মাঝেই সন্দীপকে ‘ধিক্কার’ জানাতে থাকেন এক মহিলা। ক্রমে স্লোগান উঠতে শুরু করে, ‘চোর চোর’, ‘ফাঁসি চাই’। উড়ে আসতে তাকে নানাবিধ হুমকি। সে ইসময়েই আদালত কক্ষে ফিরে আসেন বিচারক। হাত জোড় করে বাকিদের চুপ করার অনুরোধ জানান। পরিস্থিতি সামাল দিতে বাইরে মোতায়েন করা হয় কেন্দ্রীয় বাহিনী। শেষ পর্যন্ত কড়া প্রহরায় আদালত থেকে বার করিয়ে গাড়িতে চাপানো হয় সন্দীপদের। তবে সেখানেও বাধে গোল। সন্দীপকে পুলিশের যে গাড়িতে তোলা হয়, এ বার সেটি লক্ষ্য করে ছোড়া হয় জুতো।
বিচারকের নির্দেশের পর মঙ্গলবার আলিপুর আদালতে সশরীরে হাজির করানো হয় সন্দীপ-সহ চার জনকে। আরজি কর হাসপাতালে দুর্নীতির অভিযোগের মামলায় ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সন্দীপ, সুমন হাজরা, বিপ্লব সিংহ এবং আফসর আলিকে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক। মঙ্গলবার আলিপুর আদালতে সেই নির্দেশ দিয়ে এজলাস থেকে বিচারক বেরিয়ে যেতেই শুরু হয় স্লোগান, ‘লড়াই লড়াই লড়াই চাই…’। কেউ বিচারের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। মূলত মহিলা আইনজীবীদেরই সন্দীপের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে দেখা যায়। সন্দীপকে ‘ধর্ষক’ সম্বোধন করেও চিৎকার করতে তাকেন কেউ কেউ। তাঁর ফাঁসির দাবিও ওঠে আদালতকক্ষে। এখানেই শেষ নয়। সন্দীপের দাঁত ভেঙে দেওয়ার হুমকি দেন এক জন। তিনি বলেন, ‘‘অপরাধী হাসতে পারে না। দাঁত ভেঙে দেব।’’ এক জন বলেন, ‘‘জেলের ভাত কেন খাবে? সরকারের খরচ হবে।’’
এ ভাবে সন্দীপের উদ্দেশে একের পর এক স্লোগান উঠতে থাকে আদালতকক্ষে। জনৈক এক মহিলা চিৎকার করে বলেন, ‘‘তোর বডিগার্ড কোথায়?’’ প্রসঙ্গত, আরজি কর দুর্নীতি মামলায় সন্দীপের নিরপত্তারক্ষী আফসরকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁকেও মঙ্গলবার আদালতে হাজির করানো হয়। সন্দীপের সঙ্গে আফসরকেও ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। এ সবের মাঝে এক জন বলে ওঠেন, ‘‘সন্দীপ ঘোষকে জুতো মার!’’ হইচইয়ের মাঝে আদালতকক্ষে ফিরে আসেন বিচারক। হাত জোড় করে তিনি চুপ করার অনুরোধ করে বলেন, ‘‘বাইরে করুন। এখানে নয়।’’ সেই সঙ্গে এ-ও জানান, শারীরিক ভাবে কাউকে হেনস্থা করা চলবে না। বিক্ষোভকারী আইনজীবীরা তখন বলেন, ‘‘আমরা গায়ে হাত তুলব না। কিন্তু বাইরে কেউ কিছু করলে, জানি না।’’
পরিস্থিতি সামাল দিতে আদালত চত্বরে মোতায়েন করা হয় কেন্দ্রীয় বাহিনী। কড়া নিরাপত্তার মাঝে সন্দীপকে আদালত কক্ষ থেকে বার করে এনে গাড়িতে তোলা হয়। সেই সময়েও বাইরে চলতে থাকে বিক্ষোভ। ‘হায় হায়’ ধ্বনি দেওয়া হয়। পুলিশের যে গাড়িতে সন্দীপকে তোলা হয়, আচমকা সেই গাড়ি লক্ষ্য করে ছোড়া হয় জুতো। শেষ পর্যন্ত আদালত চত্বর থেকে সন্দীপদের বার করে নিয়ে যাওয়া হয়। যদিও তখনও আদালত চত্বরে চলতে থাকে বিক্ষোভ। স্লোগান দিতে থাকেন মহিলা আইনজীবীরা। সিমন দাস নামে এক আইনজীবী বলেন, ‘‘কেন ধর্ষকের জন্য বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে? আমরা প্রতিবাদ করেছি বলে আমাদের আদালত কক্ষ থেকে বার করে দেওয়া হয়েছে।’’ অন্য এক আইনজীবী ইশা পাল বলেন, ‘‘আদালতের যে দরজা নিয়ে বিচারকেরা যাতায়াত করেন, সেখান দিয়ে সন্দীপকে বার করে নিয়ে আসা হয়েছে। কেন এই বিশেষ ব্যবস্থা?’’
গত ৩ সেপ্টেম্বর যখন আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপকে আদালতে হাজির করেছিল সিবিআই। তখনও আদালতের সামনে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। সন্দীপকে আদালত থেকে বার করার সময়েই শুরু হয়েছিল গোলমাল। ‘চোর চোর’ চিৎকার করে একদল মানুষ সন্দীপের দিকে এগিয়ে যায়। সেই সময়েই কোনও এক জন সন্দীপের মাথায় পিছন থেকে চাঁটি মারেন বলেও অভিযোগ ওঠে। সেই পরিস্থিতি থেকে কোনও রকমে সন্দীপকে নিরাপত্তাবেষ্টনী তৈরি করে গাড়িতে তুলেছিলেন সিবিআই আধিকারিকেরা। সে দিনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই মঙ্গলবার সন্দীপদের ভার্চুয়াল শুনানির আবেদন করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তবে সেই আবেদন খারিজ করে দেয় আলিপুর আদালত। মঙ্গলবার সশরীরে আদালতে হাজির করানো হয় সন্দীপদের। শুনানি শেষে আদালত চত্বরে আগের দিনের মতোই পরিস্থিতি তৈরি হয়।