“ডন কো পকড়না মুশকিল হি নেহি, না মুমকিন হ্যায়।”
না, হুগলির বাসুদেব মণ্ডল ‘ডন’ নয়, তাকে ধরতেও খুব বেশি মুশকিলে পড়তে হয়নি পুলিশের। কিন্তু ধরে রাখাটাই মুশকিলের। শৌচাগারে যাওয়ার নাম করে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে আবারও পালিয়ে গেল ‘কুখ্যাত’ বাসু। তার খোঁজে বর্ধমানের যত্রতত্র তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।
বাসুদেবের বাড়ি হুগলির বলাগড়ে। দোহারা চেহারা। পুলিশের খাতায় তার বয়স ৩৪ বছর। রাজ্যের অন্তত ১৪টি থানায় বাসুর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। বাসুর ‘সিভি’তে রয়েছে চুরি, ছিনতাইয়ের মতো ১৪টি মামলা। দমদম থেকে বর্ধমান, বারাসত থেকে শক্তিগড়, বাসু তার ‘হাতের কাজ’ দেখিয়েছে জায়গায় জায়গায়। পুলিশ সূত্রে খবর, গত ৯ জুলাই ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কে শক্তিগড়ের আমড়া এলাকার একটি পেট্রল পাম্পে পুলিশের ভ্যান থেমেছিল। পুলিশি হেফাজতে থাকা বাসুদেব জানায় প্রকৃতির ডাক আর সহ্য করা যাবে না। অগত্যা অনুমতি দেয় পুলিশ। পেট্রল পাম্পের ধারে ভ্যান দাঁড়ায়। পুলিশের ঘেরাটোপে পাশের শৌচাগারে যায় বাসু। কিন্তু আর পাওয়া যায়নি!
এখন বাসুদেবের খোঁজে শক্তিগড় থানার পুলিশ অভিযান শুরু করেছে। বলাগড়ের আকাতপুরে তার বাড়িতেও খোঁজখবর করা হচ্ছে। পুলিশ সূত্রে খবর, একটি চুরির মামলায় বাসুদেবকে কলকাতার বাগুইআটি থানার পুলিশ গ্রেফতার করে। সেখান থেকে পরে বারাসত আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। তার পর অন্য একটি মামলায় জামালপুর থানার পুলিশ বাসুকে নিয়ে যাচ্ছিল বর্ধমান সংশোধনাগারে। কিন্তু এ নিয়ে দ্বিতীয় বার পুলিশের চোখে ধুলো দিয়েছে বাসু।
বাসুর চুরিতে হাতেখড়ি নাকি ‘গার্লফ্রেন্ডদের’ জন্য। প্রেয়সীদের শখ পূরণের জন্য অহরহ মোটা অঙ্কের টাকার দরকার হয় তার। সেই টাকার জন্যই চুরি-ছিনতাই। চুরি করতে করতে বাসুদেব এখন ‘দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম কুখ্যাত চোর’। যে নিউটাউন, বাগুইআটি থেকে শুরু করে বর্ধমান, হুগলি— সব জায়গায় পুলিশের রাতের ঘুম কেড়েছে। হুগলির বিভিন্ন থানার পুলিশকর্তাদের রাতের ঘুম কেড়ে নেয়। বেশ কিছু দিন আগে বেশ কয়েকটি চুরির ঘটনায় জড়িত বাসু পুলিশের জালে ধরা পড়ে। একাধিক থানা তাকে হেফাজতে নিয়ে চুরির সরঞ্জাম উদ্ধার করেছিল। পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার পুলিশও বাসুকে হেফাজতে পেয়েছিল। জেরা করে জামালপুর থানার বিভিন্ন এলাকায় একাধিক চুরির ঘটনায় তার জড়িত থাকার বিষয়ে নিশ্চিত হন তদন্তকারীরা। বেশ কিছু চুরি যাওয়া জিনিস উদ্ধারও হয়েছে। সেই তালিকায় আছে বাইক থেকে সিগারেট, ল্যাপটপ, আইফোন থেকে গুটকা পর্যন্ত!
পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে বাসুর ‘রঙিন দুনিয়া’য় যাতায়াতের কথা। তাকে বেশি পাওয়া যায় ডান্স বার, পানশালায়। সেখানে মহিলাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে। তার পর তাঁদের মন জয় করতে দামি দামি উপহার দেয়। ওই উপহারের টাকার জন্যই মূলত চুরি, ছিনতাই। চুরির আগে ধুরন্ধর বাসু এলাকার অলিগলি সব বুঝে নিত। কখনও সব্জি বিক্রেতা, কখনও জলের কল সারানোর মিস্ত্রি আবার কখনও রাজমিস্ত্রি সেজে বাসু সেই সব এলাকা রেকি করত। আগেও এক বার পূর্ব বর্ধমানের কালনা আদালত থেকে বেরিয়ে পুলিশের হাত ফস্কে পালিয়েছিল সে। তার পর আবার নেমে পড়ে পুরনো কাজে। পরে বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ হুগলির রিষড়া থেকে তাকে পাকড়াও করেছিল। ঠাঁই হয় দমদম সেন্ট্রাল জেলে। আইনি পদ্ধতি মেনে পরে জামালপুর থানার পুলিশ বাসুকে হেফাজতে নিয়ে একের পর এক চুরির কিনারা করেছে। কিন্তু তদন্ত শেষ হওয়ার আগে আবার ‘হাওয়া’ বাসু। পূর্ব বর্ধমান জেলার পুলিশ সুপার আমন দীপ বলেন, ‘‘পুলিশের ঘেরাটোপ থেকে অভিযুক্ত পালিয়ে গিয়েছে। পুলিশ তল্লাশি শুরু করেছে।’’