আরজি করের ভিডিয়ো: দেহ উদ্ধারের পর সেমিনার হলে কারা? ‘বহিরাগত’ তত্ত্বের জবাব দিল পুলিশ

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের সেমিনার হলে মহিলা চিকিৎসকের দেহ উদ্ধারের পর সেখানে অত মানুষ কী ভাবে প্রবেশ করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে কেউ ‘বহিরাগত’ ছিলেন কি না, সোমবার প্রকাশ্যে আসা একটি ভিডিয়ো ঘিরে সেই সব প্রশ্ন উঠছিল।দানা বাঁধছিল বিতর্কও। তার প্রেক্ষিতে সোমবার বিকেলে সাংবাদিক বৈঠক করে কলকাতা পুলিশ স্পষ্ট জানিয়ে দিল, ভিডিয়োটি সেমিনার হলেরই। কিন্তু ঠিক যেখান থেকে দেহটি উদ্ধার হয়েছিল, সেই জায়গা ‘সুরক্ষিত’ই ছিল। পুলিশ ঘিরে রেখেছিল জায়গাটি। তার বাইরে ঘরের অন্য একটি অংশের ভিডিয়ো করা হয়েছে। ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসার পর বিজেপির দাবি ছিল, বহিরাগতেরা ঢুকে ঘটনাস্থলের তথ্যপ্রমাণ নষ্ট করে ফেলেছেন। পুলিশ সেই দাবিও উড়িয়ে দিয়েছে। পুলিশের দাবি, যে ব্যবস্থা ছিল তাতে পুলিশের ঘিরে রাখা ঘটনাস্থলে কারও প্রবেশ সম্ভব ছিল না।

এই ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসার পরেই নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। প্রশ্ন: যে জায়গা থেকে একটি দেহ উদ্ধার হয়েছে, সেখানে একসঙ্গে এত লোক কী ভাবে ঢুকে পড়লেন পুলিশের উপস্থিতিতে? কেন পুলিশ তাঁদের বাধা দিল না? নিয়ম অনুযায়ী, দেহ উদ্ধারের পর সেই জায়গা সিল করে দেওয়ার কথা পুলিশের। নইলে তথ্যপ্রমাণ নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তার পরেও সেমিনার হলে যাওয়া-আসায় ওই মুহূর্তে পুলিশের কোনও নিয়ন্ত্রণ ছিল না কেন? এর প্রেক্ষিতে কলকাতা পুলিশের ডিসি (সেন্ট্রাল) ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, ‘‘সেমিনার হলের দৈর্ঘ্য ৫১ ফুট, প্রস্থ ৩২ ফুট। দেহ উদ্ধারের পর ওই ঘরের ৪০ ফুট অংশ পুলিশ ঘিরে ফেলেছিল। হাসপাতাল থেকে নেওয়া সাদা কাপড় দিয়ে ঘেরা হয়েছিল জায়গাটা। ঘরের বাকি অংশ, অর্থাৎ ১১ ফুট জায়গায় কয়েক জন দাঁড়িয়েছিলেন। ভিডিয়োটা সেই জায়গারই।’’

মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় আগেই কয়েকটি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছিল। সেই ভিডিয়োগুলির সত্যতা আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি। একটি ভিডিয়োয় সেমিনার হলের ভিতরকার দৃশ্য বন্দি হয়েছিল। ভিডিয়ো দেখেই বোঝা গিয়েছিল, সেটি দেহ উদ্ধারের পরে তোলা। ভিডিয়োতে একটি টেবিলের পাশে একটি দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। যা ঢাকা ছিল নীল কাপড়ে। পা দু’টি বেরিয়েছিল। ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, যে জায়গায় দেহটি পড়ে ছিল, তার আশপাশের জায়গা সাদা কাপড় দিয়ে ঘেরা। ওই ঘেরা অংশের বাইরের অংশটা ফাঁকাই ছিল। সেখানে কেউ উপস্থিত ছিলেন না। কয়েকটি চেয়ার রাখা ছিল। সোমবার যে ভিডিয়োটি প্রকাশ্যে এসেছে, সেটি ভিড়ে ঠাসা ঘরের। অন্তত জনা তিরিশেক ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত। তাঁদের কেউ দাঁড়িয়েছে রয়েছেন, কেউ হাঁটাচলা করছেন। কেউ কেউ কথাও বলছেন নিজেদের মধ্যে। দৃশ্য বলতে শুধু এটুকুই। ৪৩ সেকেন্ডের ওই ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এনে দাবি করা হয়, দেহ উদ্ধারের পর অকুস্থলে ছিলেন আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের তৎকালীন আপ্তসহায়ক প্রসূন চট্টোপাধ্যায়, সন্দীপের আইনজীবী শান্তনু দে, হাসপাতালের ফরেন্সিক মেডিসিনের অধ্যাপক দেবাশিস সোম। আরজি কর ফাঁড়ির ওসি সঞ্জীব মুখোপাধ্যায়কেও ওই ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে বলে দাবি করা হয়েছে।

ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসার পর বিজেপি নেতা অমিত মালবীয় এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে দাবি করেছেন, ওই সময় চিকিৎসক, পুলিশ এবং হাসপাতাল কর্মীদের পাশাপাশি ‘বহিরাগতেরা’ও ছিলেন ঘটনাস্থলে। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টে সিবিআইয়ের আইনজীবী কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা দাবি করেছিলেন, আরজি করে ঘটনাস্থলের ‘চরিত্র বদলে’ ফেলা হয়েছে। সে কথাও টেনে এনেছিলেন অমিত। লিখেছিলেন, ‘‘এখন আমরা বুঝতে পারছি, এখন উনি (সলিসিটর জেনারেল) ও কথা বলেছিলেন!’’ এর প্রেক্ষিতে ইন্দিরা জানান, ভিডিয়োটি যখন করা হয়েছে, তখন ঘটনাস্থলে পুলিশ, হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মীরা, পরিবারের লোকজন উপস্থিত ছিলেন। মহিলা চিকিৎসককে হাসপাতালের যিনি মৃত ঘোষণা করেছিলেন, তিনিও সেই সময় ওই ঘরে ছিলেন। পিজিটির কিছু পড়ুয়া ছিলেন। তাঁদের কিছু দাবিদাওয়া ছিল। ওখানে বসেই সেই সব দাবিদাওয়া লিখছিলেন তাঁরা। বহিরাগত কেউ ছিলেন না। যে জায়গাটা ঘিরে রাখা ছিল, সেখানে বহিরাগতের প্রবেশ সম্ভব ছিল না।’’

দেহ উদ্ধারের পর সন্দীপের আইনজীবী শান্তনু ঘটনাস্থলে কী করছিলেন, তা নিয়েও কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছিলেন। ইন্দিরা সে প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আইনজীবী ছিলেন বলে দাবি করছেন কেউ কেউ। এ ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলতে পারবেন। তবে যে-ই আইনজীবী থাকুক না কেন, উনি হাসপাতালের অনুমতিতেই ছিলেন।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.