দুর্নীতির চক্রসন্ধানে মরিয়া সিবিআই! সন্দীপ ছাড়াও আর কার কার বাড়িতে রবিবার সকাল থেকে চলছে তল্লাশি

রবিবার, ছুটির দিনে সকাল থেকেই তৎপর সিবিআই। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের আর্থিক দুর্নীতি মামলার তদন্তে শহর এবং জেলা মিলিয়ে বেশ কয়েকটি জায়গায় হানা দেয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। একযোগে বেলেঘাটা থেকে টালা, কেষ্টপুর থেকে হাওড়া— বেশ কয়েক জনের বাড়ি এবং অফিসে যায় সিবিআই। সঙ্গী কেন্দ্রীয় বাহিনী। নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে এর আগে এ ভাবে একসঙ্গে রাজ্যের কয়েক জায়গায় হানা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা। রবিবার সেই ছবিই ফিরে এল বাংলায়।

রবিবার সকালে নিজ়াম প্যালেস থেকে সিবিআইয়ের বেশ কয়েকটি দল বার হয়। আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বেলেঘাটার বাড়িতে সিবিআইয়ের একটি দল পৌঁছতেই শোরগোল পড়ে যায়। সকাল ৬টা ৫০ মিনিট নাগাদ সিবিআই আধিকারিকেরা সন্দীপের বাড়িতে পৌঁছলেও ভিতরে ঢুকতে পারেননি। ৭৫ মিনিট বাড়ির বাইরেই অপেক্ষা করতে হয় তাঁদের। সকাল ৮টা ০১ মিনিট নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন সন্দীপ। তার পর ৮টা ০৫ মিনিট নাগাদ তাঁর বাড়িতে প্রবেশ করেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা। সেই দলে রয়েছেন এক জন মহিলা আধিকারিকও। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, দুপুর ১২টা পর্যন্তও সন্দীপের বাড়িতে রয়েছেন তাঁরা।

শুধু সন্দীপ নয়, সিবিআই সূত্রে খবর, রবিবার মোট ১৫টি জায়গায় হানা দিয়েছেন তদন্তকারীরা। আরজি করে প্রাক্তন সুপার সঞ্জয় বশিষ্ঠের এন্টালির বাড়িতেও সিবিআইয়ের একটি দল গিয়েছে। এ ছাড়াও, কেষ্টপুরে দেবাশিস সোম নামে এক ব্যক্তির বাড়িতেও তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে সিবিআই। জানা গিয়েছে, আরজি করের ফরেন্সিক মেডিসিন বিভাগের ডেমনস্ট্রেটর। অনেকেই দাবি করছেন, দেবাশিস আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষের ‘ঘনিষ্ঠ’।

এ ছাড়াও, হাওড়ার একটি জায়গায় বিপ্লব সিংহ নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে গিয়েছে সিবিআই। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহকারী হিসাবে কাজ করেন। তাঁর এক প্রতিবেশী রিঙ্কু রায় জানান, বিপ্লব আঁকার কাজ করতেন। ছোট দোকান ছিল তাঁর। বিভিন্ন সাইনবোর্ড আঁকার কাজ করতেন তিনি। তাঁর বাবা কাজ করতেন আরজি করে। বেলগাছিয়ার জেকে ঘোষ রোডে এক ক্যাফে মালিকের বাড়িতেও গিয়েছে সিবিআইয়ের অন্য একটি দল। পাশাপাশি, টালায় চন্দন লৌহ নামে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে যায় সিবিআই। ঘটনাচক্রে, চন্দনের বাড়ি নীচের তলাতেই রয়েছে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক অতীন ঘোষের দলীয় কার্যালয় রয়েছে।

আরজি করেও সিবিআইয়ের একটি দল পৌঁছয়। আরজি করের প্রশাসনিক ভবনে গিয়ে তল্লাশি অভিযান চালায় তারা। পাশাপাশি, আরজি করের বিভিন্ন জায়গায় যান আধিকারিকেরা। আরজি করের নতুন অধ্যক্ষ মানসকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সুপার সপ্তর্ষি চট্টোপাধ্যায়কে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় বলেও খবর। তাঁদের সঙ্গে কথা বলছেন সিবিআই আধিকারিকেরা।

গত ৯ অগস্ট সকালে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে এক মহিলা চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়। অভিযোগ ওঠে, ধর্ষণ এবং খুন করা হয়েছে তাঁকে। সেই নিয়ে হইচই পড়েছে গোটা দেশে। এই আবহে অভিযোগ উঠেছে, তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে আরজি কর হাসপাতালে আর্থিক দুর্নীতি চলেছে। তার তদন্তের জন্য গত ১৬ অগস্ট রাজ্য সরকারের তরফে একটি বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করা হয়েছিল। নেতৃত্বে ছিলেন আইপিএস অফিসার প্রণব কুমার। রাজ্য পুলিশের সিটের উপর আস্থা নেই, এই দাবিতে আরজি করের আর্থিক দুর্নীতির মামলার তদন্তভার ইডিকে দেওয়ার আর্জি কলকাতা হাই কোর্টে জানান হাসপাতালের প্রাক্তন অতিরিক্ত সুপার আখতার আলি। সেই মামলায় শুক্রবারই বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের একক বেঞ্চ জানিয়েছিল, একাধিক সংস্থা তদন্ত করলে বিষয়টি আরও জটিল ও সময়সাপেক্ষ হতে পারে। এর পরেই সিবিআইকেই আর্থিক দুর্নীতি মামলার তদন্তভার দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল উচ্চ আদালত। সেই নির্দেশ পাওয়ার পরেই শনিবার এফআইআর দায়ের করে সিবিআই। রবিবার সকাল থেকেই দুর্নীতির চক্রসন্ধানে মরিয়া হয়ে উঠেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.