ডুরান্ড কাপের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিল ইস্টবেঙ্গল। শিলংয়ের মাঠে শিলং লাজংয়ের বিরুদ্ধে হারল তারা। প্রথমে পিছিয়ে পড়ার পরে সমতা ফেরায় ইস্টবেঙ্গল। তার পরেও হারতে হয় তাদের। গোটা ম্যাচে গোল করার বেশ কয়েকটি সুযোগ পেয়েছিল লাল-হলুদ। কিন্তু দিমিত্রিয়স দিয়ামানতাকোস, ক্লেটন সিলভাদের ব্যর্থতায় ডুবল দল। পাশাপাশি রক্ষণও খারাপ খেলল। পরিকল্পনা করে ঘরের মাঠে জিতল লাজং। সেমিফাইনালে উঠে গেল তারা। লাজংকে হারাতে পারলে সেমিফাইনাল কলকাতায় খেলতে পারত ইস্টবেঙ্গল। সেই সুযোগ হারাল তারা।
লাজংয়ের বিরুদ্ধে তাদের মাঠে খেলা যে সহজ নয়, তা শুরুতেই বুঝে যায় ইস্টবেঙ্গল। প্রথম মিনিট থেকেই আক্রমণে ওঠার চেষ্টা করে পাহাড়ের দল। ৮ মিনিটের মাথায় এগিয়ে যায় তারা। কর্নার থকে ইস্টবেঙ্গল রক্ষণকে দাঁড় করিয়ে রেখে গোল করেন রুডওয়ের। জিকসন সিংহের সামনে থেকে গোল করেন তিনি। দাঁড়িয়ে দেখেন লাল-হলুদে এ বারই যোগ দেওয়া ফুটবলার।
এগিয়ে যাওয়ার পরেও আক্রমণ কমায়নি লাজং। ইস্টবেঙ্গলকে তাদেরই শক্তি সেটপিস থেকে সমস্যায় ফেলে তারা। ২০ মিনিটে ব্যবধান বাড়াতে পারতেন রুডওয়ের। ফ্রি কিক থেকে বল পান তিনি। গোলরক্ষকের সামনে থেকে হেড করেন। বল বারে লেগে বেরিয়ে যায়। কোনও রকমে বাঁচে লাল-হলুদ রক্ষণ।
ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে লাজং যে পরিকল্পনা করে নেমেছে তা তাদের খেলা দেখে বোঝা যাচ্ছিল। লাল-হলুদের হয়ে আক্রমণ তৈরি করার দুই প্রধান ফুটবলার সাউল ক্রেসপো ও মাদি তালালকে আটকে রেখেছিল তারা। ফলে বেশি বল পাচ্ছিলেন না দিয়ামানতাকোস, ডেভিডরা। ২০ মিনিটের পর থেকে নজর কাড়েন নন্দকুমার। দুই প্রান্ত থেকেই আক্রমণ তুলে আনতে থাকেন তিনি। ২৪ মিনিটের মাথায় নন্দের ক্রস থেকে ফাঁকায় হেড করার সুযোগ পান ডেভিড। যদিও সেটি হেড না করে পা দিয়ে মারলে তিনি ভাল করতেন। হেড করতে গিয়ে বল বারের উপর দিয়ে চলে যায়।
প্রথমার্ধের বাকি সময়ে ইস্টবেঙ্গলকেই বেশি আক্রমণে দেখা যায়। তালাল, ক্রেসপোরা সচল হন। কিন্তু লাজংয়ের রক্ষণ ভাঙা যাচ্ছিল না। ৩৮ মিনিটের মাথায় তালাল গোলরক্ষককে পরাস্ত করে গোল করলেও অফসাইডে তা বাতিল হয়। বাকি সময়ে অনেক চেষ্টা করেও সমতা ফেরাতে পারেনি ইস্টবেঙ্গল। ১-০ গোলে এগিয়ে বিরতিতে যায় লাজং।
দ্বিতীয়ার্ধে কয়েকটি বদল করেন ইস্টবেঙ্গলের কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাত। ডিফেন্ডার হিজাজি মাহেরকে তুলে স্ট্রাইকার ক্লেটন সিলভাকে নামান তিনি। তিন জন স্ট্রাইকারে চলে যায় দল। কিন্তু তাতেও খেলার ছবি বদলায়নি। লাজং মাঝমাঠে ফুটবলার বাড়িয়ে রেখেছিল। ফলে দুই প্রান্ত ছাড়া আক্রমণ করার উপায় ছিল না লাল-হলুদের। আক্রমণ করলেও তা গোলে শেষ হচ্ছিল না। সহজ সুযোগ নষ্ট করেন দিয়ামানতাকোস।
ইস্টবেঙ্গল ওপেন ফুটবল শুরু করায় প্রতি আক্রমণ থেকে সুযোগ পেতে শুরু করে লাজংও। ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ পায় তারা। কিন্তু গোল করতে পারছিলেন না লাল জার্সিধারীরা। লাজং একমাত্র গোলে এগিয়ে থাকায় তাঁদের যে ফেরার সুযোগ রয়েছে তা জানতেন কুয়াদ্রাত। ফুটবলারদের ক্রমাগত সেই নির্দেশই দিচ্ছিলেন তিনি।
লাজংয়ের মাঠে সমর্থনের অভাব ছিল না। গলা ফাটাচ্ছিলেন সমর্থকেরা। লাজংয়ের পাশাপাশি কিছু লাল-হলুদ সমর্থকও ছিলেন। তাঁরা ক্রমাগত দলকে তাতাচ্ছিলেন। তবে ইস্টবেঙ্গলের খেলা দেখে মনে হচ্ছিল, দমে কিছুটা ঘাটতি হচ্ছে তাদের। নইলে যে সময় ইস্টবেঙ্গলকে আক্রমণে জোর আরও বাড়ানো দরকার সেই সময় একের পর এক মিস্ পাস করল তারা। ছন্নছাড়া ফুটবলের খেসারত দিতে হল তাদের।
ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের মনে আশা জাগান নন্দকুমার। রক্ষাকর্তা হয়ে দেখা দেন তিনি। ৭৫ মিনিটের মাথায় বাঁ প্রান্ত ধরে উঠে ক্রস বাড়ান বিষ্ণু। চলতি বলে ডান পায়ের শটে গোল করে সমতা ফেরান নন্দ। গোলের পরে নিজের জার্সি তুলে টি-শার্ট দেখান তিনি। সেখানে আরজি কর-কাণ্ডে ন্যায়বিচারের দাবি লেখা ছিল।
কিন্তু বেশি ক্ষণ হাসি স্থায়ী হল না লাল-হলুদ সমর্থকদের মুখে। ৮৩ মিনিটের মাথায় রক্ষণের ভুলে দ্বিতীয় গোল খেতে হল ইস্টবেঙ্গলকে। বক্সের মধ্যে ডিফেন্ডারদের আগে বল ধরে গোল করলেন পরিবর্ত হিসাবে নামা লাজংয়ের ফিগো। ২২ বছরের ফুটবলারকে আটকাতে পারলেন না লাল-হলুদ ডিফেন্ডাররা। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলেন তাঁরা। দ্বিতীয় বার পিছিয়ে পড়ার পরে আর বেশি ক্ষণ সময় ছিল না। অনেক চেষ্টা করেও আর সমতা ফেরাতে পারেনি ইস্টবেঙ্গল। ব্যবধান আরও বাড়ানোর সুযোগ ছিল লাজংয়েরও। কিন্তু তারাও সুযোগ হারায়। তাতে অবশ্য খেলার ফলে বদল হয়নি। শেষ পর্যন্ত ১-২ গোলে হেরে বিদায় নিতে হল ইস্টবেঙ্গলকে।
বুধবার অপর কোয়ার্টার ফাইনালে আর্মি রেডকে ২-০ গোলে হারিয়েছে নর্থইস্ট ইউনাইটেড। তাদের হয়ে গোল করেন আলবিয়াচ ও গুলেরমো। সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে পাহাড়ের এই দল। সেমিফাইনালে তাদের বিরুদ্ধে আর এক পাহাড়ের দল শিলং লাজং।