রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতে হঠাৎই বিস্ফোরণের জেরে আগুন ধরে গেল জ়াপোরিঝিয়া পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রে। রবিবার রাতে বিদ্যুৎকেন্দ্রের কুলিং টাওয়ারের লেগে যাওয়া আগুন এখনও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি বলে ইউক্রেন সরকারের দাবি। এর জেরে তেজস্ক্রিয়তা ছড়ানোর আশঙ্কা প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)!
ইউক্রেন এবং রাশিয়া দু’পক্ষই এই অগ্নিকাণ্ডের দায় অস্বীকার করেছে। পাশাপাশি অভিযোগের আঙুল তুলেছে পরস্পরের দিকে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কির অভিযোগ ইউক্রেন সেনাই ওই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। অন্য দিকে, জ়াপোরিঝিয়া পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের মস্কো-নিযুক্ত প্রধান ভ্লাদিমির রোগোভ এবং জ়াপোরিঝিয়ার রুশ গভর্নর ইয়েভজেনি বালিটস্কি এ ঘটনার জন্য ইউক্রেনের সেনাকে দায়ী করেছেন।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালে যুদ্ধের গোড়াতেই ইউক্রেনের ওই পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রটির দখল নিয়েছিল রুশ সেনা। এখনও পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং তার আশপাশের অঞ্চল রাশিয়ার দখলে রয়েছে। জ়াপোরিঝিয়া পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের অবস্থান দক্ষিণ-পূর্ব ইউক্রেনের এনেরহোদার শহরের অদূরে ডেনিপার নদীর অববাহিকায় কাখোভকা জলাধারের তীরে। ডনবাস অঞ্চল থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার এবং রাজধানী কিভের ৫৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে এই পরমাণু কেন্দ্র ইউক্রেনের অন্যতম বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্র। জ়াপোরিঝিয়া পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রে মোট ছ’টি চুল্লি রয়েছে।
যুদ্ধের আগে ওই পরমাণুকেন্দ্র ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করত। ওই পরমাণু কেন্দ্র থেকে দেশের মোট পরমাণু শক্তির অর্ধেকই উত্পাদিত হত। কিন্তু ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান ঘোষণার পরেই সেখানে বিমান এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়। ক্ষয়ক্ষতির কারণে ব্যাহত হয় উৎপাদন।
রবিরার রাতের অগ্নিকাণ্ডের পরে জ়াপোরিঝিয়ার ছ’টি চুল্লির সব ক’টিই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে রাশিয়া জানিয়েছে। ১৯৮৬ সালে বিস্ফোরণে ইউক্রেনের (তৎকালীন অবিভক্ত সোভিয়েত ইউনিয়ন) চেরনোবিলের দু’টি পরমাণু চুল্লি উড়ে যাওয়ায় তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়েছিল। তার পর ওই কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয়। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সাময়িক ভাবে চেরনোবিলেরও দখল নিয়েছিল পুতিন বাহিনী। পরে তারা সেখান থেকে সরে যায়।