আরজি কর-কাণ্ডে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ও সিসিটিভি ফুটেজ দেখানো হোক, এই দাবি বার বার উঠে আসছিল বিক্ষোভরত জুনিয়র ডাক্তারদের তরফ থেকে। এই আবহেই রবিবার সন্ধ্যায় আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল। পুলিশ কমিশনার হাসপাতালে যাওয়ার পর বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ আলোচনা শুরু হয়। সূত্রের দাবি, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দেখার জন্য জুনিয়র ডাক্তারদের পাঁচ জনের প্রতিনিধিদল তৈরি করার কথা বলা হয়েছে।
আরজি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগে ক্রমেই বাড়ছে আন্দোলনের ঝাঁজ। মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগে আরজি করে অবস্থান-বিক্ষোভ চালাচ্ছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন তাঁরা। এরই মধ্যে রবিবার বিকেলে হাসপাতালে গিয়েছিলেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল। পরে সন্ধ্যায় বিক্ষোভরত জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। পুলিশ কমিশনারকে নিজেদের দাবি শোনান আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারেরা।
জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে বৈঠক শেষে যখন পুলিশ কমিশনার হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যান, তখন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা বেজে গিয়েছে। আলোচনা ইতিবাচক হয়েছে বলেই দাবি বিনীতের। তিনি বলেন, “আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের যা জিজ্ঞাস্য ছিল, সেগুলি নিয়ে আলোচনা ছিল। রবিবার অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার-১ পরিবারের সঙ্গেও দেখা করতে গিয়েছিলেন। তিনি পরিবারের কাছে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট তুলে দিয়েছেন। আমরা মনে করি আলোচনার পর আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারেরা সন্তুষ্ট। যদি তাঁদের কোনও প্রশ্ন থাকে, যে কোনও সময়ে আমাদের কাছে জানতে চাইতে পারেন।”
পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, “এখন বিভিন্ন ধরনের গুজব চারদিকে চলছে। কোথাও বলা হচ্ছে একাধিক ব্যক্তি জড়িত রয়েছেন, কোথাও বলা হচ্ছে কাউকে আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে, কোথাও বলা হচ্ছে তিন জনের সিমেনের নমুনা পাওয়া গিয়েছে— এমন একাধিক গুজব ছড়াচ্ছে। এ সব নিয়ে আন্দোলনকারীদের মনেও প্রশ্ন ছিল। সেগুলি নিয়ে কথা হয়েছে তাঁদের সঙ্গে। আমরা সম্পূর্ণ স্বচ্ছ। যদি কারও কোনও প্রশ্ন থাকে, আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।”
পুলিশ কমিশনার শনিবারই জানিয়েছিলেন, স্বচ্ছ ভাবে তদন্ত করা হবে। রবিবার আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে দেখা করে সেই একই কথা জানান তিনি। তিনি বলেন, “যদি কেউ সন্দেহ করেন, ঘটনায় অন্য কেউ জড়িত থাকতে পারেন— সেটি আমরা সবরকম গুরুত্ব দিয়ে দেখব। আমাদের কিছুই আড়াল করার নেই।” তিনি জানান, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ইতিমধ্যেই পরিবারকে দেওয়া হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজের বিষয়েও কথা হয়েছে। কিন্তু তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের যে গাইডলাইন রয়েছে, সেটি ভাঙা যাবে না।
প্রসঙ্গত, রবিবার দুপুরেই আরজি করের রেসিডেন্ট চিকিৎসকদের সংগঠনের তরফে সাংবাদিক বৈঠক ডাকা হয়েছিল। তুলে ধরা হয়েছিল চার দফা দাবি। তার মধ্যে একটি দাবি ছিল অভিযুক্তের বিরুদ্ধে প্রমাণ হিসাবে যে সিসিটিভি ফুটেজ মিলেছে এবং ময়নাতদন্তের রিপোর্টে কী উল্লেখ রয়েছে, তা আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিদলকে জানাতে হবে। এ ছাড়া আরও দাবি রয়েছে তাঁদের। যেমন— অভিযুক্তের প্রাণদণ্ড নিশ্চিত করা, হাসপাতালের অধ্যক্ষ, হাসপাতালের সুপার, বক্ষরোগ বিভাগের প্রধান এবং আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ফাঁড়িতে কর্তব্যরত পুলিশ আধিকারিককে লিখিত ভাবে ক্ষমা চেয়ে দায়িত্ব ছাড়তে হবে।
এর পাশাপাশি, মৃতের পরিবারের জন্য অর্থ সাহায্য এবং কত দূর তদন্ত এগোচ্ছে, তা নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর আন্দোলনকারীদের জানাতে হবে— এই দাবিও ছিল। রবিবার সন্ধ্যায় বৈঠকের পর পুলিশ কমিশনার জানাচ্ছেন বৈঠকে আন্দোলনকারীরা সন্তুষ্ট। যদিও আন্দোলনকারীরা জানাচ্ছেন, তাঁদের দাবিগুলি সম্পূর্ণ পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন তাঁরা চালিয়ে যাবেন।