চার দাবি না মানলে কোনও কাজ নয়! জানিয়ে দিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা, আরজি করে অচলাবস্থা অব্যাহতই

মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনার প্রতিবাদ বিক্ষোভে শিকেয় উঠেছে আরজি কর হাসপাতালের রোগী পরিষেবা। রবিবার জুনিয়র ডাক্তারেরা জানিয়ে দিলেন, প্রশাসন যদি তাঁদের চার দফা দাবি না মানে, তবে এই পরিস্থিতি আপাতত বদলাবে না। সরকারি হাসপাতালটিতে তাঁরা যে ভাবে জরুরি এবং সাধারণ পরিষেবা দুই-ই বন্ধ রেখেছেন, প্রশাসন তাঁদের দাবি না মানলে, তা আগামী দিনেও চলবে।

শুক্রবার আরজি কর হাসপাতালের চার তলার সেমিনার হলে এক মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনায় অভিযুক্ত এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে শনিবার গ্রেফতারও করে পুলিশ। তবে তার আগে থেকেই এই ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ আন্দোলন শুরু হয় আরজি করে। যার প্রভাব পড়ে চিকিৎসা পরিষেবাতেও। প্রাথমিক ভাবে হাসপাতালের আপৎকালীন পরিষেবা চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও শনিবার থেকে সেই জরুরি পরিষেবাও অনিয়মিত হয়ে যায়। রবিবার সরকারি হাসপাতালের জুনিয়র চিকিৎসকেরা লিখিত ভাবে জানিয়ে দিলেন, দাবি না মানলে জরুরি পরিষেবাও আর দেবেন না তাঁরা।

রবিবার আরজি করের রেসিডেন্ট চিকিৎসকদের সংগঠনের তরফে একটি সাংবাদিক বৈঠক করে সাদা কাগজে ছাপা ওই চার দফা দাবি প্রকাশ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথমটি হল— অভিযুক্তকে গ্রেফতার, তাঁর বিরুদ্ধে যথাযথ প্রমাণের ভিত্তিতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত এবং প্রাণদণ্ড দেওয়া। পাশাপাশিই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সিসিটিভি ফুটেজে যে প্রমাণ মিলেছে এবং ময়নাতদন্তের রিপোর্টে যা পাওয়া গিয়েছে তা আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের প্রতিনিধিদেরও সবিস্তার জানাতে হবে। পুলিশ অবশ্য ইতিমধ্যেই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে। তার বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে তদন্ত এবং অন্যান্য আইনি প্রক্রিয়াও।

দ্বিতীয় দাবি— লিখিত ভাবে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করতে হবে হাসপাতালের প্রিন্সিপাল, হাসপাতালের সুপার, বুক এবং ফুসফুসের চিকিৎসা বিভাগের প্রধান এবং আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের অন্তর্বর্তী থানার কর্তব্যরত পুলিশ আধিকারিককে। রবিবার অবশ্য হাসপাতালের সুপারকে আগেই অপসারণ করা হয়েছে। আরজি করের সুপারের দায়িত্বে নিয়েছেন ডিন বুলবুল মুখোপাধ্যায়।

আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকদের তৃতীয় দাবিটি হল— অবিলম্বে নিহতের পরিবারের জন্য উপযুক্ত অর্থসাহায্য ঘোষণা করতে হবে। চতুর্থ এবং শেষ দাবিটি ঘটনার তদন্ত সংক্রান্ত। আন্দোলনকারীদের দাবি, যে তদন্ত শুরু হয়েছে, তা কত দূর এগোচ্ছে, তা নিয়মিত ব্যবধানে লিখিত ভাবে জানাতে হবে তদন্তকারী সংস্থাকে।

হাসপাতালের জুনিয়র চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এই চার দফা দাবি সম্পূর্ণ না মানা পর্যন্ত হাসপাতালে জরুরি এবং সাধারণ পরিষেবা দেওয়া বন্ধ রাখবেন তাঁরা। একই সঙ্গে তাঁদের আন্দোলনকে সমর্থনের আহ্বানও জানিয়েছেন নাগরিক সমাজ এবং দেশের চিকিৎসক সংগঠনগুলির কাছে। তাঁরা লিখেছেন, ‘‘সুবিচারের দাবিতে আমরা সরব হয়েছি। এই জরুরি সময়ে আপনারাও আমাদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হোন।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.