শুক্রবার আরজিকর হাসপাতালের (R G Kar Hospital) সেমিনার হল থেকে উদ্ধার ডাক্তারি পড়ুয়ার অর্ধনগ্ন দেহ (Student Death)। এই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায় আরজিকরে। রাত ২টোয় শেষবার পিজি দ্বিতীয় বর্ষের ওই ছাত্রীকে ডিউটিতে দেখা গিয়েছিল বলে দাবি তাঁর সহকর্মীদের। শুক্রবার সন্ধেতেই এল ময়নাতদন্তের রিপোর্ট। জানা যাচ্ছে রাত ৩ টে থেকে ৬ টার মধ্যেই এই ঘটনা ঘটেছে। গলার একটি হাড় ভাঙা পাওয়া গেছে, যা সাধারণত হাত দিয়ে গলা টিপে খুন করলে গলার ওই জায়গায় হাড় ভাঙার সম্ভবনা থাকে। তাই এই মৃত্যুকে খুন বলেই দাবি চিকিত্সকদের। শুধু গলার হাড়ই ভাঙা নয়, নাকে-মুখে পাওয়া গিয়েছে রক্তের দাগ। জানা যায় গলা টিপে শ্বাসরোধ করেই খুন করা হয়েছে ছাত্রীকে।
পুলিস সূত্রে খবর, সেমিনার হলের স্টেজের উপর দেহ পাওয়া যায়। দেহ পোশাক প্রায় ছিল-ই না। মাথার পাশে পড়েছিল মোবাইল, ল্যাপটপ ব্যাগ। সূত্রের খবর, নাইট ডিউটি থাকলে অনেকে সেমিনার হলে বিশ্রাম নিতে যায়। তাঁর সঙ্গে নাউট ডিউটিতে ছিলেন প্রথম বর্ষের এক ছাত্র। তিনি জানিয়েছেন, রাত ২টোয় শেষবার তিনি চেস্ট মেডিসিনে পিজি দ্বিতীয় বর্ষের ওই ছাত্রীকে ডিউটিতে দেখেছিলেন। ফলে ওই ছাত্রীও তারপর সেমিনার হলে বিশ্রাম নিতে গিয়েছিলেন বলে অনুমান। এখন সেমিনার হল বা করিডর কোথাও কোনও সিসিটিভি নেই। তদন্তের স্বার্থে তাই রাতে ডিউটি থাকা গ্রুপ-ডি স্টাফ থেকে নার্সদের তালিকা সংগ্রহ করা হচ্ছে।
ঘটনার খবর পেয়েই ছুটে আসেন পুলিস কমিশনার বিনীত গোয়েল। তিনিও জানিয়েছেন, ‘এটি অস্বাভাবিক মৃত্যু।’ চিকিত্সক-পড়ুয়ার মৃত্যুতে ইতিমধ্যেই ডিন অব স্টুডেন্টসের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে আরজিকর কর্তৃপক্ষ। এও জানা গিয়েছে যে, আরজিকরের ওই চিকিত্সক-পড়ুয়ার ময়নাতদন্ত হবে এনআরএস-এ। তবে এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই কর্মবিরতিতে আরজিকরের চিকিত্সকরা। তাঁরা জানিয়েছেন, “ইতিমধ্যেই স্ট্রাইক শুরু করেছি। জরুরি বিভাগ বাদে সব বিভাগে পরিষেবা বন্ধ করা হয়েছে। যতক্ষণ না দাবি মিটছে স্ট্রাইক চলবে।”
প্রিন্সিপালকে ছাড়া তদন্ত করতে হবে বলে দাবি জানিয়েছেন ছাত্রীরা। তাঁদের অভিযোগ, ধর্ষণের ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে। নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি তুলেছেন তাঁরা। পানিহাটির তৃণমূল বিধায়ক নির্মল ঘোষেরও স্পষ্ট অভিযোগ, “আমার নিজের এলাকার মেয়ে। খুন হয়েছে। এটা নিয়ে আমার কোনও সন্দেহ নেই। সত্য উদ্ঘাটন করতে হবে। অপরাধীদের ধরতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে হস্তক্ষেপ করেছেন। বাবা-মা ও সিপির সঙ্গে কথা বলেছেন।”
“আমার মেয়েকে খুন করা হয়েছে। মুখে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। চশমা ভাঙা। শরীরে পোশাক প্রায় নেই।” কাঁদতে কাঁদতে বললেন আরজিকরের মৃত চিকিত্সক-পড়ুয়ার মা। মেয়ের রহস্যমৃত্যুতে সুবিচারের দাবি জানালেন হতভাগ্য মা। ওদিকে এই ঘটনার খবর পেয়ে ইতিমধ্যেই ওই চিকিত্সক-পড়ুয়ার বাবাকে ঝাড়গ্রাম থেকে ফোন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। দোষীরা উপযুক্ত শাস্তি পাবে বলে বাবাকে আশ্বস্ত করেছেন তিনি।
সন্ধে ৭ থেকে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রীর সন্দেহজনক মৃত্যুর ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে চালানোর প্রতিবাদ ও নিরপেক্ষ কেন্দ্রীয় সরকারি প্রতিষ্ঠানে ময়নাতদন্তের দাবিতে আরজিকরে ABVP-র অবস্থান বিক্ষোভ শুরু হয়। আর জি কর মেডিকেল কলেজে মহিলা পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেনির অস্বাভাবিক মৃত্যুর দ্রুত তদন্ত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ১০ অগাষ্ট মেডিক্যাল, ডেন্টাল, প্যারামেডিকেল ও নার্সিং কলেজে ছাত্র ধর্মঘট ও সারা বাংলা প্রতিবাদ দিবসের ডাক দিয়েছে AIDSO। ইতোমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়েছেন অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টর। আর জি কর হাসপাতালে মৃত্যু ঘটনায় প্রধান বিচারপতিকে ইমেইল মারফত চিঠি দিলেন আইনজীবী তথা বিজেপি নেতা কৌস্তুভ বাগচি। তাঁর দাবি, ‘আদালত শত প্রণোদিত পদক্ষেপ করুক। এই ঘটনায় রাজ্যে ডাক্তারদের উপর একটা প্রভাব পড়েছে’। মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘মহিলা কমিশন স্বতঃপ্রণোদিতভাবে তদন্ত শুরু করেছে।৪ সদস্যের দল গঠন করা হয়েছে’।