শেষ ক’বছর চোখে অনেকটাই কম দেখতেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। এ বার তাঁর কর্নিয়া দৃষ্টি ফেরাল দু’জনের। আরআইও (রিজিয়োনাল ইনস্টিটিউট অফ অপথ্যালমোলজি)-র ডিরেক্টর অসীমকুমার ঘোষ জানিয়েছেন, বুদ্ধদেবের কর্নিয়া দু’জনের চোখে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, যাঁরা কর্নিয়াজনিত অন্ধত্বে ভুগছিলেন। তাঁরা এখন সুস্থ রয়েছেন।
কর্নিয়া প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে গ্রহীতার নাম, পরিচয় গোপন রাখা হয়। এ ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। দুই গ্রহীতার পরিচয় নিয়ে গোপনীয়তা বজায় রাখা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকালে মৃত্যু হয়েছে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর। দুপুরের মধ্যে তাঁর কর্নিয়া সংগ্রহ করা হয়েছে। কর্নিয়া প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে দাতা এবং গ্রহীতার মধ্যে কিছু মিল (‘ম্যাচিং’) দেখা হয়। এ ক্ষেত্রেও সেগুলি দেখে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। আরআইওর তরফে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যে শেষ হয়েছে কর্নিয়া প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়া।
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, বুদ্ধদেবের রেটিনায় সমস্যা থাকলেও কর্নিয়ায় কোনও সমস্যা ছিল না। তবে তিনি ছানির অস্ত্রোপচার কখনও করাননি। চিকিৎসকেরা মনে করছেন, চোখে সমস্যা থাকলেও বুদ্ধদেব হয়তো ভেবেচিন্তেই অস্ত্রোপচার করাননি। তার ফলে কর্নিয়ার গুণগত মান ভাল ছিল। ছানির অস্ত্রোপচার হলে কর্নিয়ার গুনগত মান কমে যায়। এই আরআইওতে আগেও চোখ দেখিয়েছিলেন বুদ্ধদেব।
বৃহস্পতিবার রাতে বুদ্ধের দেহ রাখা হয়েছে পিস ওয়ার্ল্ডে। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় সেখান থেকে দেহ বার করা হবে। তার পরে শেষযাত্রা শুরু হবে রাজ্য বিধানসভার উদ্দেশে। সকাল ১১টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বিধানসভায় মরদেহ থাকবে। সেখান থেকে বেলা ১২টা নাগাদ দেহ নিয়ে যাওয়া হবে সিপিএমের রাজ্য দফতর আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে। সেখানেই মরদেহ শায়িত থাকবে বিকাল ৩টে পর্যন্ত। সেখান থেকে প্রয়াত বুদ্ধদেবের দেহ নিয়ে যাওয়া হবে দীনেশ মজুমদার ভবনে। সিপিএমের ছাত্র ও যুব সংগঠনের রাজ্য দফতরে। বুদ্ধদেব ছিলেন প্রাদেশিক যুব সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। সভাপতি ছিলেন তাঁর বন্ধু এবং কমরেড দীনেশ মজুমদার। তাঁর নামেই ওই ভবনটি নামাঙ্কিত। পৌনে ৪টে পর্যন্ত বুদ্ধদেবের দেহ শায়িত থাকবে সেখানে। সেখান থেকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের পরে মিছিল করে দেহ নিয়ে যাওয়া হবে শিয়ালদহের কাছে এনআরএস মেডিক্যাল কলেজে। সেখানেই বুদ্ধদেবের দেহ দান করা হবে ভবিষ্যতের চিকিৎসার গবেষণার কাজে। প্রসঙ্গত, বুদ্ধদেবের পূর্বসূরি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর দেহও দান করা হয়েছিল। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছিল এসএসকেএম হাসপাতালে।