প্রত্যাশা ছিল। সেটাই করে দেখালেন সিমোন বাইলস। সোনা দিয়ে প্যারিস অলিম্পিক্স শুরু করলেন তিনি। মঙ্গলবার রাতে আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিক্সের দলগত ইভেন্টে দলকে জেতালেন আমেরিকার জিমন্যাস্ট। চারটি রোটেশনেই নেমেছিলেন বাইলস। তিনি শেষ করলেন তাঁর বিখ্যাত ফ্লোর ইভেন্ট দিয়ে। গোটা ইভেন্টে এক বারও দেখে মনে হয়নি চাপে আছে আমেরিকা। হাসতে হাসতে সোনা নিয়ে গেল তারা। খেলা শেষে সতীর্থদের জড়িয়ে ধরলেন বাইলস। তাঁর মুখে তখন হাসি ধরছে না। তাঁর নাম ধরে চিৎকার হল। তিন বছর আগে টোকিয়োয় যে খেলার মাঝে বেরিয়ে গিয়েছিলেন, সেই খেলা থেকে প্যারিস অভিযান শুরু করলেন তিনি। জিতলেন তাঁর অষ্টম পদক। তার মধ্যে পাঁচটি সোনা।
আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিক্সের দলগত বিভাগে চারটি রোটেশন হয়। প্রতিটি রোটেশনে চারটি করে এক্সারসাইজ করতে হয় প্রতিযোগীদের। ভল্ট, আনইভেন বার, ব্যালান্স বিম ও ফ্লোর এক্সারসাইজ। ফাইনালের আটটি দলকে চারটি গ্রুপে ভাগ করা হয়। প্রতিটি গ্রুপে থাকে দু’টি করে দল। প্রতিটি দল থাকেন তিন জন করে প্রতিযোগী। একটি রোটেশনে দু’টি দলের তিন জন একটি এক্সারসাইজ করেন। এ ভাবে চারটি রোটেশন হওয়ার পরে সকলের স্কোর যোগ করে সোনা, রুপো ও ব্রোঞ্জ ঠিক করা হয়।
চারটি রোটেশন শেষে আমেরিকার মহিলা দলের স্কোর ১৭১.২৯৬। তারা ভল্টে ৪৪.১০০, আনইভেন বারে ৪৩.৩৩২, ব্যালান্স বিমে ৪১.৬৯৯ ও ফ্লোর এক্সারসাইজে ৪২.১৬৫ স্কোর করেছে। দ্বিতীয় স্থানে থেকে রুপো জিতেছে ইটালি। তাদের স্কোর ১৬৫.৪৯৪। তারা ভল্টে ৪১.৬৬৫, আনইভেন বারে ৪২.৬৬৫, ব্যালান্স বিমে ৪১.১৯৯ ও ফ্লোর এক্সারসাইজে ৩৯.৯৬৫ স্কোর করেছে। আমেরিকার থেকে ইটালির স্কোরের তফাত ৫.৮০২। সকলকে অবাক করে দিয়ে ব্রোঞ্জ জিতেছে ব্রাজিল। তাদের স্কোর ১৬৪.৪৯৭। তারা ভল্টে ৪২.৩৬৬, আনইভেন বারে ৪১.১৯৯, ব্যালান্স বিমে ৩৯.৯৬৬ ও ফ্লোর এক্সারসাইজে ৪০.৯৬৬ স্কোর করেছে। হতাশ করেছে গ্রেট ব্রিটেন ও চিন।
বাইলস কেমন খেলেন সে দিকে নজর ছিল সকলের। দর্শকাসনে তাঁর বাবা রন বাইলস, মা নেলি বাইলস ও স্বামী জোনাথন ওয়েনস ছিলেন। কন্যাকে নিয়ে খেলা দেখতে এসেছিলেন সেরিনা উইলিয়ামস। কানায় কানায় ভর্তি গ্যালারিকে হতাশ করেননি বাইলস। আমেরিকার হয়ে চারটি রোটেশনেই অংশ নেন তিনি। চোট পাওয়ায় পায়ে ব্যান্ডেজ বাঁধা থাকলেও তাতে সমস্যা হয়নি অলিম্পিক্সে সাত পদকের মালকিনের। জর্ডন চাইলসও সবগুলি রোটেশনে নামেন। ভল্ট ছাড়া বাকি তিনটি রোটেশনে নামেন সুনিসা লি। জেড ক্যারে একমাত্র ভল্টে অংশ নেন।
প্রথমেই ভল্ট রোটেশনে যায় আমেরিকা। তাদের গ্রুপে ছিল ইটালি। সেখানে সবচেয়ে বেশি ১৪.৯০০ স্কোর করেন বাইলস। জর্ডন ১৪.৪০০ ও জেড ১৪.৮০০ স্কোর করেন। প্রথমেই এগিয়ে যায় আমেরিকা। সেই লিড শেষ পর্যন্ত ধরে রাখে তারা। আমেরিকার স্কোর ছিল ৪৪.১০০। দ্বিতীয় স্থানে থাকা চিনের স্কোর ছিল ৪২.৬৬৬। তিন নম্বরে ছিল ইটালি। তাদের স্কোর ছিল ৪১.৬৬৫।
আমেরিকার দ্বিতীয় রোটেশন ছিল আনইভেন বার। সেখানে দলের হয়ে সবচেয়ে ভাল স্কোর করেন সুনিসা। তিনি ১৪.৫৬৬ স্কোর করেন। বাইলস স্কোর করেন ১৪.৪০০। জর্ডন ১৪.৩৬৬ স্কোর করেন। দ্বিতীয় রোটেশনের পরে আমেরিকার স্কোর ছিল ৮৭.৪৩২। দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে ইটালি। তাদের স্কোর ছিল ৮৪.৩৩০। তিন নম্বরে থাকা চিনের স্কোর ছিল ৮৩.৯৩১।
তৃতীয় রোটেশন অর্থাৎ, ব্যালান্স বিমে খারাপ শুরু করেন জর্ডন। বিম থেকে পড়ে যান তিনি। ফলে তাঁর পয়েন্ট কাটা যায়। বিমে সবচেয়ে বেশি স্কোর করেন সুনিসা (১৪.৬০০)। তার পরে বাইলস (১৪.৩৬৬) ও জর্ডন (১৩.৭৩৩)। বিমে বাইলসও একটা সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু পড়ে যাওয়ার আগে নিজেকে সামলে নেন তিনি। তৃতীয় রোটেশনের পরে আমেরিকার স্কোর ছিল ১২৯.১৩১। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইটালির স্কোর ছিল ১২৫.৫২৯। তিন নম্বরে উঠে আসে গ্রেট ব্রিটেন। তাদের স্কোর ছিল ১২৪.১৬৪।
চতুর্থ রোটেশন ছিল ফ্লোর এক্সারসাইজ। সেখানে সকলের শেষে যান বাইলস। তাঁর আগে সুনিসা ১৩.৫৩৩ ও জর্ডন ১৩.৯৬৬ স্কোর করেন। বাইলস নামার আগে শীর্ষে ছিল ইটালি। কিন্তু বাইলস হাসতে হাসতে সোনা নিজেদের দখলে নেন। সেই রোটেশনে তিনি ১৪.৬৬৬ স্কোর করেন। শেষ রোটেশনে ভল্টে ভাল করায় ষষ্ঠ স্থান থেকে এক লাফে তিন নম্বরে উঠে আসে ব্রাজিল। ব্রোঞ্জ জেতে তারা।