মঙ্গলেও স্তব্ধ টলিপাড়া, আইনজ্ঞ-সিনেমাবোদ্ধা কোনও তৃতীয় পক্ষকে পাশে চাইছেন পরিচালকেরা

সোমবার দুপুরের পর থেকে টলিপাড়া স্তব্ধ, শুটিং বন্ধ। তবে হইচই হল অন্যত্র। দফায় দফায় বৈঠক করলেন চলচ্চিত্র জগতের নীতি নির্ধারকেরা। বিকেলে টালিগঞ্জের টেকনিশিয়ানস্‌ স্টুডিয়োয় সাংবাদিক বৈঠক করে ফেডারেশন। তার পর সন্ধ্যায় সেখানেই পাল্টা বৈঠকে বসে ডিরেক্টর্স গিল্ড। পরিচালকদের তরফে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, অঞ্জন দত্ত, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, অরিন্দম শীল, রাজ চক্রবর্তী-সহ অনেকেই।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন পরিচালকেরা। কৌশিক বলেন, “আমরা এবং টেকনিশয়ানরা যে আলাদা, সেটা আজ প্রথম জানলাম! এখানে আমরা-ওরা এই তত্ত্ব নিয়ে নয়, সমস্যার সমাধান খুঁজে পেতে একজোট হয়েছি। সেখানে স্লোগান থাকবে না!” অঞ্জনের কথায়, “রাহুলকে (পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়) কেন্দ্র করে যে সমস্যার সূত্রপাত ঘটেছিল, সেটা আজকে ৪০০ জন পরিচালকের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।” পরিচালকদের অভিযোগ ফেডারেশন তাদের নিজেদের ইচ্ছে মতো একতরফা আইন তৈরি করে। ফলে বাংলা চলচ্চিত্র জগতে কাজের পরিসর ক্রমশ কমছে। ফিরে যাচ্ছেন বলিউডের বহু নির্মাতা।

সমস্যা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে কোনও সমাধানের পথ দেখা যাচ্ছে না। তাই পরিচালকেরা চাইছেন ‘নিরপেক্ষ’ তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ। কিন্তু কে হতে পারেন এই তৃতীয় পক্ষ? পরিচালক ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরীর কথায়, “সিনেমার সঙ্গে যুক্ত অথচ আইন বোঝেন এমন কাউকেই আমরা চাইছি।”

Director\'s guild held a press conference on Monday evening regarding their strike

ফেডারেশনের তরফে অভিযোগ ছিল, পরিচালকদের একাংশ ‘ষড়যন্ত্র’ করে সোমবার শুটিং বন্ধ করেছেন। এই প্রসঙ্গে অনির্বাণ ভট্টাচার্য বলেন, “পরিচালকেরা কাজে আসেননি। কিন্তু আমরা অন্য কোনও বিভাগকে কাজে না আসার জন্য অনুরোধ করিনি।”

অবিলম্বে সমস্যার সমাধান চাইছেন পরিচালকেরা। এ দিকে ফেডারেশনও আলোচনার জন্য প্রস্তুত বলে জানিয়েছে। কিন্তু সমস্যা না মিটলে কর্মবিরতি চলবে বলেই জানিয়েছেন তাঁরা। পরিচালক রাজ চক্রবর্তী বলেন, “এক দিন, দু’দিন থেকে সাত দিন হতে পারে। কিন্তু সমস্যা না মিটলে এই কর্মবিরতি চলবে।” ফলে মঙ্গলবারও যে টলিপাড়া কার্যত স্তব্ধ থাকবে, তার ইঙ্গিত মিলে গেল সোমবার রাতেই।

পাশাপাশি, সোমবার সন্ধ্যায় সিভিএসএসডব্লিউএ (সিনে ভিডিয়ো অ্যান্ড স্টেজ প্লেয়ার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন)-এর তরফে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। সেখানে সংগঠনের সদস্যেরা ফেডারেশনের বিরুদ্ধে কার্যত ‘হুমকি’ দেওয়ার অভিযোগই তুলেছেন। সংগঠনের সম্পাদক, সৈকত দাসের নামে প্রকাশিত বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, “আমরা ভেন্ডররা বিভিন্ন সময়ে ফেডারেশনের কিছু সদস্যের দ্বারা হুমকিপ্রাপ্ত হই, তাঁদের কথা মতো মাল সরবরাহ না করলে, তাঁকে নিষিদ্ধ করা হবে। মাননীয় মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের নিষেধ সত্ত্বেও দিনের পর দিন এ সব চলে আসছে।” সৈকতের দাবি, ‘গুপি’ শুটিংয়ে মাল সরবরাহ করতে নিষেধ করেছে ফেডারেশন। কিন্তু কোনটা ‘গুপি’ শুটিং সেটা তাঁদের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। বরং এতে তাঁদের ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে বিস্তর। টলিপাড়ার বর্তমান পরিস্থিতিতে তাঁরা যে প্রযোজক ও পরিচালকদের সঙ্গে রয়েছেন, সে কথাও সোমবার তাঁরা স্পষ্ট করে দিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.