বিশ্বের ভয়ঙ্কর অথচ বিপন্ন ও সুন্দর বন্যপ্রাণীগুলির মধ্যে বাঘের ( Panthera tigris ) নাম করতে হবে। বাদাবনের সংস্কারে জঙ্গলের অভিযানে ‘বাঘ’ নামটি নাকি উচ্চারণ করতে নেই! তাতে নাকি বাঘের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। তার বদলে লোকসমাজ বাঘকে ডাকে ‘দক্ষিণ রায়’। কেউ বলে ‘হালুম চাচা’, ‘বড়মিঞা’, ‘ডোরাকাটা’, ‘বড়দা’, ‘মামাবাবু’, ‘বাবুমশাই’, ‘ফকিরবুড়ো’, ‘কাবলিওয়ালা’, ‘বন্ধু’ ইত্যাদি।
গাঢ় সোনালি রঙের প্রাণীটির অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে। বাঘদের সুরক্ষা এবং সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে ২০১০ সালে অনুষ্ঠিত হয়, তা প্রতিবছর ২৯ জুলাই পালিত হয়।
বাঘেদের অস্তিত্বের বিপন্নতার প্রধান কারণ হলো বাসস্থান হারানো। বনভূমি কাটা, কৃষিজমি সম্প্রসারণ, নগরায়ন প্রক্রিয়ায় বাঘদের প্রাকৃতিক বাসস্থান ক্রমশ কমে যাচ্ছে। এ ছাড়া, নানা প্রকার মানুষ-বন্যপ্রাণী সংঘাত যেমন মানুষের দ্বারা বাঘ হত্যার ঘটনা, তাদের খাদ্য-সম্পদ হরণ প্রভৃতি ব্যাঘ্র জীবনকে আরো সংকটাপন্ন করে তুলছে।
আরেকটি বৃহৎ এবং গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হচ্ছে শিকার। বাঘদের চামড়া, হাড় ও অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের অবৈধ বাণিজ্য আজও চলছে। প্রাচীন বিশ্বাস এবং অবৈজ্ঞানিক চিকিৎসা পদ্ধতির জন্য বাঘেদের হত্যা করা হচ্ছে। তাই ব্যাঘ্রজাতি আজ সঙ্কটাপন্ন,সংখ্যা কমে যাচ্ছে দ্রুত গতিতে।
উদযাপনের মূল উদ্দেশ্য হল, এই প্রাণীটির সংরক্ষণের গুরুত্ব সম্পর্কে অবগত করা এবং বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধি। দিনটি বিভিন্ন কর্মসূচিতে এবং কর্মশালার আয়োজনে সম্পন্ন হয়, যেখানে বাঘদের সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলি, গবেষকরা এবং পরিবেশবিদরা একসঙ্গে কাজ করে বাঘদের বাসস্থান সংরক্ষণ, শিকার রোধ এবং মানুষের সাথে বন্যপ্রাণীর সংঘাত কমানোর জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য জনসাধারণকে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে প্রেরণা দেওয়া হচ্ছে।
বাঘদের সংরক্ষণ কেবল তাদের জন্যই নয়, বরং আমাদের পরিবেশের জন্যও অপরিহার্য। তারা প্রকৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং তাদের অভাবে জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে।যদি বাঘ না থাকে, তাহলে অরণ্যও একসময় হারিয়ে যাবে। গত শতাব্দীতে ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে প্রায় ৯৭ শতাংশ বাঘ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বর্তমানে যে অল্পসংখ্যক বাঘ বেঁচে আছে, তারাও দ্রুত হারে হ্রাস পাচ্ছে। আবার জলবায়ু বদলের কারণে সমুদ্রের জলের উচ্চতা ক্রমবর্ধমান, ফলে বাঘের আবাসস্থল হারিয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে হয়তো কয়েক দশক পরে বাঘের কঙ্কাল ডাইনোসরের কঙ্কালের পাশে জাদুঘরে শোভা পাবে।তাই, আমাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে টাইগারদের সংরক্ষণ এবং তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা উচিত।1973 সালে, বাঘের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে প্রকল্প টাইগার চালু করা হয়। আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস আমাদের এই লক্ষ্যে পৌঁছানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
স্লোগান :
Shoot the tigers with a camera, not a gun!
সুস্মিতা সরকার