চোখ বুজলেই ‘হামলা’র ছবি, ঘুমোতে পারছেন না মালদহের বিশ্ববিদ্যালয়ে আক্রান্ত ছাত্রী, অভিযুক্ত সঙ্কটেই

চোখ বুজলেই দেখতে পাচ্ছেন সেই ‘হামলা’। তাই হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে চেষ্টা করেও ঘুমোতে পারছেন না মালদহের গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে প্রাক্তনী অলোক মণ্ডলের ছুরির ঘায়ে জখম গণিত স্নাতকোত্তরের ছাত্রী তনুশ্রী চক্রবর্তী। শনিবার মালদহ মেডিক্যাল কলেজে দেখা করতে যাওয়া সহপাঠী দেবদত্ত দাসকে তিনি বলেন, “ঘুম আসছে না। চোখ বন্ধ করলেই ঘটনাটা চোখের সামনে ভেসে উঠছে।” তবে কেন তাঁর উপরে ‘হামলা’ হল, সেই প্রশ্নের জবাব দেননি তনুশ্রী। দেবদত্ত পরে বলেন, “তনুশ্রী ঘটনাটা ভুলতে পারছে না। পড়াশোনা নিয়েও চিন্তায় আছে। তবে আজ ওকে দেখে একটু আশ্বস্ত হয়েছি।”

তনুশ্রীর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল হলেও, সঙ্কট কাটেনি অলোকের। মালদহ মেডিক্যাল কলেজের সুপার প্রসেনজিৎ বর বলেন, “দু’জনকেই ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।” তনুশ্রীর পরিবার অলোকের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করেছে। তদন্তে পুলিশ জেনেছে, ফল কাটার ছুরি দিয়ে আক্রমণ করা হয়েছিল। তাদের অনুমান, অলোকের ‘সন্দেহপ্রবণতা’ ঘটনার অন্যতম কারণ।

বৃহস্পতিবার গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ভবনে ওই হামলা হয়েছিল। শুক্রবার রাতে হাসপাতালে গিয়ে তনুশ্রীর সঙ্গে কথা বলেন তদন্তকারীরা। পুলিশ সূত্রের দাবি, ইংরেজবাজারের একটি বি এড কলেজে ২০২১-এ তনুশ্রী ভর্তি হন। সে বছরই সেখানে ভর্তি হন পদার্থবিদ্যায় স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ অলোক। দু’জনের বন্ধুত্ব তৈরি হয়, ক্রমে ‘ঘনিষ্ঠতা’।

তবে তনুশ্রী চলতি বছরে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর স্তরে ভর্তি হওয়ার পরে, ‘বদলে’ যায় সম্পর্ক। তনুশ্রীকে ‘সন্দেহ’ করতে শুরু করেন অলোক। সম্পর্কে ইতি টানতে চেয়েছিলেন তনুশ্রী। তার পরেই হামলা বলে প্রাথমিক তদন্তের পরে দাবি পুলিশের। পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব বলেন, “তদন্তে সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

তনুশ্রীর বাবা দুলাল চক্রবর্তী জানান, অসমে স্নাতক হওয়ার পরে, সেখানে স্বাস্থ্য দফতরের চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর চাকরি পান তনুশ্রী। তবে অঙ্কের শিক্ষিকা হতে চান বলে মালদহে বিএড পড়তে আসেন। দুলালের আক্ষেপ, “মালদহে আসা ভুল হয়েছিল।” অলোকের ভাই বিপ্লব মণ্ডল বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরির অনেক পরীক্ষা দিয়েছে দাদা। সে সব নিয়েই ব্যস্ত থাকত। খুব কম কথা বলত। ছুরি নিয়ে বান্ধবীর উপরে হামলা করে তার পরে নিজেকে শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা করবে, বিশ্বাস করতে পারছি না।”

এ দিনও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ভবনের একাধিক তলায় রক্তের দাগ দেখা গিয়েছে। উপাচার্য পবিত্র চট্টোপাধ্যায় বলেন, “তদন্তের কারণে রক্ত সাফ করা হয়নি। পুলিশের সঙ্গে কথা বলে করা হবে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.