প্রকৃতির কোলে, সবুজের পাখায়,
জীবনের মধুর সুর বাজায়।
হাওয়ার মৃদু হিল্লোল গানে,
গান গায় সে সোনালি ধানে।
কিন্তু হায়! আমরা ভুলেছি,
এই সৌন্দর্য্য ধরে রাখতে।
তাইতো আজ প্রকৃতি মরিয়া
প্রতিশোধ নিতে ।
মরবে গাছ, শুকিয়ে যাবে বাতাস।
অতএব এখন সময় এসেছে,
প্রকৃতির প্রতি দায়বদ্ধতা প্রকাশ।
সসাগরা পৃথিবীর সমূহ-সম্পদ সংরক্ষণ করার বার্তা দিতে হবে। এহোবাহ্য। বাসযোগ্য বহুবিচিত্র বাস্তুতন্ত্রের বহমানতা বজায় রাখতেও উৎসাহিত করতে হবে। চিন্তাশীল জনসমাজ তাই একটি বিশেষ দিন ধার্য করে রাখলেন। সচেতনতা তৈরির এই দিনটির নাম World Nature Conservation Day, যা পালিত হয় প্রতি বছর ২৮ শে জুলাই। যেন নবপ্রজন্মের জন্য প্রবীণের প্রয়াস, প্রতুল সম্পদের অধিকারী এই পৃথিবীকে তেমনই বাসযোগ্য রেখে যাওয়ার প্রতিজ্ঞা।
সাম্প্রতিক ২০২৪ সালের জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন অংশ এক ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়। এই বিপর্যয়টি শুধু উত্তরবঙ্গের মানুষের জীবনকে বিপন্ন করেনি, বরং এটি পুরো রাজ্যের আর্থ-সামাজিক অবস্থাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে।উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের প্রভাব মারাত্মক ছিল। বহু মানুষের বাড়িঘর ধসে পড়েছে বা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বহু রাস্তা ও সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ফলে যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। বন্যার কারণে কৃষি জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এবং স্থানীয় কৃষকরা চরম দুরবস্থার সম্মুখীন হয়েছেন।২০২৪ সালের জুলাই মাসে উত্তরবঙ্গে বৃষ্টির পরিমাণ ছিল স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সীমানা অতিক্রম করে অতিবৃষ্টির ফলে পাহাড়ি অঞ্চলে ব্যাপক ধসের ঘটনা ঘটে। ফলে নদীগুলির পানি প্রবাহ বিপর্যস্ত হয়, এবং একাধিক এলাকায় বন্যা দেখা দেয়। পাশাপাশি, তীব্র মৌসুমি বায়ুর কারণে ভূমিধস ও নদীভাঙনের ঘটনা ঘটে।
প্রকৃতির প্রতি সতত অবিচার আমরা প্রতিনিয়তই করে থাকি। তারই ফল এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এহেন পীড়নের বিপ্রতীপে World Nature Conservation Day হল পাপ’শুদ্ধির দিন ‘ । যতটুকু ক্ষতি হয়েছে, সেখানেই বেঁধে দেওয়া, যেন পৃথিবীকে আর ক্ষতিগ্রস্ত না করার এক আহ্বান।
তার আগে আমরা জেনে নিই আমরা আন্তর্জাতিক দিনগুলি চিহ্নিত করি কেন! আর পার্বণের মতো তা পালনই বা করি কেন!
আমরা এই উদযাপন করি যাতে বিশেষ কার্যক্রমের মাধ্যমে সমাজে বার্তা দিতে পারি; জনগণের মধ্যে সদর্থক সচেতনতা সঞ্চারিত করতে পারি এবং সর্বোপরি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার প্রতি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারি।
বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ দিবস প্রতি বছর ২৮ শে জুলাই তারিখে পালিত হয়। পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের গুরুত্ব অসীম, আমরা জানি। কেবল আমি জানলে হবে না, আপামর জনসাধারণকে জানতে হবে। সুতরাং সামাজিক সচেতনতা বাড়াতেই এই উদযাপন। ২০২৪ সালের ক্ষেত্রে “Connecting People and Planet: Exploring Digital Innovation in Wildlife Conservation”, হচ্ছে প্রধান ভাবনা। ভাবনা হচ্ছে, এই গ্রহের জনসাধারণের মধ্যে সংযুক্তি: বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সাংখ্যিক-উদ্ভাবনকে সকলের গোচরে নিয়ে আসা। অর্থাৎ ডিজিটাল ভাবনাই প্রাধান্য পেয়েছে সংরক্ষণের এবারের উদ্যোগে।
বিশ্ব প্রাকৃতিক সংরক্ষণ দিবস হিসাবে পালিত প্রথম বছরটি ছিল ১৯৯৭ সালে। ঘোষণা এবং উদ্বোধন আয়োজন হয়েছিল ইতালিতে।
ডিজিটাল প্রযুক্তির সার্বিক, সমন্বিত ও সম্মিলিত ব্যবহারে প্রাণী সংরক্ষণের পরিকল্পনা কীভাবে নিখুঁত এবং কার্যকরী করে রূপদান করা যায়, এবারে উদ্যোগ তারই। প্রযুক্তির অবলীলায় এবং অবলম্বনে প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য রক্ষার প্রচেষ্টা। কার্যকরী সহায়তা নেওয়া হচ্ছে উচ্চতর প্রযুক্তির, যেমন উপগ্রহ ট্র্যাকিং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) পরিচালন সংক্রান্ত সিস্টেম, তথ্য বিশ্লেষণ ইত্যাদি। বর্তমানে প্রাকৃতিক অঞ্চলের পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হয়ে উঠছে এগুলি। সাম্প্রতিক প্রযুক্তির এই ব্যবহার এতই সহজ, সরল এবং দ্রুত যে প্রাকৃতিক অঞ্চলে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ইদানীং বিশ্বাসযোগ্যভাবেই সম্ভব হয়ে উঠছে। যেমন ড্রোন ব্যবহার করে প্রাণী মনিটরিং সম্ভব, রিমোট সেন্সর থেকে ডেটা বিশ্লেষণ করেও সম্ভব সংরক্ষণ সংক্রান্ত আপডেট নেওয়া। সচেতনতা বাড়াতে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা আজ খুব সহজেই সম্ভব হচ্ছে। প্রযুক্তিগত উন্নয়ন সম্ভব হওয়ায় বিশ্ব প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন পরিচালিত হচ্ছে, তেমন সংরক্ষিতও হচ্ছে। একবিংশ শতাব্দীতে সোশ্যাল মিডিয়ার উত্থান এবং বর্ধিত সংযোগ একটি উল্লেখযোগ্য দিক। সচেতনতা প্রচার এবং বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ দিবসের মতো আন্তর্জাতিক দিনগুলি পালনের গুরুত্ব এ কারণেই। ব্যক্তি, ব্যাষ্টি, সম্প্রদায় এবং সংস্থাগুলিকে একত্রিত করা সম্ভব। সংরক্ষণের প্রচেষ্টায় অবদান রাখার সুযোগও সম্ভব।
কিন্তু একা একা এত বৃহৎ বিশ্বকে এবং তার প্রকৃতিকে ভাল রাখা যায় না, একা কিছু করতে যাওয়াও বোকামি। প্রত্যেকেই যদি আপনাপন কর্তব্য পালন করি, তাহলেই প্রকৃতিকে ভাল থাকবে। সমবেত প্রচেষ্টা খরচ সাশ্রয়ীও বটে।
এবার দেখে নিই, বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ দিবসে কী কী করা উচিত বা অনুচিত।
১) প্রকৃতির স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সর্বাগ্রে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে হবে।
২) প্রকৃতিকে বাঁচাতে বদলাতে হবে খাদ্যাভ্যাস। প্রকৃতিকে যা ধ্বংস করে, এমন কিছু খাওয়া উচিত নয়। উচিত আমাদের সন্নিকটে যে ধরনের সব্জি পাওয়া যায় সেগুলো খাওয়া।
৩) বিদ্যুত শক্তি বাঁচান প্রয়োজন। বাড়িতে এলইডি বাল্ব জ্বালানো যায় এবং বিদ্যুৎ খরচ কমানো যায়।
৪) বৃক্ষরোপণ একটি জরুরি কাজ।
৫) বাড়িতে কাজে না লাগা জিনিসগুলোকে অবাঞ্ছিত না ভেবে সেগুলো দিয়ে বাড়ি সাজানো যায়। যেমন বাড়ির জলের বোতল। ওগুলোতেই ফের নতুন করে ডিজাইন করে গাছ লাগানো যায়। দেখতেও তা সুন্দর হবে, প্রকৃতির ভালও তাতে থাকবে।
পরিশেষে এটাই স্লোগান হওয়া উচিৎ-
▫️”Save the Earth, Save Yourselves.”
▫️”Think green. Be green. Stop polluting.”
সুস্মিতা সরকার