হরিয়ানার পর এ বার মহারাষ্ট্র। তিন মাসে পরে হতে যাওয়া বিধানসভা ভোটকে ‘পাখির চোখ’ করে বৃহস্পতিবার ওই রাজ্যেরই বিজেপি এবং সহযোগী দলগুলির সাংসদদের সঙ্গে বৈঠক করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার দুই সিনিয়র সদস্য নিতিন গডকড়ী, পীযূষ গয়াল-সহ বিজেপি, শিন্ডেসেনা এবং এনসিপি (অজিত)-এর লোকসভা ও রাজ্যসভা সাংসদেরা এই বৈঠকে হাজির ছিলেন।
চলতি বছরের অক্টোবরে হরিয়ানার সঙ্গে মহারাষ্ট্রে বিধানসভা ভোট হওয়ার কথা। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনে ওই দু’রাজ্যের ফল দেখে সতর্ক বিজেপি নেতৃত্ব আগেভাগেই তৎপরতা শুরু করে দিয়েছেন। এর আগে মঙ্গলবার হরিয়ানার বিজেপি সাংসদদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। মহারাষ্ট্রের বিধানসভা ভোটে পর্যবেক্ষক এবং সহ-পর্যবেক্ষক হিসাবে ইতিমধ্যেই মোদী মন্ত্রিসভার দুই সদস্য ভূপেন্দ্র যাদব ও অশ্বিনী বৈষ্ণোকে নিয়োগ করেছেন বিজেপি সভাপতি জেপি নড্ডা। হরিয়ানার বিধানসভা ভোটে পর্যবেক্ষক এবং সহ-পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পেয়েছেন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান এবং ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সাংসদ বিপ্লব দেব।
এ বারের লোকসভা ভোটে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজ্যের (জনসংখ্যার নিরিখে) ৪৮টি আসনের মধ্যে এ বার উদ্ধব ঠাকরেপন্থী শিবসেনা, শরদ পওয়াপন্থী এনসিপি এবং কংগ্রেসের জোট ‘মহাবিকাশ আঘাড়ী’ জিতেছে ৩০টিতে। শাসক ‘মহাদ্যুতি’র ঝুলিতে মাত্র ১৭। সাংলি আসনে জয়ী নির্দল প্রার্থী কংগ্রেস শিবিরে ভিড়ে গিয়েছেন ইতিমধ্যেই। বিজেপি, মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডের নেতৃত্বাধীন শিবসেনা এবং অজিতপন্থী এনসিপির পাশাপাশি এনডিএ-তে ছিলেন রাষ্ট্রীয় সমাজ পক্ষের নেতা মহাদেব জানকর। পাশাপাশি রাজ ঠাকরের নেতৃত্বাধীন মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা (এমএনস)-ও সমর্থন জানিয়েছিল এনডিএ-কে। তবুও বিপর্যয় এড়ানো যায়নি।
ইতিমধ্যেই আরএসএসের তরফে মহারাষ্ট্রে অজিতের সঙ্গে জোটের বিরোধিতা করা হয়েছে প্রকাশ্যে। সঙ্ঘের অভিযোগ, অজিতের এনডিএতে অন্তর্ভুক্তির ফলে বিজেপির পুরনো কর্মীরা মনঃক্ষুণ্ণ হন। কারণ, তাঁরা বরাবরই কংগ্রেসের ভাবধারার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে এসেছেন। (কংগ্রেসি ভাবধারার নেতা) অজিতের এনডিএতে যোগদানে ‘ব্র্যান্ড বিজেপি’ বাজারদরও নেমে যায়। তা ছাড়া, ভোটের আগে এনডিএতে যোগ দেওয়া অজিতের মতো নেতাদের বিরুদ্ধে যে নানা দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, সে কথাও লেখা হয় সঙ্ঘের মুখপত্রে।
এই পরিস্থিতিতে বিধানসভা ভোটের আগে শাসকজোটের অন্দরে আসন রফা নিয়েও টানাপড়েনের আঁচ মিলেছে। সে রাজ্যের ২৮৮টি বিধানসভা আসনের মধ্যে শিন্ডেসেনা ১০০টি এবং অজিতপন্থী এনসিপি ৯০টি দাবি করেছে বলে সূত্রের খবর। প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে মহারাষ্ট্রের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি এবং শিবসেনা একসঙ্গে লড়লেও ভোটের তাদের সম্পর্কে চিড় ধরে। কংগ্রেস এবং এনসিপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে জোট সরকার গড়েছিল শিবসেনা। মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন উদ্ধব।
কিন্তু ২০২২ সালের জুনে একনাথ শিন্ডের নেতৃত্বে সংখ্যাগরিষ্ঠ শিবসেনা বিধায়ক উদ্ধবের নেতৃত্বে অনাস্থা প্রকাশ করে বিজেপি সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার গড়েছিলেন। পরে নির্বাচন কমিশন শিন্ডেগোষ্ঠীকেই ‘আসল শিবসেনা’ হিসাবে চিহ্নিত করে শিবসেনার নাম ও প্রতীক দেয়। একই ভাবে ২০২৩-এর জুলাই মাসে অজিতের নেতৃত্বে অধিকাংশ এনসিপি বিধায়ক দলের প্রতিষ্ঠাতা শরদের সঙ্গ ছেড়ে এনডিএ-তে শামিল হয়। অজিতগোষ্ঠীকেও ‘আসল এনসিপি’র মর্যাদা দেয় নির্বাচন কমিশন। কিন্তু লোকসভা ভোটের ফল বলছে ‘আসল দল’ হিসাবে স্বীকৃতি পেলেও উদ্ধব এবং শরদের ভোটব্যাঙ্কের সিংহভাগ দখল করতে পারেননি শিন্ডে-অজিত।