বাংলাদেশে অশান্তির প্রভাব পড়ল পেট্রাপোল বন্দরেও। শনিবার সকালের পর প্রতিবেশী দেশে রফতানি বন্ধ করা হয়েছে। আমদানিও চলছে ধীর গতিতে। সে দেশ থেকে ভারতে আসা যাত্রীর সংখ্যাও কমেছে। এর প্রভাব পড়েছে মুদ্রা বিনিময়ে। যাত্রীদের যাতায়াতের জন্য পেট্রাপোলে থাকে যানবাহন। যাত্রী না আসায় তাদের ব্যবসাও ধাক্কা খেয়েছে।
কোটা সংস্কারের দাবিতে পড়ুয়ারা আন্দোলন করছে বাংলাদেশে। সংবাদ সংস্থা এএফপি জানাচ্ছে, পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে পড়ুয়াদের সংঘাতে শনিবার সকাল পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১০৫ জনের। শুক্রবার রাত থেকে বাংলাদেশে জারি করা হয়েছে কার্ফু। রাস্তায় টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী। বন্ধ রয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা। এই আবহে শনিবার সকালে সে দেশে পেট্রাপোলের মাধ্যমে ৩৫ ট্রাক পণ্য রফতানি করা হয়েছে। তার পরেই বন্ধ করা হয়েছে রফতানি। আমদানি চলছে ধীর গতিতে। পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং ফরোয়ার্ডিং এজেন্ট সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘শনিবার সকালে রফতানি শুরু হওয়ার পরে ল্যান্ড পোর্ট অথরিটির (এলপিআই)-এর সঙ্গে কথা বলে রফতানি বন্ধ করা হয়েছে।’’
কেন রফতানি বন্ধ করা হল, তা-ও জানিয়েছেন কার্তিক। তাঁর কথায়, ‘‘পণ্য রফতানি করছিলাম। পণ্য পাঠানোর জন্য ও পারে পানাপোলের লোকজনের সঙ্গে গাড়ি নিয়ে যোগাযোগ করছিলাম। কিন্তু মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা যায়নি। এর ফলে পণ্য কী ভাবে পাঠানো হবে, তা নিয়ে আতঙ্ক তৈরি হয়। তার পরেই এলপিআইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করি। এলপিআই আধিকারিক আধ ঘণ্টা রফতানি বন্ধ রাখার কথা বলেন প্রথমে। এর পর ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে কথা বলে তিনি পুরো রফতানি বন্ধ করার কথা বলেন।’’ কার্তিক জানিয়েছেন, বাংলাদেশে যে সব ভারতীয় চালক রয়েছেন, তাঁদের ফিরিয়ে আনারও ব্যবস্থা করা হবে। তিনি বলেন, ‘‘পরিস্থিতি আগের থেকে সামান্য বদলেছে। কিন্তু, এখনও উদ্বেগজনক। তাই বাণিজ্য আপাতত বন্ধ রাখা হচ্ছে। যদি বাংলাদেশ থেকে সরকারি ভাবে বার্তা পাই যে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে, তখন আবার চালু হবে রফতানি।’’ কাঁচামাল রফতানির সমস্যার কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি। কার্তিকের কথায়, ‘‘কাঁচামাল রফতানি করে পাঠাব কোথায়? লোক নেই। যে হেতু মোবাইল, ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ, কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। পণ্য আটক করা হলে কাঁচামাল নষ্ট হয়ে যাবে।’’
পেট্রাপোল দিয়ে ভারতে আসা যাত্রীর সংখ্যা কমেছে। তার প্রভাব পড়েছে মুদ্রা বিনিময়ে। স্থানীয় যানবাহনের ব্যবসায়ীরাও ক্ষতির মুখে পড়েছেন। দিন কয়েক আগে বাংলাদেশে এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন বিশ্বনাথ দাস। তিনি নিউ ব্যারাকপুরের বাসিন্দা। দু’দিন পর ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা তাঁর। তাই প্রাণ হাতে করে বাংলাদেশ থেকে চলে এসেছেন কোনও মতে। বিশ্বনাথের কথায়, ‘‘শিলচর থেকে আসছি। বাংলাদেশে গাড়ি, বাস কিছুই চলছে না। দোকানপাট বন্ধ। বাইকে চেপে এসেছি। দু’দিন পর ভিসার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তাই কোনও মতে চলে এলাম।’’