Snake bite, Housewife, সাপে কামড়ানোয় ওঝার কাছে গিয়ে হয়নি কাজ, শেষে চিকিৎসকদের তৎপরতায় প্রাণে বাঁচলেন গৃহবধূ

 বৃহস্পতিবার রাতে সাপে কামড় দেওয়ার পর ওঝার দ্বারস্থ হয়ে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ায় বর্তমানে হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন এক গৃহবধূ। শুধু তাই নয়, তাকে বাঁচাতে যুদ্ধকালীন চিকিৎসা পরিষেবা দিয়ে চলেছেন চিকিৎসক ও সহ কর্মীরা। তাঁদের দাবি, যে কোনো প্রকারে সুস্থ করে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ব্রতী তাঁরা।

জানা গিয়েছে, প্রত্যন্ত সুন্দরবনের ঝড়খালি কোষ্টাল থানার অন্তর্গত নফরগঞ্জ পঞ্চায়েতের হিরন্ময়পুর গ্রাম। গ্রামেই রয়েছে গায়েন পরিবার। ওই দিন রাতে গায়েন পরিবারের বধূ রীণা গায়েন খাওয়া দাওয়া করে ঘুমিয়েছিলেন। রাত প্রায় ১২টা নাগাদ বিছানার মধ্যে তার হাতে তীক্ষ্ণ বিষধর কালাচ সাপ কামড় দেয়। রাত দুটো নাগাদ তিনি বুঝতে পারেন। বিছানার মধ্যে সাপও দেখতে পায় ওই বধূ। সাপ দেখে তিনি চিনতে পারেন।তবে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সাপকে বাঁচিয়ে রাখা জরুরি বলে তিনি সাপটিকে মারেননি। ঘটনার কথা পরিবারের লোকজনদের জানায়। পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে তড়িঘড়ি চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে স্থানীয় এক ওঝার কাছে নিয়ে যায়। দীর্ঘ প্রায় ১০ ঘন্টার অধিক সময় চলে ঝাড়ফুঁক। এরপর ওই গৃহবধূ নাকে সুরে কথা বলতে থাকে, চোখের পাতা পড়ে যায়, বমি বমি ভাব ও পেটে যন্ত্রণা শুরু হয়। এক কথায় মৃত্যু শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা।

এই পরিস্থিতিতে পরিবারের লোকজন তাকে ওঝার কাছ থেকে শুক্রবার সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যায় চিকিৎসার জন্য।সেই মুহূর্তে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ছিলেন ডাঃ নিরঞ্জন কুমার বসু ও দীনেশ মন্ডল। তৎপরতার সাথে চিকিৎসা শুরু করেন তারা। রোগীকে দেওয়া হয় সাপে কামড়ানোর প্রতিষেধক এভিএস ৩০ ভায়াল। গৃহবধূর শারীরিক পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হলে সিসিইউতে স্থানান্তরিত করা হয়। ভাগ্য সহায় হওয়ায় বরাত জোরে সিসিইউতে একটি মাত্র বেড খালি ছিল। ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের সিসিইউ বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ সৌমি মুখার্জি ও সৌভিক নায়েকের তত্বাবধানে সাক্ষাৎ মৃত্যুর মুখ থেকে তাকে বাঁচানোর লড়াই শুরু হয়।মৃতপ্রায় গৃহবধূকে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়। ঘন্টা দুই পর চিকিৎসায় সাড়া দিতে থাকেন ওই গৃহবধু। হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসক ও চিকিৎসায় যুক্ত কর্মীরা।

ঘটনা প্রসঙ্গে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের সর্প বিশেষঞ্জ চিকিৎসক ডাঃ সমরেন্দ্র নাথ রায় জানিয়েছেন, ‘কালাচ সাপ এশিয়া মহাদেশের মধ্যে তীক্ষ্ণ বিষধর ও ফণাহীন সাপ। যাকে সাপ কামড় দিয়েছে তিনি ওঝা গুণীনের দ্বারস্থ হয়ে প্রায় ১০ ঘন্টা সময় অতিবাহিত করেছেন।মৃতপ্রায় অববস্থায় ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে তাকে নিয়ে আসা হয় চিকিৎসার জন্য। সেই মুহূর্তে সিসিইউতে বেড খালি না থাকলে ওই তার মৃত্যু নিশ্চিত ছিল। তারপর যদি তাকে ক্যানিং থেকে স্থানান্তরিত করা হতো তাহলে, যে হাসপাতালে সিসিইউ এবং ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা রয়েছে সেখানেই পাঠাতে হতো। আর তা হতো সময় সাপেক্ষ। ফলে তার মৃত্যু নিশ্চিত ছিল। ভাগ্য সহায় থাকার জন্য এবং চিকিৎসকদের যুদ্ধকালীন অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য সুস্থ হওয়ার পথে ওই গৃহবধূ।’

ক্যান্সার আক্রান্ত ওই গৃহবধূর মা বাসন্তী মাহাতো জানিয়েছেন, ‘বুঝতাম না বলেই গুণীনের দ্বারস্থ হয়েছিলাম। আর কোনো দিনইও গুণীনের কাছে যাবো না। গুণীনের কাছে গেলে সব শেষ হয়ে যাবে। ডাক্তার যে জীবন্ত ভগবান তার প্রমাণ পেলাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.