লি কুনশিনের অটোবাওগ্রাফি “মাও’স লাস্ট ডান্সার” এর একটি অংশে ( লি কে তখন ধরে আনা হয়েছে মাও-এর চতুর্থ স্ত্রীর আবদার মেটাতে- একটা বিশ্ববিখ্যাত ব্যালে দল বানানোর কারখানায় পরিবারের ইচ্ছা অনিচ্ছাকে বিলকুল পাত্তা না দিয়ে।) দিদিমনি ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের সাথে ক্লাসরুমে কথপোকথন শুরু করছে এইভাবে-
“তিনি আমাদের পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করলেন। একটু থেমে তিনি মাও-এর একটা ছবি দেখিয়ে বললেন – ইনি কে জানো?
সবাই সমস্বরে বললো – চেয়ারম্যান মাও। চেয়ারম্যান মাও।
হ্যাঁ, আমাদের চেয়ারম্যান মাও। প্রতিদিন ক্লাস শুরুর আগে তার ছবিকে ভক্তিভরে অভিবাদন করবে। আমরা সবাইমিলে তার দীর্ঘজীবন কামনা করবো কেননা তার দয়াতেই আজ আমরা এখানে। “
এইরকম ক্লাসরুম আপনারা চান? যেখানে স্থানীয় সংস্কৃতি ধ্বংস করে চাপিয়ে দেওয়া হয় নতুন অবতারের প্রতিমা। লি কুনশিন একজন বিশ্ববিখ্যাত ব্যালে ডান্সার । তার আত্মজীবনীতেই বলা আছে তার দাদুকে মৃত্যুর পর কবর দেবার জন্যে পার্টির হাতপা ধরতে হয়েছিল তার পরিবারের লোকজনকে কারণ পার্টি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল – এবার থেকে মৃতদেহ দাহ করা হবে। নিজস্ব কাল্ট ছেড়ে গ্রহণ করতে হবে পার্টির কাল্ট । করতে হবে মানে আপনাকে বাধ্য করা হবে। প্রকৃতপক্ষে লি’র গ্রামে তার দাদুর কবরই ছিল গ্রামের শেষ সমাধী। ভাবুন এই সমাজব্যবস্থা আপনার পছন্দ ?
সোলোভটস্কি দ্বীপের প্রাচীন খ্রীষ্টিয় লাইব্রেরি ধ্বংস করে মহান লেনিনের নির্দেশে সেখানে গড়ে উঠেছিল সোভিয়েত লেবার ক্যাম্প্( ঐ লেবার ক্যাম্পই ছিল মাদার অফ স্ট্যালিন’স্ গুলাগ।) সেখানকার একটি প্রাচীন যীশুর ছবিকে ভেঙে দিয়ে ঐ জায়গায় রাখা হয়েছিল লেনিনের প্রতিকৃতি। ভাবুন কোনদিকে দাঁড়াবেন? কমিউনিস্ট পশুখামারে মধ্যে একদল হিপোক্রিট , ব্রেন ওয়াশড্ পশুর সাথে নাকি তাদের উল্টোদিকে , মুক্ত গণতান্ত্রিক প্রান্তরে?
এবার দেশে ফিরুন। লক্ষ্য করুন বামপন্থী প্রাক্তন ছাত্রনেত্রী শেহলা রশিদকে। হাজার হাজার ছাত্র যুবকে “মনুবাদ সে আজাদী” দেবার স্বপ্ন দেখানো কমরেড শাহেলা রশিদের মনের গোপনে কোন ইচ্ছা সযত্নে রক্ষিত আছে পরম আদরে। তার মনুবাদ থেকে আজাদী চায় কিন্তু “হিজাববাদ” তার আপন। হিজাবের সাথে নারীস্বাধীনতার কোন বিরোধ তার চোখে পড়েনা। শেহলা রশিদরা আপনাকে, আপনার বাড়ির ছোটছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে যেতে চায় কোন ভারতবর্ষে ? ভাবুন। এক্ষুনি ভাবুন। অলরেডি অনেক দেরি হয়ে গেছে। আরো দেরি করলে কিন্তু আপনি আর শ্লোগান তোলারও সুযোগ পাবেননা- পার্টিরাজ সে আজাদী। লেবার ক্যাম্পসে আজাদী। ইউটোপিয়া সে আজাদী। জিহাদীসে আজাদী। হিজাব বাদ সে আজাদী।
কেননা সেই ভারত আজকের মতো গণতান্ত্রিক থাকবেনা কোনমতেই। কোথাও থাকেনি- দেখে নিন। কানাইয়া কুমার, শাহেলা রাশিদরা শ্লোগানের যে গণতান্ত্রিক অধিকার এঞ্জয় করে এই ভারতে সেই ভারতে কিন্তু বিরুদ্ধ মত নিশ্চিত ভাবে হারাম হবে। ইতিহাস গাওয়া।
জয়ন্ত সিংহ