একের পর এক অভিযোগ উঠে আসছে আড়িয়াদহের ‘ত্রাস’ জয়ন্ত সিংহ ও তার শাগরেদদের বিরুদ্ধে। গ্রেফতারের পরে পুলিশি হেফাজতে থাকলেও ‘জায়ান্ট’-এর আচরণে কার্যত কোনও পরিবর্তন নেই। মঙ্গলবার ব্যারাকপুর আদালতে ঢোকার সময়েও তার চোখেমুখে এতটুকু উদ্বেগের ছাপ ছিল না। বরং সমস্ত প্রশ্নের সামনে নির্লিপ্ত থেকে নিজের ‘বাহুবলী’ মেজাজই ধরে রাখল জয়ন্ত!
বেলঘরিয়া থানার হেফাজতে থাকা জয়ন্ত ও তার ‘ডান হাত’ বলে পরিচিত সৈকত মান্না ওরফে জঙ্ঘাকে এ দিন নিজেদের হেফাজতে নিতে চেয়ে আদালতে আবেদন করে দক্ষিণেশ্বর থানার পুলিশ। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১১১ নম্বর (সংগঠিত অপরাধ) ধারায় ওই দু’জনের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করে, ১০ দিনের পুলিশি হেফাজতের আবেদন করা হয়েছিল। ব্যারাকপুর মহকুমা আদালতের বিচারক মণিকা চট্টোপাধ্যায় আট দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। সূত্রের খবর, জয়ন্ত ও জঙ্ঘার বিরুদ্ধে আগে বিভিন্ন সময়ে যে সমস্ত অভিযোগ দায়ের হয়েছিল, সে গুলিকেই একত্রিত করে নতুন আইনের ওই ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
জয়ন্ত-গ্যাংয়ের একের পর এক যে সব ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে, তার মধ্যে একটিতে দেখা গিয়েছিল এক নাবালককে যৌনাঙ্গে সাঁড়াশি দিয়ে চেপে অত্যাচার করছে প্রসেনজিৎ দাস ওরফে লাল্টু। পুলিশি হেফাজতে থাকা জয়ন্তের ওই শাগরেদকেও এ দিন আদালতে হাজির করানো হয়। আইনজীবী মাধব চট্টোপাধ্যায় আদালতে দাবি করেন, ২০১৯ সালের ওই ভিডিয়োর পক্ষে কোনও তথ্যপ্রমাণ পুলিশ জোগাড় করতে পারেনি। ভিডিয়োয় যাকে মারা হচ্ছে বলে দেখা যাচ্ছে, তাকেও পুলিশ খুঁজে পায়নি। সেই সময়ের কোনও অভিযোগও নথিভুক্ত নেই। তাই প্রসেনজিতের জামিনের আবেদন করেন মাধব। পাল্টা সরকারি আইনজীবী যদুনাথ ঘোষ তদন্ত প্রক্রিয়া চলছে জানিয়ে জামিনের বিরোধিতা করেন। দুই পক্ষের কথা শোনার পরে বিচারক ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রসেনিজৎকে অন্তর্বর্তিকালীনজামিন দেন।
যদিও এই জামিনের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন ব্যারাকপুরের নগরপাল অলোক রাজোরিয়া। তিনি বলেন, “ভিডিয়োটিতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে নির্যাতিত এক জন নাবালক। এবং তাকে অত্যাচার করা হচ্ছে। আর ওই ভিডিয়োটি বিকৃত নয়। তাই প্রসেনজিতের জামিন খারিজের জন্য অতিরিক্ত জেলা দায়রা বিচারকের কাছে আবেদন করব।” আজ, বুধবারই সেই আবেদন করার কথা ব্যারাকপুর পুলিশের। আদালত সূত্রের খবর, আড়িয়াদহে মা ও ছেলেকে রাস্তায় ফেলে পেটানোর ঘটনায় ইতিমধ্যেই জয়ন্ত-সহ মোট ন’জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। সেই ঘটনায় নতুন করে যুক্ত করা সুমন দে-কে এ দিন সাত দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মা-ছেলেকে পেটানোর ঘটনা এবং তালতলা ক্লাবের মধ্যে চ্যাংদোলা করে মারধরের ঘটনায় বাকি ৯ অভিযুক্ত (জয়ন্ত ও সৈকত বাদে) জেল হেফাজতে রয়েছে।