করিমপুরে উপনির্বাচন চলাকালীন বিজেপি প্রার্থী জয়প্রকাশ মজুমদারকে নিগ্রহ করার বিষয়টি নিয়ে সংসদে সোচ্চার হবে বিজেপি। সোমবার এমনটাই জানালেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা মুকুল রায়। ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় ১০ জনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ জানিয়েছে বিজেপি রাজ্য নেতৃত্ব। এই বিষয়ে দিল্লিতে মুখ্য নির্বাচন কমিশনকে মেল মারফত অভিযোগ জানানো হয়েছে বলেও জানান মুকুল রায়।
পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ এনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন এই হেভিওয়েট বিজেপি নেতা। উপনির্বাচনের আগে মুখ্যমন্ত্রী করিমপুর,খড়গপুর এবং কালিয়াগঞ্জের জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারদের ‘হুমকি’ দিয়েছেন বলেও চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করেন তিনি।
সোমবার করিমপুরের এই ঘটনার প্রতিবাদে রাজ্যের বহু জায়গায় পথে নামেন বিজেপি সমর্থকেরা। রাস্তা অবরোধ করে প্রতিবাদ করেন তাঁরা। এই ধরনের হামলা ‘তৃণমূলের রাজনৈতিক দেউলিয়াপনার’ উদাহরণ বলেও অভিযোগ জানায় রাজ্য বিজেপির নেতারা।
২০২১ সালে বিধানসভা ভোটের আগে নিজেদের শক্তি মাপতে এই তিন উপনির্বাচনকেই পাখির চোখ করেছিল বিজেপি-তৃণমূল দুই পক্ষই। এই উপনির্বাচন ঘিরে ক্রমশই উত্তাপ বাড়ছিল রাজ্য-রাজনীতিতে.
সোমবার, উপনির্বাচনে শুরুটা শান্তিপূর্ণ হলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিভিন্ন জায়গা থেকে অভিযোগ আসতে শুরু হয়। ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে গিয়ে নদিয়ার করিমপুরে দুষ্কৃতীদের হাতে নিগৃহীত হন বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার। করিমপুর কেন্দ্রে সকাল থেকেই বিক্ষিপ্তভাবে অশান্তির অভিযোগ আসছিল। অশান্তির খবর পেয়ে করিমপুরের পিপুলখোলা প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের সামনে হাজির হন জয়প্রকাশবাবু।
অভিযোগ ওই কেন্দ্রে ঢোকার সময়ে তাঁকে বাধা দেয় বেশ কিছু ব্যক্তি। ভিতরে ঢুকে তিনি দেখেন প্রিসাইডিং অফিসারের কাছে রয়েছে দুটি মোবাইল ফোন। যা নির্বাচনী বিধি বিরুদ্ধ। এছাড়াও বুথের পাশেই তিনি দেখতে পান ১০-১২জন ব্যক্তি উনুন জ্বালিয়ে রান্না করছেন। অভিযোগ এই বিষয়ে প্রতিবাদ করতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে একদল ব্যক্তি। টেনে হিঁচড়ে তাঁকে বুথের বাইরে আনা হয়। এরসঙ্গেই চলতে থাকে তুমুল মারধর। প্রকাশ্যে পুলিশ-আধাসেনার সামনেই মাটিতে ফেলে শারীরিক নিগ্রহ করা হয় তাঁকে। লাথি মেরে রাস্তার পাশের ঝোপে ফেলে দেওয়া হয় এই বিজেপি প্রার্থীকে। এই ঘটনা ক্যামেরাবন্দি হয়ে যায়। এই নিগ্রহের ঘটনা সামনে আসতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন বিজেপি নেতারা।
এই হামলার পরে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘করিমপুরে আমাদের প্রার্থীকে হেনস্থার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এই ধরনের দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা নির্বাচন কমিশনে নালিশ জানাব।আসলে অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে টিকে থাকতে গিয়েই এমন মরিয়া হয়ে উঠেছে তাঁরা।’
অভিযোগ হামলাকারীরা প্রত্যেকেই তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী। জয়প্রকাশ মজুমদারের উপর এই হামলার পরেই দায় ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করে তৃণমূল। জয়প্রকাশ মজুমদার আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাটি পুরোটাই মানুষের সমবেদনা আদায়ে বিজেপির মস্তিষ্কপ্রসূত ‘সাজানো ঘটনা’ বলে দাবি করেন তৃণমূলের নদিয়া জেলার পর্যবক্ষেক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি পাল্টা অভিযোগ করেন, সকাল থেকেই ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন জয়প্রকাশ মজুমদার। অশান্তি পাকানোর চেষ্টা করেন তিনি।
এই প্রসঙ্গে তৃণমূল নেত্রী মহুয়া মিত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘আমি এই প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করব না। বিজেপির কোনও নেতাদের সঙ্গে আমি এই বিষয়ে কথা বলতে নারাজ।’