‘পুলিশ সুপারকে ফোনে হুমকি দিয়েছেন মমতা’, বিস্ফোরক অভিযোগ মুকুলের

উপনির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী জয়প্রকাশ মজুমদারকে শারীরিক নিগ্রহের প্রতিবাদে ইতিমধ্যেই দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের সদর দফতরে অভিযোগ জানিয়েছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা মুকুল রায়। সূত্রের খবর, মুখ্য নির্বাচনী কমিশনারকে মেল মারফত এবং উপ মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিককে ফোন করে এই বিষয়ে নালিশ জানিয়েছেন তিনি।

সোমবার বিকেলেই একটি সাংবাদিক সম্মেলন করেন মুকুল রায়। এই সাংবাদিক সম্মেলনে উপনির্বাচনে অবাধ সন্ত্রাস এবং পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ আনেন তিনি। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও পুলিশকে ‘হুমকি’ দেওয়ার অভিযোগ আনেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, উত্তরবঙ্গ সফরে হেলিকপ্টারে যাওয়ার সময়ে পুলিশকর্মীদের থেকে ফোন নিয়ে তিনি করিমপুর,খড়গপুর এবং কালিয়াগঞ্জের পুলিশ সুপার এবং জেলা শাসককে ফোন করে হুমকি দেন।

এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আজকের ন্যক্কারজনক ঘটনা আমি দিল্লির নির্বাচন কমিশনে জানিয়েছি। নদিয়া জেলার পুলিশ সুপার এবং জেলা শাসকের অপসারণের দাবি জানিয়েছি। আমি এই খবর পেয়েছি এই উপনির্বাচনের আগে উত্তরবঙ্গ সফরে যাওয়ার সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর নিরাপত্তায় থাকা পুলিশ আধিকারিকদের কাছ থেকে ফোন নিয়ে নদিয়া জেলার পুলিশ সুপার এবং জেলা শাসককে হুমকি দিয়েছিলেন। এই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না।’

তবে, এই অশান্তি ঘটলেও তিনটি উপনির্বাচনেই তাদের দল বিপুল ভোটে জিতবেন বলে আশাবাদী মুকুল। তিনি বলেন, ‘তৃণমূল যতই অশান্তি পাকানোর চেষ্টা করুক। মানুষ আমাদের পাশে আছেন। আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলছি আমরা জিতব।’

প্রসঙ্গত, সোমবার নদিয়ার করিমপুরে দুষ্কৃতীদের হাতে নিগৃহীত হন বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার। করিমপুর কেন্দ্রে সকাল থেকেই বিক্ষিপ্ত অশান্তির খবর আসছিল। অশান্তির খবর পেয়ে করিমপুরের পিপুলখোলা প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের সামনে হাজির হন জয়প্রকাশবাবু। অভিযোগ ওই কেন্দ্রে ঢোকার সময়ে তাঁকে বাধা দেয় বেশ কিছু ব্যক্তি। ভিতরে ঢুকে তিনি দেখেন প্রিসাইডিং অফিসারের কাছে রয়েছে দুটি মোবাইল ফোন। যা নির্বাচনী বিধি বিরুদ্ধ।

এছাড়াও বুথের পাশেই তিনি দেখতে পান ১০জন ব্যক্তি উনুন জ্বালিয়ে রান্না করছেন। অভিযোগ এই বিষয়ে প্রতিবাদ করতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে একদল ব্যক্তি। টেনে হিঁচড়ে তাঁকে বুথের বাইরে আনা হয়। এরসঙ্গেই চলতে থাকে তুমুল মারধর। প্রকাশ্যে পুলিশ-আধাসেনার সামনেই মাটিতে ফেলে শারীরিক নিগ্রহ করা হয় তাঁকে। লাথি মেরে রাস্তার পাশের ঝোপে ফেলে দেওয়া হয় এই বিজেপি প্রার্থীকে। এই ঘটনা ক্যামেরাবন্দি হয়ে যায়। এই নিগ্রহের ঘটনা সামনে আসতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন বিজেপি নেতারা।

এই হামলার পরে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘করিমপুরে আমাদের প্রার্থীকে হেনস্থার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এই ধরনের দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা নির্বাচন কমিশনে নালিশ জানাব।আসলে অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে টিকে থাকতে গিয়েই এমন মরিয়া হয়ে উঠেছে তাঁরা।’

অভিযোগ হামলাকারীরা প্রত্যেকেই তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী। জয়প্রকাশ মজুমদারের উপর এই হামলার পরেই দায় ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করে তৃণমূল। জয়প্রকাশ মজুমদার আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাটি পুরোটাই মানুষের সমবেদনা আদায়ে বিজেপির মস্তিষ্কপ্রসূত ‘সাজানো ঘটনা’ বলে দাবি করেন তৃণমূলের নদিয়া জেলার পর্যবক্ষেক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি পাল্টা অভিযোগ করেন, সকাল থেকেই ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন জয়প্রকাশ মজুমদার। অশান্তি পাকানোর চেষ্টা করেন তিনি।

এই প্রসঙ্গে তৃণমূল নেত্রী মহুয়া মিত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘আমি এই প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করব না। বিজেপির কোনও নেতাদের সঙ্গে আমি এই বিষয়ে কথা বলতে নারাজ।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.