আর কয়েকটা দিন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টের পরই শেষ হয়ে যাবে জেমস অ্যান্ডারসনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটজীবন। বুধবার থেকে শুরু হবে দু’দলের প্রথম টেস্ট। তার আগের দিন ৪১ বছরের জোরে বোলার বলেই দিলেন, অবসর নেওয়ার কোনও ভাবনা তাঁর ছিল না।
দেশের হয়ে শেষ ম্যাচ খেলতে নামার আগে বিতর্ক তৈরি করে দিলেন অ্যান্ডারসন। তাঁর ইঙ্গিত, আরও কিছু দিন টেস্ট খেলার ইচ্ছা ছিল। অ্যান্ডারসনের দাবি, ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর রব কি, টেস্ট দলের অধিনায়ক বেন স্টোকস এবং কোচ ব্রেন্ডন ম্যাকালামের সঙ্গে বৈঠকের আগে অবসর নিয়ে ভাবেননি। পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন।
অ্যান্ডারসন বলেছেন, ‘‘আমার তো মনে হয় এখনও যথেষ্ট ভাল বল করি। আগের মতোই বল করতে পারি। এটাও ঠিক, একটা সময় থামতেই হয়। এখন না হলেও এক বা দু’বছরের মধ্যে অবসর নিতেই হত। আসলে আমাকে একটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। সিদ্ধান্তটা আমাকে মেনে নিতে হয়েছে। দু’মাস ধরে বিষয়টার সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছি। এই সিদ্ধান্তটা কেন নেওয়া হয়েছে, সেটাও বুঝেছি। দল এবং কর্তারা যেটা চাইছেন, সেটাই হওয়া উচিত।’’
৭০০ টেস্ট উইকেটের মালিককে কি অবসর নিতে বাধ্য করানো হয়েছে? অ্যান্ডারসন বলেছেন, ‘‘এ ভাবে বলা কঠিন। তবে আমাকে একটা রাস্তা বেছে নিতে হয়েছে। ভাল পারফর্ম করে ক্রিকেটকে বিদায় জানাতে চাই। এটাই এখন আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সত্যি বলতে অবসর নেওয়ার ভাবনা আমার ছিল না। গত ভারত সফরেও যথেষ্ট ফিট ছিলাম। নিজের পারফরম্যান্সেও সন্তুষ্ট ছিলাম। আমার মতো সিনিয়র বোলার প্রতিটি টেস্ট খেলবে না। এটাই প্রত্যাশিত। বিশ্রামটাও প্রয়োজন।’’
গত সপ্তাহেই ল্যাঙ্কাশায়ারের হয়ে ৭ উইকেট নিয়েছেন ৪১ বছরের ক্রিকেটার। শেষ টেস্ট খেলতে নামার আগে বুঝিয়ে দিয়েছেন, ফুরিয়ে যাননি। অ্যান্ডারসন বলেছেন, ‘‘ল্যাঙ্কাশায়ারের হয়ে ম্যাচটা খুব উপভোগ করেছি। ল্যাঙ্কাশায়ারের হয়ে খেলতে সব সময়ই ভাল লাগে। গত ২০ বছর জাতীয় দলের হয়ে ব্যস্ততার জন্য কাউন্টি ক্রিকেটে বেশি খেলার সুযোগ হয়নি।’’
তাঁর এই পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি স্টোকসের। প্রবীণ সতীর্থকে ফোন করে অভিনন্দন জানিয়েছেন ইংল্যান্ডের টেস্ট অধিনায়ক। সে প্রসঙ্গে অ্যান্ডারসন বলেছেন, ‘‘স্টোকস ফোন করেছিল। আমাকে বলল, ‘তুমি কি সত্যিই ৭ উইকেট নিয়েছ?’’ প্রবীণ সতীর্থের পারফরম্যান্স নিয়ে স্টোকস বলেছেন, ‘‘অ্যান্ডারসন এখনও দুর্দান্ত বল করছে। আমাদের আগামী অ্যাশেজ়ের কথা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। ওর অভাব অনুভূত হবেই। বেশ কয়েক জন ভাল তরুণ বোলার উঠে এসেছে। ওরা প্রতি দিন উন্নতি করছে। ওদের বেশি করে ম্যাচ খেলানোর কথা ভাবা হয়েছে। যাতে অস্ট্রেলিয়া সফরের আগে ওরা যথেষ্ট অভিজ্ঞ এবং দক্ষ হয়ে উঠতে পারে।’’
স্টোকসও পরোক্ষে মেনে নিয়েছেন, ভবিষ্যতের কথা ভেবে অ্যান্ডারসনকে অবসর নিতে এক রকম বাধ্যই করানো হয়েছে। ইংল্যান্ডের সংবাদ মাধ্যমে আগেই প্রকাশিত হয়েছে, অ্যান্ডারসনের অবসরের পরিকল্পনা মূলত ম্যাকালামের। ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট খেলে অবসর নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। অভিজ্ঞ ক্রিকেটারকে জানিয়ে দেওয়া হয়, ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্ট থেকে তাঁকে আর বিবেচনা করা হবে না। স্বভাবত সম্মানজনক বিদায়ের পথই বেছে নিয়েছেন অ্যান্ডারসন।