চাকরি পাননি, আবাসও পাননি! তবু অলিম্পিক্স দলের ‘মহারাষ্ট্রীয়’ আভা ফিরতে চান বাংলাতেই

প্যারিসে আগামী ২৬ জুলাই থেকে শুরু হচ্ছে অলিম্পিক্স। ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করবেন বাংলার মেয়ে ২৯ বছরের আভা খাটুয়া। আগামী ১ অগস্ট ট্র‌্যাক অ‌্যান্ড ফিল্ড অ‌্যাথলেটিক্স শুরু হবে। সেখানেই শটপাট ইভেন্টে লড়বেন তিনি। গত শনিবার পাটিয়ালা গিয়েছেন আভা। সেখানেই জাতীয় ক্যাম্পে অলিম্পিক্সের প্রস্তুতি সারবেন তিনি।

মুম্বইয়ে কাস্টমসে কর্মরত আভা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার নারায়ণগড়ের খুড়শি গ্রামের বাসিন্দা। লক্ষ্মীকান্ত খাটুয়ার মেয়ে আভা। তিনি ভাগচাষী। মেয়েকে পড়ানো এবং প্রশিক্ষণ দেওয়ার ক্ষেত্রে সে ভাবে সহযোগিতা করতে পারেননি। কিন্তু সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন চকমুকুন্দ বাসন্তী বিদ্যাপীঠের ক্রীড়া শিক্ষক সাধন প্রামাণিক। ২০০৯ সালে যখন আভা অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী তখন তিনিই জেলার অ্যাথলেটিক্স প্রশিক্ষক সুব্রত পানের কাছে আভাকে ভর্তি করান। মেদিনীপুরে সুব্রতবাবুর বাড়িতে থেকে সপ্তাহে ২-৩ দিন অনুশীলন করে গ্রামে ফিরতেন আভা। দৌড়, জ্যাভলিন থ্রো, হাইজাম্প ও লংজাম্প প্রশিক্ষণ নিতেন।

২০১০ সালে প্রথম জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় পদক পান আভা। ২০১১ সালে মাধ্যমিক পাশ করে গোপীনাথপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। উচ্চমাধ্যমিকের পর বেলদা কলেজে পড়াশোনা করেন। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে অন্ধ্রপ্রদেশে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতায় হেপ্টাথলন বিভাগে সোনা পান আভা। তাঁর হাত ধরেই সর্বভারতীয় স্তরে প্রথম সোনা পায় বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়।

এর পরে আভা হেপ্টাথেলন ছেড়ে শটপাটে মন দেন। আভার প্রথম হেপ্টাথেলন প্রশিক্ষক সুব্রত বলেন, “প্যারিসে নিজের সেরা পারফর্ম্যান্স করে ফিরুক আভা।” মেদিনীপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক সঞ্জিত তোরই বলেন, “আভা জেলার নাম উজ্জ্বল করেছে। জেলাবাসীর তরফে ওঁকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। ওঁর জন্য আমরা সব রকম সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেব।”

সাইয়ে আভার প্রশিক্ষক ছিলেন সুভাষ সরকার। ইউক্রেনের ইউরি মেনে কোভার কাছেও কয়েক মাস প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন তিনি। জাতীয় ক্যাম্পের প্রশিক্ষক, সাইয়ের প্রশিক্ষক ও ফেডারেশনের কর্তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন আভা। বর্তমানে ওয়ার্ল্ড র‌্যাঙ্কিং উইমেন শটপাটে ২৩ নম্বরে রয়েছেন আভা।

এই রাজ্যের মেয়ে হয়েও তিনি প্রতিনিধিত্ব করবেন মহারাষ্ট্রের হয়ে। এই রাজ্যের হয়ে খেলতে না পারার আক্ষেপ আভার কথায় ফুটে উঠেছে। নিজেও অন্তর থেকে বঙ্গের হয়ে খেলতে চান। তিনি বলেন, “প্যারিস অলিম্পিক্সে যাওয়ার সুযোগ পাওয়ায় আনন্দ হচ্ছে। এক জন অ্যাথলিট যখন খেলাধুলো শুরু করেন তখন তার স্বপ্ন থাকে অলিম্পিক্স। আমারও সেই লক্ষ্য ছিল। আমি মহারাষ্ট্রের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করছি। শুরুটা করেছিলাম পশ্চিমবঙ্গে। ২০০৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের হয়ে খেলেছি।”

এর পরই আভার গলায় অভিমান। বললেন, “সরকারি চাকরির জন্য অনেক বার চেষ্টা করেছি। কিন্তু স্পোর্টস কোটায় কোনও সুযোগ-সুবিধা পাইনি। বাধ্য হয়ে মহারাষ্ট্রে কাস্টমসে কাজে যোগ দিয়েছিলাম ২০১৯ সালে। ওখান থেকে বলা হয়েছিল মহারাষ্ট্রের হয়ে খেলতে হবে। আমার কাছে বিকল্প কোনও পথ ছিল না। তাই মহারাষ্ট্রের হয়েই খেলা শুরু করি। আমি এখনও বাংলায় ফিরতে চাই। মাটির বাড়িতে থাকি। সরকারি বাড়ির জন্য আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু পাইনি।”

বাবা লক্ষ্মীকান্ত বলেন, “সুযোগ পেয়েছে খুব ভাল লাগছে। বাংলার মেয়ে হয়েও মহারাষ্ট্রের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে যাচ্ছে। কারণ, বাংলায় সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে না। মহারাষ্ট্র থেকে সুযোগ পাওয়ায় সেখানের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছে। আমাদের রাজ্য থেকে সুযোগ-সুবিধা পায়নি। বাংলার মেয়ের চাকরির কোনও ব্যবস্থা যদি করে সরকার। যাতে বাংলায় ফিরে আসুক মেয়ে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.