কোপা আমেরিকা থেকে বিদায় ব্রাজিলের। কোয়ার্টার ফাইনালে ১০ জনের উরুগুয়েকে হারাতে পারল না ব্রাজিল। ৭৪ মিনিটের মাথায় লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন উরুগুয়ের নানডেজ়। তবু গোল করতে পারল না ব্রাজিল। নির্ধারিত ৯০ মিনিটে গোল করতে পারেনি কোনও দলই। টাইব্রেকারে ৪-২ ব্যবধানে জিতে সেমিফাইনালে চলে গেল উরুগুয়ে।
৯০ মিনিটে গোল করার এবং পরে টাইব্রেকারের ব্যর্থতাই শেষ করে দিল ব্রাজিলের আশা। এ বারের কোপার নিয়মে অতিরিক্ত সময় নেই। ৯০ মিনিটে খেলা শেষ হওয়ার পর সরাসরি টাইব্রেকার হচ্ছে। টাইব্রেকারে প্রথম শট নেয় উরুগুয়ে। গোল করতে ভুল করেননি ভালভার্দে। ব্রাজিলের পক্ষে প্রথম শট নিতে আসেন মিলিটায়ো। তাঁর শট রুখে দেন উরুগুয়ের গোলরক্ষক রোসেট। তাতেই চাপে পড়ে যায় ব্রাজিল। এর পর উরুগুয়েকে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে দেন বেন্টাকুর। ব্রাজিলের পক্ষে ১-২ করেন পেরেরা। আবার উরুগুয়ে ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায় অ্যারাসকেটার গোলে। ব্রাজিলের ডগলাস লুইজ়ের শট লাগে পোস্টে। এর পর উরুগুয়ের জিমেনেজ়ের শট আটকে ব্রাজিলের আশা জিইয়ে রাখেন অ্যালিসন। ব্রাজিলের পক্ষে ২-৩ করেন মার্টিনেলি। উগার্তে দলকে ৪-২ ব্যবধানে এগিয়ে দিতেই ছিটকে গেল ব্রাজিল।
রড্রিগোকে পিছন থেকে ফাউল করেছিলেন নানডেজ়। প্রথমে রেফারি তাঁকে হলুদ কার্ড দেখান। পরে রড্রিগোর আঘাতের গুরুত্ব বুঝে ‘ভিএআর’এর সাহায্য নিয়ে লাল কার্ড দেখান নানডেজ়কে। ১০ জনের উরুগুয়েকে পেয়ে আক্রমণের ঝাঁজ কিছুটা বাড়ায় ব্রাজিল। তবু মার্সেলো বিয়েলসার ফুটবল কৌশলের বিরুদ্ধে বিশেষ সুবিধা করতে পারেনি তারা। বিক্ষিপ্ত কিছু ঝলক ছাড়া গোটা ম্যাচে কিছুটা ছন্নছাড়া দেখিয়েছে ব্রাজিলকে। মাঝমাঠ কেন্দ্রিক লড়াইয়ে সুবিধা করতে পারল না ব্রাজিল।
প্রথম থেকেই উরুগুয়ে কিছুটা গাজোয়ারি এবং রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলতে শুরু করে। ব্রাজিলের আক্রমণগুলি বক্সের বাইরেই রুখে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল উরুগুয়ে শিবির। ৫ মিনিটের মাথায় প্রতিপক্ষের বক্সের মধ্যে সুবিধাজনক জায়গায় বল পেয়েছিলেন ব্রাজিলের তরুণ স্ট্রাইকার এনড্রিক। কিন্তু কাজে লাগাতে পারেননি। দু’দলই মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করে ম্যাচের শুরু থেকেই। ব্রাজিল আগ্রাসী মানসিকতা নিয়ে নামলেও উরুগুয়ের লক্ষ্য ছিল আচমকা প্রতি-আক্রমণে উঠে ব্রাজিলকে বিপদে ফেলা। ১৪ মিনিটের মাথায় ব্রাজিলকে এগিয়ে দিতে পারতেন রাফিনা। ১৬ মিনিটের মাথায় এনড্রিকের বল নিয়ে বিপজ্জনক থামান ভালভার্দে। কড়া ট্যাকলে ব্রাজিল ফাউলের দাবি জানালেও কান দেননি রেফারি। তিনি খেলা চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। প্রতি-আক্রমণে গোল করার মতো জায়গায় পৌঁছে গিয়েছিলেন উরুগুয়ের পেলিস্ট্রি। যদিও তাঁর চেষ্টা সফল হয়নি।
প্রথম থেকেই উরুগুয়ের রক্ষণকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করেছেন এনড্রিক। কিন্তু তাঁর ফুটবল দক্ষতাকে ছাপিয়ে গিয়েছে উরুগুয়ের ফুটবলারদের শক্তিপ্রয়োগমূলক ফুটবল। প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডার ভিনার ভুলে ২৮ মিনিটে গোল করার সহজ সুযোগ নষ্ট করেন এনড্রিক। ৩৫ মিনিটে গোলের সুযোগ নষ্ট করে উরুগুয়েও। প্রথমার্ধে কোনও দলই আর তেমন সহজ সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। প্রথম ৪৫ মিনিটে খেলা শেষ হয় গোলশূন্য অবস্থায়।
ম্যাচের অধিকাংশ সময় বলের দখল ছিল ব্রাজিলের নিয়ন্ত্রণে। তবু উরুগুয়ের রক্ষণ ভেদ করে গোলের সুযোগ তৈরি করতে পারেনি তারা। প্রতিপক্ষের রক্ষণ ভাঙার জন্য মাঠের দুই প্রান্ত ব্যবহার করেও লাভ হয়নি। ৪-২-৩-১ ছকে দল সাজিয়েছিলেন ব্রাজিল কোচ। বার বার উরুগুয়ের বক্সে প্রায় একা হয়ে যাচ্ছিলেন এনড্রিক। ফলে সে ভাবে গোলের সুযোগ তৈরি করতে পারছিলেন না ব্রাজিলের ফুটবলারেরা। এমনকি, উরুগুয়ে ১০ জন হয়ে যাওয়ার পরও বিশেষ সুবিধা করতে পারেননি ব্রাজিল। এর মধ্যেই ৬৩ মিনিটে গোলের সুযোগ নষ্ট করেন ভালভার্দে। ব্রাজিলের বক্সে অন্তত চার জন সতীর্থ থাকা সত্ত্বেও দূর থেকে শট নেন তিনি।