৬৫ মিনিটে মাঠ ছাড়লেন রোনাল্ডো, পর্তুগালকে হারিয়ে নক আউটে জর্জিয়া, শেষ ষোলোয় তুরস্কও

পচা শামুকে পা কাটল পর্তুগালের। ইউরোর যোগ্যতা অর্জন পর্বে সবার নীচে শেষ করা জর্জিয়ার কাছে হারতে হল তাদের। আরও এক ম্যাচে গোল পেলেন না ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। রেফারির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করায় হলুদ কার্ডও দেখতে হল। ৬৫ মিনিটে রোনাল্ডোকে তুলে নিলেন পর্তুগালের কোচ। সেই সিদ্ধান্তও মানতে পারেননি সিআর৭। বিরক্তি দেখান তিনি। পর্তুগালের বিরুদ্ধে মরিয়া খেলল জর্জিয়া। ২-০ গোলে জিতে গ্রুপের তৃতীয় দল হিসাবে প্রি কোয়ার্টার ফাইনালে নিজেদের জায়গা পাকা করে নিল তারা। অবশ্য জর্জিয়ার কাছে হারলেও গ্রুপ শীর্ষে থেকেই পরের রাউন্ডে গেল পর্তুগাল।

গ্রুপের অপর খেলায় ১০ জনের চেকিয়ার বিরুদ্ধে টান টান ম্যাচে জিতল তুরস্ক। ২-১ গোলে শেষ হল খেলা। ফলে এই গ্রুপ থেকে দ্বিতীয় দল হিসাবে শেষ ষোলোয় গেল তুরস্ক। বিদায় নিল চেকিয়া।

জয় ছাড়া কোনও উপায় ছিল না জর্জিয়ার। পর্তুগালের মতো দলের বিরুদ্ধে নামলেও তারা যে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলবে তা ম্যাচের শুরুতেই বুঝিয়ে দেয় জর্জিয়া। ২ মিনিটের মাথায় পর্তুগালের ডিফেন্ডার আন্তোনিয়ো সিলভার ভুল পাস ধরে বক্সে ঢুকে বাঁ পায়ের শটে গোল করে জর্জিয়াকে এগিয়ে দেন ভিচা কারাতস্কেলিয়া।

শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে ধীরে ধীরে খেলায় ফিরতে শুরু করে পর্তুগাল। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো বক্সের কাছে ছটফট করছিলেন। এই ম্যাচে শুরু থেকেই খেলেন ফ্রান্সিস্কো কনসেসাও। ভাল সুযোগ তৈরি করছিলেন তিনি। ১৭ মিনিটের মাথায় প্রায় ৩০ গজ দূর থেকে ফ্রি কিক পায় পর্তুগাল। ভাল শট মারেন রোনাল্ডো। তাঁর ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার গতিবেগের শট ভাল বাঁচান জর্জিয়ার গোলরক্ষক।

২৯ মিনিটের মাথায় কর্নারে হেড করতে গিয়ে বক্সে পড়ে যান রোনাল্ডো। তিনি পেনাল্টির আবেদন করতে থাকেন। রেফারি তাতে কান দেননি। রোনাল্ডো প্রতিবাদ জানাতে গেলে তাঁকে হলুদ কার্ড দেখানো হয়। কয়েক মিনিট পরে আরও একটি ভাল সুযোগ পান রোনাল্ডো। তাঁর শট আটকে দেন ডিফেন্ডার। বার বার সুযোগ নষ্ট করায় মাঝে মাঝে হতাশ দেখাচ্ছিল রোনাল্ডোকে।

পর্তুগাল চাপ বাড়ালেও জর্জিয়ার রক্ষণ ভাঙা যাচ্ছিল না। মরিয়া ডিফেন্স করছিল তারা। ভাল দেখাচ্ছিল জর্জিয়ার গোলরক্ষককেও। অন্তত দু’টি ক্ষেত্রে নিশ্চিত পতন রোধ করেন তিনি। মাঝমাঠে ভুল করছিল পর্তুগাল। সেই ভুল কাজে লাগানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছিল জর্জিয়া। কারাতস্কেলিয়া খুব ভাল খেলছিলেন। তাঁকে আটকাতে সমস্যা হচ্ছিল পর্তুগালের ডিফেন্ডারদের। প্রথমার্ধে ১-০ গোলে এগিয়ে বিরতিতে যায় জর্জিয়া।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই গোল শোধ করার সুযোগ পান রোনাল্ডো। কর্নার থেকে তাঁর শট আবার আটকে দেন গোলরক্ষক। ৫০ মিনিটে জর্জিয়ার হয়ে দ্বিতীয় গোলের সুযোগ নষ্ট করেন কারাতস্কেলিয়া। তিন মিনিট পরেই আবার ভুল করেন সিলভা। লোকোসভিলিকে বক্সে ফাউল করেন তিনি। ভার দেখে রেফারি পেনাল্টি দেন। এ বার গোল করতে ভুল করেনি জর্জিয়া। ঠান্ডা মাথায় ২-০ করেন মিকাউতাজ়ে। চলতি ইউরোয় নিজের তিন নম্বর গোল করলেন তিনি।

জর্জিয়ার বিরুদ্ধে চাপে পড়ে যায় পর্তুগাল। দেখে বোঝা যাচ্ছিল না তারা ২০১৬ সালের ইউরো চ্যাম্পিয়ন দল। বাধ্য হয়ে আক্রমণে তরুণ গনসালো র‌্যামোসকে নামান কোচ। ৬৫ মিনিটে তুলে নেওয়া হয় রোনাল্ডোকে। কোচের সিদ্ধান্ত মানতে পারেননি তিনি। উঠে যাওয়ার সময় লাথি মারেন জলের বোতলে। বোঝা যাচ্ছিল, যথেষ্ট বিরক্ত হয়েছেন তিনি।

রোনাল্ডোকে তুলে নিলেও খেলার ছবি বদলায়নি। আক্রমণ বেশি করছিল জর্জিয়ায়। বোঝা যাচ্ছিল, এটা তাদের দিন। যে ভাবে প্রতিটি বলের জন্য জর্জিয়ার ফুটবলারেরা ঝাঁপাচ্ছিলেন, তা বুঝিয়ে দিচ্ছিল, জেতার ইচ্ছা থাকলে অসাধ্যসাধনও করা যায়। আরও কয়েক বার গোলের সুযোগ পেয়েছিল তারা। কিন্তু গোল করতে পারেনি। সংযুক্তি সময়ে সেমেদোর শট ভাল বাঁচেন জর্জিয়ার গোলরক্ষক। কনসেসাওয়ের শটে পা লাগাতে পারেননি গোলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পর্তুগালের দুই ফুটবলার। বোঝা যাচ্ছিল, দিন তাদের নয়। শেষ পর্যন্ত ২-০ গোলে জেতে জর্জিয়া। পরের রাউন্ডে উঠলেও এই ম্যাচে বেরিয়ে পড়ল পর্তুগালের রক্ষণের ফাঁক। এ ভাবে ভুল করলে নক আউটে সমস্যায় পড়তে হতে পারে রোনাল্ডোদের।

প্রি কোয়ার্টার জায়গা করতে হলে তুরস্কের বিরুদ্ধে জিততে হল চেকিয়াকেও। ফলে আক্রমণাত্মক খেলা শুরু করে তারা। প্রথমার্ধের শুরুতে তুরস্কই চাপে ছিল। কিন্তু অতিরিক্ত আক্রমণাত্মক খেলতে গিয়ে ভুল করেন চেকিয়ার আন্তোনিন বারাক। কয়েক মিনিটের ব্যবধানে জোড়া হলুদ কার্ড অর্থাৎ লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন তিনি। ফলে ম্যাচের ৭০ মিনিট ১০ জনে খেলতে হয় চেকিয়াকে।

১০ জনে হওয়ার পরেও চেকিয়া আক্রমণ থামায়নি। ওপেন খেলছিল তারা। ফলে দু’দলই সুযোগ তৈরি করছিল। আক্রমণ প্রতি-আক্রমণের খেলা চলছিল। ব্যস্ত থাকতে হচ্ছিল দু’দলের গোলরক্ষককেই। বিরতির আগে ভাল সুযোগ পায় চেকিয়া। জুরাসেকের শট ভাল বাঁচান গুনক। গোলশূন্য অবস্থায় বিরতিতে যায় দু’দল।

দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণের ঝাঁজ বাড়ায় তুরস্ক। তার ফলও পায় তারা। ৫১ মিনিটের মাথায় ইয়েলদিজ়ের শট ভাল বাঁচান চেকিয়ার গোলরক্ষক স্টানেক। ফিরতি বল পান কালানোগলু। তাঁর ডান পায়ের শট বাঁচাতে পারেননি স্টানেক। এগিয়ে যায় তুরস্ক।

পিছিয়ে পড়েও আক্রমণ থামায়নি চেকিয়া। তার ফল পায় তারা। ৬৬ মিনিটে তুরস্কের গোলরক্ষক বল ধরতে গিয়ে ভুল করেন। সেই ভুল কাজে লাগিয়ে গোল করে সমতা ফেরান সুচেক। তুরস্ক প্রতিবাদ করলেও ভার দেখে রেফারি জানান, গোল বৈধ। তবে ড্র করলে চেকিয়ার কোনও লাভ ছিল না। তাই তারা আক্রমণ চালিয়ে যেতে থাকে। ফলে সুযোগ পায় তুরস্কও। বক্স থেকে বক্সে আক্রমণ হচ্ছিল।

সংযুক্তি সময়ে এগিয়ে যায় তুরস্ক। প্রতি আক্রমণ থেকে চেকিয়ার বক্সে ঢুকে ডান পায়ের শটে গোল করেন টোসুন। আর ফিরতে পারেনি চেকিয়া। পর্তুগালের সমান ৬ পয়েন্ট নিয়ে পরের রাউন্ডে উঠল তুরস্ক। খেলা শেষে মাঠে ঝামেলা হয়। ধাক্কাধাক্কিতে জড়ান দু’দলের ফুটবলার ও সাপোর্ট স্টাফেরা। পরিস্থিতি সামলাতে চেকিয়ার আর এক ফুটবলারকে লাল কার্ড দেখান রেফারি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.