‘দখলদার’ উচ্ছেদে বাধা দিতে বললেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। জানিয়ে দিলেন, প্রয়োজনে তিনি নিজে বুলডোজ়ারের সামনে দাঁড়াতে রাজি আছেন। ‘দখলদার’ উচ্ছেদ করতে বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে নির্দেশ দিয়েছেন, তা ‘অমানবিক’ বলেও মন্তব্য করেছেন শুভেন্দু। তিনি জানিয়েছেন, তিনি বা তাঁর দল বেআইনি ভাবে সরকারি জমি অধিগ্রহণের পক্ষে নেই। কিন্তু রাজ্যের সর্বত্র নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই কাজ করতে হবে। এর জন্য আগে রাজ্য সরকারকে এসওপি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিয়োর) তৈরি করতে হবে বলেও দাবি করেছেন শুভেন্দু।
বুধবার বিকেলে কলকাতায় বিজেপির সদর দফতরে সাংবাদিক বৈঠক করেন শুভেন্দু। সেখানেই ‘দখলদার’ উচ্ছেদের বিরোধিতা করেন তিনি। শুভেন্দু বলেন, ‘‘বিভিন্ন পুরসভা এলাকায় মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্তদের সামান্য রোজগারের উপরে ভয়াবহ অর্থনৈতিক অবরোধ নামিয়ে আনা হয়েছে। বিজেপির তরফে এর বিরুদ্ধে আমরা প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সরকারি জমি দখলের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার যে উদ্যোগী হয়েছে, আমরা প্রথমে তা মহৎ মনে করেছিলাম। কিন্তু পরে দেখলাম, সরকারি জমি আদৌ উদ্ধার হচ্ছে না। বিশেষ কয়েকটি এলাকায় সাধারণ গরিব মানুষের ক্ষতি করা হচ্ছে। সবটাই হচ্ছে ক্যামেরার সামনে। অর্থাৎ, কাজের চেয়ে প্রচারের তাগিদ বেশি।’’
নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে শুভেন্দু আরও বলেন, ‘‘পুর এলাকায় পরিচ্ছন্নতার পক্ষে বিজেপি। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন, দার্জিলিং থেকে দিঘা, কলকাতা থেকে কাকদ্বীপ— সর্বত্র এই কাজ করা হচ্ছে কি? না কেবল বিধাননগর, হাতিবাগান-সহ উত্তর এবং দক্ষিণ কলকাতার বিশেষ কিছু এলাকায় এই অভিযান চলছে? জেলা থেকে যে গরিব মানুষেরা প্রতি দিন কলকাতায় এসে সামান্য হকারি করে পেট চালান, এটা কি শুধু তাঁদের জন্য? না গোটা রাজ্যে এ নিয়ে কোনও নীতি তৈরি হয়েছে? আমার দাবি, প্রথমে একটি এসওপি তৈরি করুন। সরকারি জমি চিহ্নিত করুন। মানুষকে নোটিস দিয়ে জমি ছাড়তে বলুন।’’
সরকারি জমি ছেড়ে দিয়ে কেউ যদি বিপদে পড়েন, তাঁদের সাহায্য করার কথাও সরকারকে বলেছেন শুভেন্দু। তাঁর কথায়, ‘‘হকার উচ্ছেদ করার পর প্রান্তিক গরিব মানুষকে বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী তো বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গায় বলেছেন, তিনি অনেককে চাকরি দিয়েছেন। এ বার কয়েক লক্ষ হকারকেও চাকরি দিন!’’ সরকারের এই অভিযানের ফলে বহু দরিদ্র মানুষ কাজ হারাচ্ছেন বলে জানান শুভেন্দু। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাবে, হয়তো তাঁরাই ছিলেন পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্য। এঁদের পাশে দাঁড়ানোর কথা বলেছেন বিরোধী দলনেতা।
শুভেন্দু বলেন, ‘‘আমরা আর এক দিন দেখব। শুক্রবারও অন্যায় ভাবে এই অত্যাচার চললে, আমরা হকারদের পাশে থাকব। প্রয়োজনে আমি নিজে বুলডোজ়ারের সামনে গিয়ে দাঁড়াব। লালবাজারের পুলিশ অন্যায় ভাবে গরিব মানুষদের ব্যবসার জিনিস তুলে নিয়ে যাচ্ছে। এটা মানবতাবিরোধী কাজ। কলকাতা-সহ বিভিন্ন পুরসভা এলাকায় তৃণমূলের চেয়ে বিজেপি বেশি ভোট পেয়েছে। এটা ওদের সেই হারের জ্বালার বহিঃপ্রকাশ। হকার উচ্ছেদ হলে সকলে বাধা দিন। আমরা পাশে থাকব। আমি আমার দলের কর্মীদেরও অনুরোধ করব। আশা করছি, মুখ্যমন্ত্রী যে অমানবিক নির্দেশ দিয়েছেন, তা দ্রুত প্রত্যাহার করবেন।’’
উল্লেখ্য, ‘দখলদার’দের সংগঠনের সঙ্গে মেয়র ফিরহাদ হাকিম এবং মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার বুধবার পুরসভায় বৈঠকে বসেছিলেন। বৃহস্পতিবার রাজ্যের আমলা, প্রশাসনিক কর্তা, কলকাতা-সহ বিভিন্ন পুলিশ কমিশনার, জেলাশাসকদের সঙ্গে দখলদার সমস্যা নিয়ে বৈঠক করবেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই বৈঠকেই ‘দখলদার’ উচ্ছেদের নির্দেশ প্রত্যাহার করতে হবে বলে দাবি করেছেন শুভেন্দু।
বিদ্যুতের বাড়তি মূল্য প্রত্যাহারের দাবি
বিদ্যুতের বর্ধিত মূল্য নিয়েও প্রতিবাদের পথে হাঁটছে বিজেপি। শুভেন্দু জানিয়ে দিয়েছেন, বিদ্যুতের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার না করা হলে তাঁরা বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করবেন। এক সপ্তাহের মধ্যে বিদ্যুতের মূল্য প্রত্যাহার করতে হবে, দাবি বিজেপির। শুভেন্দু বলেন, ‘‘আগামী সোমবার আমাদের তিন কাউন্সিলর সিইএসসি দফতরে যাবেন এবং বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহারের দাবি জানাবেন। তা করা না হলে ৮ জুলাইয়ের পর আমরা সিইএসসি অভিযানের তারিখ ঘোষণা করব। ১৫ তারিখের পর বিধাননগরের বিদ্যুৎ ভবন অভিযান হবে।’’ বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা সিইএসসিকে দুষে তিনি আরও বলেন, ‘‘আমরা রাজ্য সরকারের অনুমোদনকারী সংস্থার কাছে এই মূল্য প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। সিইএসসিকে কিছু বলছি না। কারণ তারা কর্পোরেট সংস্থা। তারা নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে তৃণমূলকে ৪০০ কোটি টাকা চাঁদা দিয়েছে। জনগণের কাছ থেকে তাদের তো টাকা তুলতেই হবে। রাজ্য সরকারের কাছে তাই আমাদের এই দাবি।’’