ঠিক ন’দিনের ব্যবধান। গত ১৮ জুন কোচবিহারে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ নগেন্দ্র রায় ওরফে অনন্ত মহারাজের সাক্ষাৎ হয়। তার পরে বুধবার অনন্তের সঙ্গে সাক্ষাৎ হল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের। যাঁর পছন্দে তিনি সাংসদ হয়েছিলেন। সংসদ ভবনে শাহ ও অনন্তের মধ্যে ঠিক কী নিয়ে কথা হয়েছে তা অবশ্য এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি। কিন্তু তৃণমূলের সঙ্গে অনন্তের ঘনিষ্ঠতার জল্পনা নতুন মাত্রা পেয়েছে।
কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় আহতদের দেখতে শিলিগুড়ি যাওয়ার পরে সেখান থেকে কোচবিহারে যান মমতা। সে দিন মদনমোহন মন্দিরে পুজো দিয়েই মমতা যান চকচকায়। সেখানে বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ অনন্তের বাড়ি। মমতাকে স্বাগত জানাতে অনন্ত রাজবংশী উত্তরীয় আর ঐতিহ্যবাহী গুয়াপান দেন মুখ্যমন্ত্রীর হাতে। এর পরেই নানা জল্পনা তৈরি হয়। বিজেপি এমন আশঙ্কাও করে যে, অনন্ত তৃণমূলে চলে যেতে পারেন। ২১ জুলাই তৃণমূলের ‘শহিদ দিবস’ পালন মঞ্চে অনন্তকে দেখা যেতে পারে বলেও জল্পনা তৈরি হয়।
সেই জল্পনার মধ্যেই বুধবার সংসদ ভবনে শাহের দফতরে অনন্তের ছবি নিয়ে নতুন ভাবনা তৈরি হয়েছে। প্রসঙ্গত, লোকসভা নির্বাচনের আগে আগে অনন্তের ইন্ধনে ‘পৃথক রাজ্য না হলে বিজেপিকে ভোট নয়’ কোচবিহারে প্রচার শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। তার প্রেক্ষিতে শাহ ফোন করেন অনন্তকে ‘ধমক’ দিয়ে ওই প্রচার বন্ধ করতে বলেন। সেই সময়েই অনন্ত বাজেট অধিবেশনের অবসরে শাহের সঙ্গে দেখা করার কথা জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘‘এখানকার মানুষ পৃথক রাজ্যের দাবি নিয়ে ক্ষুব্ধ। বাজেট অধিবেশনের সময়েই আমি শাহের সঙ্গে দেখা করে বিষয়টা উত্থাপন করেছিলাম। তখন উনি বিষয়টা দেখবেন বলে জানান। কিন্তু তার পরে এখনও পর্যন্ত কিছু হয়নি। এটা নিয়ে কারও মধ্যে ক্ষোভ জন্মেছে বা ভোট বয়কটের ডাক উঠেছে বলে আমি শুনিনি। সেটা হলেও আমার সঙ্গে তার কোনও যোগাযোগ নেই। শাহ আমাকে প্রচার বন্ধ করতে বলছেন। কিন্তু আমি যেটা জানিই না, সেটা বন্ধ করব কী করে?’’
প্রসঙ্গত, অনন্তের ‘খাস’ এলাকা কোচবিহারে এ বার হেরেছে বিজেপি। অনন্তকে পাশে নিয়ে ২০১৯ সালে ৫৪ হাজার ভোটে জয়ী নিশীথ প্রামাণিক হেরেছেন ৩৯ হাজারের ব্যবধানে। ভোটের প্রচারে অনন্তকে দেখাও যায়নি। আর ভোটপর্ব মিটতেই মমতার সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং তার পরে পরেই শাহি-বৈঠক কেন, তা নিয়ে নতুন জল্পনা তৈরি হয়েছে। রাজ্য বিজেপির অনেকে মনে করছেন, শাহের তলব পেয়েই যান অনন্ত। সেখানে কেন মমতার সঙ্গে সাক্ষাৎ সে প্রশ্ন উঠে থাকতে পারে। আবার অনেকে মনে করছেন, বাজেট অধিবেশনের মতো এ বারেও পৃথক রাজ্যের দাবি নিয়ে গিয়ে থাকতে পারেন রাজ্যসভার সাংসদ অনন্ত! অনন্তের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। নিজে থেকেও প্রকাশ্যে কিছু বলেননি তিনি।