খলনায়ক থেকে নায়ক হয়েছিলেন এক মিনিটেই! কিন্তু দিনের শেষে মাথা নীচু করেই মাঠ ছাড়তে হল লুকা মদ্রিচকে। পেনাল্টি নষ্ট করার কয়েক সেকেন্ড পরে গোল করে ক্রোয়েশিয়াকে এগিয়ে দিয়েছিলেন মদ্রিচ। খেলা শেষ হওয়ার কয়েক মুহূর্ত আগে তা শোধ করে দিলেন মাত্তিয়া জাক্কানি। অন্য ম্যাচে আলবেনিয়াকে হারিয়ে স্পেন নয় পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপে শীর্ষে থাকল। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইটালির তিন ম্যাচে চার পয়েন্ট। ক্রোয়েশিয়া থাকল তিন ম্যাচে দু’পয়েন্টে। নকআউটে ওঠার জন্য তাকিয়ে থাকতে হবে অন্য দলের দিকে। তবে কার্যত ছিটকেই গিয়েছে তারা।
শুরু থেকে ইটালির খেলায় কিছুটা মন্থর ভাব লক্ষ করা যাচ্ছিল। বলের নিয়ন্ত্রণ তারা নিজেদের পায়ে রেখেছিল ঠিকই। কিন্তু গোলের সুযোগ তৈরি করতে পারছিল না। আগের ম্যাচে স্পেনের কাছে ছিন্নভিন্ন হওয়ার স্মৃতি তখনও তাদের মাথায় ঘুরছিল বলেই মনে হয়েছে। ক্রোয়েশিয়া জোর দিয়েছিল প্রতি আক্রমণে। ধীরে ধীরে বলের দখলও নিতে থাকে তারা।
ইটালি ঠিক করেছিল, রক্ষণ কোনও মতে ভাঙতে দেবে না। ফলে ক্রোয়েশিয়ার ফুটবলারেরা বল নিয়ে বক্সের দিকে এগোলেই ইটালির অন্তত পাঁচ জন আটকানোর জন্য চলে আসছিলেন। তার মাঝেই ইটালি ভাল একটি সুযোগ পেয়েছিল। কর্নার থেকে বক্সের ঠিক বাইরে বল পেয়েছিলেন নিকোলো বারেল্লা। তিনি ক্রস তুলেছিলেন। ফাঁকা দাঁড়িয়েছিলেন আলেসান্দ্রো বাস্তোনি। তাঁর জোরালো হেড বাঁচিয়ে দেন ক্রোয়েশিয়ার গোলকিপার ডমিনিক লিভাকোভিচ। পাল্টা দেয় ক্রোয়েশিয়াও। বক্সের বাইরে থেকে বাঁ পায়ে লুকা সুচিচের শট আটকে দেন জিয়ানলুইগি ডোনারুম্মা।
বেশ কিছু ক্ষণ দু’দলের খেলায় আবার নির্বিষ ফুটবল দেখা যায়। দু’দলই বার বার আক্রমণে উঠতে চাইছিল। কিন্তু ভুল পাসের কারণে কেউই সুযোগ তৈরি করতে পারছিল না। ফলে মাঝমাঠেই ঘোরাফেরা করছিল বল।
দ্বিতীয়ার্ধে ক্রোয়েশিয়ার আক্রমণের ঝাঁজ বাড়ে। ইটালির তুলনায় তাদের অনেক বেশি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মনে হচ্ছিল। কয়েক মিনিট পরেই পেনাল্টি পায় ক্রোয়েশিয়া। বাঁ দিক থেকে আন্দ্রেই ক্রামারিচের ক্রস বক্সের মধ্যে ডেভিড ফ্রাত্তেসির হাতে লেগে দিক পরিবর্তন করে। রেফারি প্রথমে পেনাল্টি না দিলেও ‘ভার’-এর পরামর্শে রিপ্লে দেখে সিদ্ধান্ত বদলান।
সেই সুযোগ নষ্ট করেন মদ্রিচ। নীচু শট মেরেছিলেন ডোনারুম্মার বাঁ দিকে। ইটালির গোলকিপার ঝাঁপিয়ে সেই শট বাঁচিয়ে দেন। ইটালি সেই সময় একটু হলেও আত্মতুষ্ট হয়ে পড়েছিল। সেই কারণে গোল হজম করে তারা। ডোনারুম্মা সেভ করলেও ইটালির ফুটবলারেরা তখনই আক্রমণে ওঠার আগ্রহ দেখাননি। মুহূর্তের মধ্যে বল পেয়ে যায় ক্রোয়েশিয়া। ডান দিক থেকে ভেসে আসা ক্রসে আন্তে বুদিমিরের প্রচেষ্টা বাঁচিয়ে দেন ডোনারুম্মা। কিন্তু পড়ে যান মাটিতে। উঠে দাঁড়ানোর আগেই পিছনে থাকা মদ্রিচ বাঁ পায়ের শটে বল জালে জড়ান।
এর পরে ইটালি অনেক সুযোগ পেলেও গোল করতে পারেনি। শেষ মুহূর্তে যে তারা গোল করে দেবে, এটা ভাবা যায়নি। ম্যাচের সংযুক্তি সময়ের তখন এক মিনিটেরও কম বাকি। রিকার্ডো কালাফিয়োরির পাস ফাঁকায় পেয়েছিলেন জাক্কানি। নিখুঁত প্লেসিংয়ে বল জালে জড়ান। এই একটি গোলেই স্বপ্নভঙ্গ হয়ে যায় ক্রোয়েশিয়ার।
এ দিকে, শেষ ষোলো নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার কারণে এই ম্যাচে ঝুঁকি নিতে চাননি স্পেনের কোচ লুই দে লা ফুয়েন্তে। ইটালির ম্যাচের দল আমূল বদলে দেন তিনি। আয়মেরিক লাপোর্তে ছাড়া আর কাউকে রাখেননি। বদলে দেন গোলকিপারকেও। তাতে শুরুর দিকে খুব একটা সুবিধা হয়নি স্পেনের। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার লড়াইয়ে নামা আলবেনিয়াকে অনেক বেশি ক্ষুরধার মনে হচ্ছিল। প্রথম থেকেই তারা আক্রমণ করতে থাকে।
খেলার দখল স্পেনের কাছে আসতে প্রায় দশ মিনিট কেটে যায়। ১২ মিনিটের মধ্যে দু’বার গোলের সুযোগ তৈরি করে ফেলেছিল তারা। জেসুস নাভাসের ক্রস থেকে শট নিয়েছিলেন মেরিনো। তা বাঁচিয়ে দেন আলবেনিয়ার গোলকিপার স্ত্রাকোশা। তার পরেই লাপোর্তের ক্রসে জোসেলুর হেড অল্পের জন্য বারের উপর দিয়ে উড়ে যায়।
স্পেন এগিয়ে যেতে সময় নেয় ১৪ মিনিট। দানি ওলমো সামনে অনেকটা জায়গা পেয়ে দৌড়তে থাকেন এবং ক্রস দেন ফেরান তোরেসকে। এতটাই নিখুঁত ছিল সেই পাস যে তোরেস ইচ্ছামতো সময় নিয়ে সেই বল জালে জড়ান। এর পর স্পেন ফিরে যায় নিজের খেলায়। বলের নিয়ন্ত্রণ ফিরে আসে তাদের পায়ে। আলবেনিয়াকে প্রথমার্ধে সুযোগই দেয়নি তারা।
দ্বিতীয়ার্ধেও আলবেনিয়া সে ভাবে সুযোগ পায়নি। বলা ভাল, সুযোগ দেয়নি স্পেনই। তারা বল রেখেছিল নিজেদের পায়েই। আলবেনিয়া মাঝেমধ্যে বল কেড়ে নিয়ে প্রতি আক্রমণে উঠলেও সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি।