টসেই বোধহয় ম্যাচের ভাগ্য নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। টস জিতে প্রথমে বল করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। তিনি বলেন, ১৫০-১৬০ রানের মধ্যে ভারতকে আটকানোর চেষ্টা করবেন। কিন্তু প্রথমে ব্যাট করে ১৯৬ রান করে ভারত। বাংলাদেশের প্রত্যাশার থেকে অন্তত ৩০ রান বেশি। সেটাই ম্যাচের ভাগ্য নিশ্চিত করে দেয়। শেষ পর্যন্ত ৫০ রানে হারে বাংলাদেশ। প্রথমে আফগানিস্তান ও তার পর বাংলাদেশকে হারিয়ে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের পথে এগিয়ে গেলেন রোহিত শর্মারা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিরুদ্ধে পাঁচটি ম্যাচ খেলে সব ক’টিই হারল বাংলাদেশ। পর পর দুই ম্যাচ হেরে শাকিব আল হাসানদের বিশ্বকাপের স্বপ্ন প্রায় শেষ হয়ে গেল।
বিশ্বকাপের শুরু থেকে ভারতের ব্যাটিং তাদের সমস্যায় ফেলছিল। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ফর্মে ফিরলেন ব্যাটারেরা। বিশেষ করে দলের মিডল অর্ডার। অর্ধশতরান করলেন হার্দিক পাণ্ড্য। রান করলেন শিবম দুবেও। পরে বল হাতে নজর কাড়লেন কুলদীপ যাদব। তবে এখনও বিরাট কোহলি ও রোহিতের ফর্ম ভারতকে চিন্তায় রাখবে। তাঁরা শুরুটা করলেও বড় রান করতে পারছেন না। বাজে শট খেলে উইকেট দিয়ে আসছেন। বড় দলের বিরুদ্ধে এই ভুল করলে সমস্যায় পড়তে হবে দলকে।
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং শুরু করেন রোহিত ও বিরাট। মাঠের এক দিক থেকে অন্য দিকে দ্রুত হাওয়া বইছিল। হাওয়ার দিকে শট খেললে ধরতে সমস্যা হচ্ছিল ফিল্ডারদের। প্রথম তিন ওভারে ৩০ রান পার হয়ে যায় ভারতের। শাকিবের বলে একটি ছক্কা মেরেছিলেন রোহিত। আবার ছক্কা মারতে গিয়ে ফেরেন তিনি। ১১ বলে ২৩ রান করেন রোহিত। বিরাটও বেশি কয়েকটি বড় শট খেলেন। দেখে মনে হচ্ছিল, অ্যান্টিগার মাঠে বড় রান করবেন তিনি। কিন্তু তানজিম সাকিবের বলে উইকেট ছেড়ে মারতে গিয়ে বলের লাইন মিস্ করেন বিরাট। ২৮ বলে ৩৭ রান করে আউট হন তিনি।
ভারতকে বড় ধাক্কা দেন তানজিম। একই ওভারে সূর্যকুমার যাদবকে আউট করেন তিনি। প্রথম বলে ছক্কা মারেন সূর্য। পরের বলে উইকেটরক্ষকের পাশ দিয়ে খেলতে যান। কিন্তু তানজিমের বল পড়ে একটু বেশি লাফায়। ফলে সূর্যের গ্লাভসে লেগে উইকেটরক্ষক লিটনের হাতে ক্যাচ যায়। ভুল করেননি লিটন। ৬ রানে আউট হন সূর্য।
তিন নম্বরে নেমে এই ম্যাচেও ফর্মে ব্যাট করছিলেন ঋষভ পন্থ। শুরুর কয়েকটি বল বাদ দিয়ে চেনা ফর্মে শট মারতে শুরু করেন। দলের রানকে ১০০-র গণ্ডি পার করান। কিন্তু আরও এক বার নিজের উইকেট ছুড়ে এলেন পন্থ। আগের ম্যাচেও রিভার্স সুইপ মারতে গিয়ে আউট হয়েছিলেন। এই ম্যাচেও সেই রিভার্স সুইপ মারতে গেলেন। দেখে মনে হল, আগে থেকেই মনস্থির করে নেন পন্থ। ঝুঁকি আছে জেনেও সেই শট খেলেন। আরও এক বার রিভার্স সুইপ ফেরাল পন্থকে। ২৪ বলে ৩৬ রান করেন তিনি।
১০৮ রানে ৪ উইকেট পড়ায় কিছুটা চাপে পড়ে যায় ভারত। সেখান থেকে দলকে টানলেন শিবম ও হার্দিক। বিশ্বকাপ যত এগোচ্ছে তত আত্মবিশ্বাস বাড়ছে শিবমের। হার্দিক আগের ম্যাচেও ভাল খেলেছিলেন। এই ম্যাচে আরও ভাল খেললেন তিনি। প্রথম কয়েকটি বল দেখে খেললেন তাঁরা। তার পরে হাত খুললেন। হাওয়ার সাহায্য নিয়ে শট খেললেন। ফলে বড় শট মারতে সমস্যা হল না। দু’জনের মধ্যে ৫৩ রানের জুটি হয়। ২৪ বলে ৩৪ রান করে আউট হন শিবম।
শেষ কয়েকটি ওভারে আরও হাত খোলেন হার্দিক। শেষ বলে চার মেরে অর্ধশতরান করেন তিনি। মাত্র ২৭ বলে ৫০ রান করেন তিনি। ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৯৬ রান করে ভারত। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে তানজিম ও রিশাদ হোসেন ২টি করে উইকেট নেন। ১টি উইকেট নেন শাকিব। তবে হতাশ করলেন মুস্তাফিজুর রহমান। ৪ ওভারে ৪৮ রান দিলেন তিনি। একটিও উইকেট পাননি তিনি।
জবাবে রান তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভাল করে বাংলাদেশ। তানজিদ হাসান ও লিটন শুরু থেকে বড় শট খেলার চেষ্টা করছিলেন। বাংলাদেশকে প্রথম ধাক্কা দেন সেই শাকিব। লিটনকে ১৩ রানের মাথায় আউট করেন তিনি। তিন নম্বরে নামা অধিনায়ক শান্তর সঙ্গে ভাল জুটি বাঁধেন তানজিদ। পাওয়ার প্লে কাজে লাগিয়ে দ্রুত রান করছিলেন তাঁরা।
ভারতের স্পিনারেরা বলে আসতেই বাংলাদেশের রানের গতি কমে যায়। চাপ বাড়ে ব্যাটারদের উপর। কিন্তু উইকেট পড়ছিল না। ভারতের হয়ে উইকেট নেওয়ার দায়িত্ব নেন কুলদীপ। তিনি বল করতে আসার পরে টানা ৪ ওভার বল করেন। মাত্র ১৯ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন তিনি। তানজিদ (২৯), তৌহিদ হৃদয় (৪) ও শাকিব (১১)-কে ফেরান ভারতের এই বাঁহাতি স্পিনার।
ধীরে ধীরে জয় থেকে দূরে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। শেষ ৫ ওভারে জিততে দরকার ছিল ৮৯ রান। অধিনায়ক শান্ত, মাহমুদুল্লাদের পক্ষে তা করা অসম্ভব ছিল। বাংলাদেশের ব্যাটারদের দেখে মনে হল, জেতার চেষ্টাও করছেন না তাঁরা। কোনও রকমে ভারতের রানের কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা করছেন।
প্রথম স্পেলে বুমরার বলে পন্থ ক্যাচ ছাড়লেও দ্বিতীয় স্পেলে এসে উইকেট নিলেন বুমরা। অধিনায়ক শান্তকে ৪০ রানে ফেরান তিনি। বাংলাদেশের সব আশা সেখানেই শেষ হয়ে যায়। রিশাদ ও মাহমুদুল্লা চেষ্টা করলেও দলকে জয়ের কাছে নিয়ে যেতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৪৬ রানে শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস। ৫০ রানে ম্যাচ জেতে ভারত।