Fruit Fair, Krishibidhan, কৃষিবিধানে তৃতীয় ফল বৈচিত্র্য মেলা

মন্ডৌরিতে বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে একটি চমৎকার ফল গবেষণা কেন্দ্র, যেখানকার সম্প্রসারণনিষ্ঠ গবেষক-অধ্যাপকদের প্রচেষ্টায় তা আজ রাজ্যের এমনকি রাজ্যের বাইরের কৃষিজীবী মানুষেরও আস্থার জায়গা। আস্থাটি উন্নত মানের অধিক ফলনশীল চারাগাছ প্রাপ্তির এবং আধুনিক ফলচাষ সম্পর্কে উন্নত প্রযুক্তির যোগানে। ফল মরশুমে আরও বেশি কৃষকের কাছে পৌঁছে যেতে তারা আয়োজন করেছেন ফলবৈচিত্র্য মেলা, এটি তার তৃতীয় বছর। যদিও ২০১৭-১৮ সাল থেকেই এই আয়োজন ক্ষুদ্র পরিসরে শুরু করেন তারা, জানিয়েছেন প্রকল্প আধিকারিক তথা উদ্ভিদ রোগবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক, ডঃ দিলীপ কুমার মিশ্র।

বিগত কয়েক বছরের মতো এই আয়োজন সম্পন্ন করেছে সর্ব ভারতীয় ফল গবেষণা প্রকল্পের বিজ্ঞানীরা। ICAR-AICRP on Fruits এই প্রকল্পের নাম। সারাভারতে প্রকল্পের শাখা ৪৯টি। বিধান চন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পশ্চিমবঙ্গে একমাত্র তেমনই একটি শাখা- মোহনপুর কেন্দ্র (Mohanpur Center)। কৃষকের জমিতে লভ্য নানান ফলের সৌকর্য প্রদর্শন এবং তা অন্য কৃষককে উৎসাহিত করতেই এই মেলার আয়োজন, জানিয়েছেন প্রকল্পের উদ্যানবিদ অধ্যাপক কল্যাণ চক্রবর্তী।

মোট ১২টি জেলা থেকে প্রায় ৮৫ জন ফল চাষি, চারা কুশলী, প্রশিক্ষণকারি, ফল প্রক্রিয়াকরণকারী এবং উৎসাহী ফলপ্রেমি মানুষ এতে অংশগ্রহণ করেছেন।

প্রকল্পের অপর বিজ্ঞানী অধ্যাপক ফটিক বাউরি জানালেন, স্ব-সহায়ক মহিলাদের উদ্যোগ এবারের মেলাকে আরও প্রাণবন্ত করেছে। অধ্যাপক মিশ্র জানিয়েছেন সতেজ ফলের পাশাপাশি ফল প্রক্রিয়াকরণের উপরও এবার জোর দেওয়া হয়েছে, হরিণঘাটা বিডিও’র পক্ষ থেকে ২০ জন স্ব-রোজগার প্রকল্পের মহিলা আজ ভাগ নিয়েছেন ফল প্রকৃয়াকরণের প্রশিক্ষণ শিবিরে। জোর দেওয়া হয়েছে গৌণফল তথা হারিয়ে যেতে বসা ফলগুলিকেও, যেগুলোর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন খনিজ লবণ, খাদ্যগুন এবং অনেক ঔষধি গুণও।

অধ্যাপক কল্যাণ চক্রবর্তী আমাদের জানালেন,”বারোমাসে বারোফল/না খেলে যায় রসাতল”– এমন প্রবাদ বাংলাতেই প্রচলিত, তাই ফলবৈচিত্র্য মানুষকে শেখাতে হয় না। প্রয়োজন অর্থকরী চাষ করে তা থেকে লাভের মুখ দেখা। এই প্রকল্প সব সময় চাষিদের সেই পথ দেখায়। এই ফলমেলায় প্রশিক্ষণের বন্দোবস্তও ছিল। ছিল একটি বিপনন কেন্দ্র, বিভিন্ন ফলের চারা গাছ, প্রক্রিয়াজাত ফল, ভার্মি কমপোস্ট ইত্যাদি। এ ছাড়াও অংশ নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের শিক্ষক, ছাত্র, গবেষক এবং কর্মীবৃন্দ।

এদিন ফলমেলার উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গৌতম সাহা। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন শঙ্কর দত্ত।তাকে শাল পরিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। বিগত দুই দশক ধরে তিনি বিধান চন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফল গবেষণা কেন্দ্রকে বিভিন্ন আমের জাতের প্রকরণ দিয়ে সাহায্য করেছেন। এছাড়াও ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য আধিকারিকবৃন্দ।

উপাচার্য এই প্রকল্পের কাজকর্মে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন, উদ্যানপালকদের আরও বেশি করে এগিয়ে আসতে বলেছেন। মেলায় প্রদর্শিত সামগ্রীগুলিকে নিয়ে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। পুরস্কার প্রদান সহ অংশগ্রহণকারী সকল প্রতিযোগিকে শংসাপত্র প্রদান করা হয়। কৃষকেরা মাঠ ঘুরে এদিন ফল বাগিচা দেখার সুযোগ পেয়েছেন। বিভিন্ন প্রযুক্তির ব্যবহার এবং আধুনিক প্রকৌশল সম্পর্কে অবহিত হয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.