‘শিশুদের তো মতাদর্শ নেই’, কেন্দ্রীয় বাহিনীকে স্কুল থেকে সরানোর সিদ্ধান্ত নিতে বলল হাই কোর্ট

ভোটের ফল প্রকাশের পরেও রাজনৈতিক হিংসা চলছে রাজ্যে। এই অভিযোগ করে রাজ্য বিজেপি দাবি করছে অন্তত দুর্গাপুজো পর্যন্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখা হোক বাংলায়। অন্য দিকে, কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের থাকা-খাওয়ার জায়গা কোথায় হবে তাই নিয়ে প্রশ্ন উঠল খোদ কলকাতা হাই কোর্টে। মঙ্গলবার রাজ্য এবং কেন্দ্র, উভয়ের কাছেই রিপোর্ট তলব করে আদালত জানতে চাইল স্কুলের পরিবর্তে কোথায় রাখা যায় ৪০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী? বিচারপতি হরিশ টন্ডন এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, স্কুলের বিকল্প হিসাবে কোথায় বাহিনী রাখা হবে, তা নিয়ে রাজ্য এবং কেন্দ্রকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। পরবর্তী শুনানিতে বাহিনী রাখার কী বন্দোবস্ত করা হয়েছে, তা রিপোর্ট দিয়ে আদালতকে জানিয়ে দিতে হবে। আগামী ২১ জুন ওই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে।

লোকসভা ভোটের পর বাংলার নানা জায়গায় ‘রাজনৈতিক হিংসা’র অভিযোগ উঠেছে। যদিও ভোট পরবর্তী হিংসা রুখতে রাজ্যে ৪০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা রয়েছে। নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এই মঙ্গলবার পর্যন্ত বাহিনী রাখা হবে। পরে হাই কোর্টের নির্দেশে সেই সময়সীমা আরও বেড়েছে। উচ্চ আদালত জানায়, ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস মোকাবিলায় আগামী ২১ তারিখ পর্যন্ত বাহিনী থাকবে। এমতাবস্থায় রাজ্যের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় বাহিনী ‘দখল করে রেখেছে’ বলে হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে। মামলাকারীর বক্তব্য, অনেক স্কুল, কলেজে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের থাকার বন্দোবস্ত করার ফলে পড়াশোনাই শুরু করা যাচ্ছে না। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে আইনজীবী কুমারজ্যোতি তিওয়ারি সওয়াল করেন, কেন্দ্রীয় বাহিনীকে রাখার দায়িত্ব রাজ্যের। এখন ২৩২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাহিনী রয়েছে। ৪০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীর অধিকাংশকে অন্য জায়গায় রাখা হয়েছে। অন্য দিকে, রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) কিশোর দত্তের বক্তব্য, ‘‘নির্বাচনী আদর্শ আচরণবিধি উঠে গিয়েছে। এখন কেন রাজ্য বাহিনী রাখার দায়িত্ব নেবে? কেন্দ্রের উচিত তাদের কোনও জায়গায় বাহিনী রাখা।’’

দুই তরফের দু’রকম যুক্তি শোনার পর বিচারপতি টন্ডনের মন্তব্য, ‘‘রাজ্য ও কেন্দ্রের মতাদর্শ আলাদা থাকতে পারে। কিন্তু শিশুদের কোনও মতাদর্শ নেই। তাদের শিক্ষার কথা আগে চিন্তা করতে হবে। এ ভাবে একে অপরের বিরুদ্ধে দায় না ঠেলে দু’জনেই সদর্থক ভূমিকা নিতে হবে। বাহিনী রাখার বিকল্প জায়গা খুঁজতে হবে।’’ হাই কোর্ট এ-ও জানায়, শিশুদের শিক্ষার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে আদালত দেখছে। পড়ুয়াদের ক্ষতি হবে এমন জিনিস করা যাবে না। এর পরেই দুই বিচারপতির বেঞ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছেড়ে অন্যত্র বাহিনী রাখা নিয়ে আগামী তিন দিনের মধ্যে রাজ্য ও কেন্দ্রকে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.