তৃতীয় বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিতে চলছেন নরেন্দ্র মোদী। তাঁর সঙ্গেই শপথ নেওয়ার কথা বেশ কয়েক জন পূর্ণমন্ত্রী এবং প্রতিমন্ত্রীর। এ বার একক ভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি বিজেপি। তাই সরকার গড়তে এনডিএ-র শরিক দলগুলির উপরে অনেকাংশে নির্ভর করতে হচ্ছে পদ্মশিবিরকে। তাই শরিক দলগুলির বরাতে কোন কোন মন্ত্রিত্ব যায়, সে দিকে নজর রয়েছে সকলের।
বিজেপি সূত্রে খবর, স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা, অর্থ, শিক্ষা এবং সংস্কৃতির মতো ‘গুরুত্বপূর্ণ’ মন্ত্রক নিজেদের হাতেই রাখছে তারা। অন্য গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকগুলির গুলির মধ্যে বেশ কিছু বণ্টন করা হতে পারে শরিক দল চন্দ্রবাবু নায়ডুর টিডিপি, নীতীশ কুমারের জেডিইউ, চিরাগ পাসোয়ানের এলজেপি (আর), একনাথ শিন্ডের শিবসেনা, এইচডি দেবগৌড়ার জেডিএস এবং জয়ন্ত চৌধরির আরএলডি-র মধ্যে। রবিবার বেলায় নিজের সাত, লোককল্যাণ মার্গের বাড়িতে এনডিএ-র বেশ কয়েক জন সাংসদকে চা-চক্রে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন মোদী। মনে করা হচ্ছে, মোদীর ডাক পাওয়া সাংসদদের প্রায় প্রত্যেকেই মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেতে চলেছেন।
পদ্মশিবির সূত্রে খবর, বিদায়ী মন্ত্রিসভার মতোই নতুন মন্ত্রিসভায় থাকতে পারেন বিজেপির রাজনাথ সিংহ, অমিত শাহ, নির্মলা সীতারমন, পীযূষ গয়াল, এস জয়শঙ্কর। রবিবারের চা-চক্রে হাজির ছিলেন বিজেপি সভাপতি জেপি নড্ডা। যা দেখে অনেকেরই অনুমান, সাংগঠনিক দায়িত্ব থেকে ফের তাঁকে মন্ত্রিসভায় আনা হচ্ছে। মন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন তিন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, মধ্যপ্রদেশের শিবরাজ সিংহ চৌহান, হরিয়ানার মনোহরলাল খট্টর এবং কর্নাটকের বাসবরাজ বোম্মাই। তিন জনেই শনিবারের চা-চক্রে হাজির ছিলেন। চন্দ্রবাবুর দল থেকে পূর্ণমন্ত্রী হতে পারেন কে রামমোহন নায়ডু এবং চন্দ্রশেখর পেম্মাসানি। নীতীশের দল থেকে মন্ত্রী হতে পারেন লাল্লন সিংহ এবং সঞ্জয় ঝায়ের মধ্যে যে কোনও এক জন। মন্ত্রী হতে পারেন জেডিইউ-র রাজ্যসভার সাংসদ রামনাথ ঠাকুর। এলজেপি থেকে মন্ত্রী হতে পারেন প্রয়াত রামবিলাস পাসোয়ানের পুত্র চিরাগ।
‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ বিজেপি সূত্রকে উদ্ধৃত করে একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, একটি পূর্ণমন্ত্রী এবং একটি প্রতিমন্ত্রীর পদ পেতে চলেছে চন্দ্রবাবুর দল। শিবসেনা (শিন্ডে)-র তরফে পূর্ণমন্ত্রী হতে চলেছেন প্রতাপরাও জাধব। জেডিএস থেকে মন্ত্রী হতে পারেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী দেবগৌড়ার পুত্র এইচডি কুমারস্বামী। এ ছাড়াও এনডিএ-র ছোট শরিক দলগুলির মধ্যে হিন্দুস্তান আওয়াম মোর্চা (হাম)-এর জিতনরাম মাঝিঁ, রিপাবলিক পার্টি অফ ইন্ডিয়া (আরপিআই-এ)-র রামদাস অঠওয়ালে, আজসু-র চন্দ্রশেখর চৌধুরী পূর্ণমন্ত্রী হতে পারেন বলে খবর।
বিজেপির যাঁরা এই মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেতে পারেন, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন অসমের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল, কেরলের একমাত্র পদ্ম-সাংসদ সুরেশ গোপী, নিতিন গডকড়ী, ধর্মেন্দ্র প্রধান, প্রহ্লাদ জোশী, অশ্বিনী বৈষ্ণব, জ্যোতিরাদিত্য শিন্ডে, কিরেন রিজিজু, গিরিরাজ সিংহ, জিতিন প্রসাদ।
এ বার কোয়েম্বত্তূর কেন্দ্র থেকে ভোটে লড়ে হেরে গেলেও মোদী মন্ত্রিসভার সদস্য হতে পারেন তামিলনাড়ুর বিজেপি সভাপতি কে আন্নামালাই। তবে তাঁকে প্রতিমন্ত্রী করা হতে পারে। বিদায়ী মোদী মন্ত্রিসভায় ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের চার জন। নিশীথ প্রামাণিক (স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী), শান্তনু ঠাকুর (জাহাজ প্রতিমন্ত্রী), জন বার্লা (সংখ্যালঘু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী) এবং সুভাষ সরকার (শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী)। এ বার অবশ্য বিজেপির আসনসংখ্যা ১৮ থেকে কমে ১২ হয়েছে। হেরেছেন সুভাষ, নিশীথ। আর বার্লা টিকিটই পাননি। মন্ত্রিসভাতেও কমছে বাংলার প্রতিনিধিত্ব। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে বিজেপি রাজ্য সভাপতি তথা বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদার এবং বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুর প্রতিমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিতে চলেছেন। ঘটনাচক্রে, দু’জনেই রবিবার মোদীর বাসভবনে হওয়া চা-চক্রে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন।