ব্যাটে-বলে অস্ট্রেলিয়ার দাপট, ৩৬ রানে জিতলেন মার্শেরা, হেরে চাপে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড

চলতি বিশ্বকাপের শুরু থেকে দাপট দেখাচ্ছেন বোলারেরা। যেখানে ১৪০ রান করতে দলগুলির সমস্যা হচ্ছে, সেখানে প্রথমে ব্যাট করে ২০১ রান করল অস্ট্রেলিয়া। বোলারদের বিশ্বকাপে দাপট দেখালেন অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটারেরা। কিন্তু ইংল্যান্ডের ব্যাটারেরা সেটা করে দেখাতে পারলেন না। ফলে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৩৬ রানে হারতে হল তাঁদের। স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেস্তে যাওয়ায় ১ পয়েন্ট পেয়েছিল ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধেও পয়েন্ট হারাল তারা। ফলে দু’ম্যাচ শেষে চাপে গত বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড।

টস জিতে প্রথমে বল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের অধিনায়ক জস বাটলার। তিনিও হয়তো ভেবেছিলেন চলতি বিশ্বকাপে যে ভাবে বোলারেরা দাপট দেখাচ্ছেন, তার ফায়দা তুলবেন। কিন্তু সেটা হল না। প্রথম ওভার থেকেই বড় শট খেলা শুরু করলেন অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনার ট্রেভিস হেড ও ডেভিড ওয়ার্নার। তাঁদের খানিকটা সুবিধা করে দিলেন ইংল্যান্ডের বোলারেরা। গায়ের জোরে বল করলেন মার্ক উড, ক্রিস জর্ডনেরা। তার সুবিধা পেলেন ব্যাটারেরা।

বার্বাডোজ়ের মাঠে এক দিকের বাউন্ডারি ছিল ৭৪ মিটার। অন্য দিকের বাউন্ডারি ৫৮ মিটার। ছোট বাউন্ডারি কাজে লাগিয়ে বড় শট মারছিলেন দুই ব্যাটার। পাওয়ার প্লে-র মধ্যে তিন বার বল মাঠের বাইরে গেল। পাওয়ার প্লে কাজে লাগিয়ে প্রথম পাঁচ ওভারে ৭০ রান করে অস্ট্রেলিয়া। তাদের প্রথম ধাক্কা দেন মইন আলি। ১৬ বলে ৩৯ রান করে বোল্ড হন ওয়ার্নার। পরের ওভারে জোফ্রা আর্চারের বলে ১৮ বলে ৩৪ রান করে ফেরেন হেড। পাওয়ার প্লে-তে ২ উইকেট হারিয়ে ৭৪ রান করে অস্ট্রেলিয়া।

দুই ওপেনার আউট হলেও অস্ট্রেলিয়ার রানের গতি কমেনি। মিচেল মার্শ ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলও জুটি বাঁধেন। প্রতি ওভারে বড় শট আসছিল। পেসার, স্পিনার সবাই রান দিচ্ছিলেন। ম্যাক্সওয়েল ২৮ রান করে আউট হন। অধিনায়ক মার্শ করেন ৩৫ রান।

পাঁচ নম্বরে নেমে মার্কাস স্টোয়নিসও দ্রুত রান করছিলেন। তবে প্রথম ১০ ওভারের পরে পিচ কিছুটা বুঝতে পারেন ইংল্যান্ডের বোলারেরা। পেসারেরা বলের গতির হেরফের করেন। লিয়াম লিভিংস্টোনের স্পিন সমস্যায় ফেলছিল ব্যাটারদের। ফলে রানের গতি কিছুটা কমে অস্ট্রেলিয়ার। একটা সময় দেখে মনে হচ্ছিল ২২০-২৩০ রান করবে তারা। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ২০১ রান করে অস্ট্রেলিয়া। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এটি অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ রান। চলতি বিশ্বকাপে এই প্রথম কোনও দল ২০০-র বেশি রান করল।

২০২ রান তাড়া করতে নেমে ভাল শুরু করেছিলেন ইংল্যান্ডের দুই ওপেনার ফিল সল্ট ও বাটলার। দু’জনেই আইপিএলে ভাল ফর্মে ছিলেন। সে ভাবেই ব্যাট করছিলেন। প্রতি ওভারে ১০ রানের বেশি হচ্ছিল। পাওয়ার প্লে-তে কোনও উইকেট নিতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। মিচেল স্টার্ক প্রথম স্পেলে ভাল বল করলেও পাওয়ার প্লে-র পরে প্রথম ওভারে ১৯ রান দেন।

অষ্টম ওভারে অ্যাডাম জ়াম্পার হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক মার্শ। সেখানেই খেলা ঘুরে গেল। প্রথম বলেই সল্টকে বোল্ড করে অস্ট্রেলিয়াকে খেলায় ফেরান জ়াম্পা। ২৩ বলে ৩৭ রান করে ফেরেন কেকেআরের সল্ট। ইংল্যান্ডকে দ্বিতীয় ধাক্কাও দেন জ়াম্পা। বাটলারকে ৪২ রানে ফেরান তিনি।

ওপেনিং জুটি আউট হওয়ার পরে ইংল্যান্ডের রানের গতি কমে যায়। অস্ট্রেলিয়ার বোলারেরা গতির হেরফের করছিলেন। ফলে সমস্যা হচ্ছিল ব্যাটারদের। উইল জ্যাকস (১০), জনি বেয়ারস্টো (৭) রান পাননি। মইন কয়েকটি বড় শট মারলেও ২৫ রান করে প্যাট কামিন্সের বলে আউট হয়ে যান।

উইকেট পড়ায় জরুরি রানরেট ক্রমাগত বাড়ছিল। বোঝা যাচ্ছিল, ধীরে ধীরে ম্যাচ নিজেদের দখলে নিচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। ইংল্যান্ডের বোলারেরা যে ভুল করেছিলেন, কামিন্সেরা তা করেননি। প্রায় প্রতি বলই কাটার করছিলেন তাঁরা। ফলে ব্যাটে-বলে করতে সমস্যা হচ্ছিল।

শেষ ২৪ বলে ৭২ রান দরকার ছিল ইংল্যান্ডের। ক্রিজ়ে লিভিংস্টোন, হ্যারি ব্রুকের মতো ব্যাটারেরা থাকলেও তা তাড়া করতে পারেনি ইংল্যান্ড। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৬৫ রান করে তারা। ৩৬ রানে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালের পথে অনেকটাই এগিয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.