প্রত্যশা মতোই ভারতের সহজ জয়, ফাঁকা মাঠ, দুর্বল প্রতিপক্ষ প্রশ্ন তুলে দিল বিশ্বকাপের মান নিয়ে

নাসাউয়ের ২২ গজ দেখে চরিত্র বুঝতে পারেননি রোহিত শর্মা। বুঝে নেওয়ার জন্য টস জিতে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন। অভিজ্ঞতা থেকে নেওয়া সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিল না, কয়েক ওভার খেলা গড়াতেই তা প্রমাণ হয়ে গেল। প্রথমে ব্যাট করে আয়ারল্যান্ড করল ৯৬ রান। ১২.২ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে রোহিতেরা করলেন ৯৭ রান। প্রত্যাশা মতো সহজ জয় দিয়ে ভারত অভিযান শুরু করলেও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মান নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠে গেল। নিউ ইয়র্কের নাসাউ কাউন্টির মাঠ কতটা ২০ ওভারের ক্রিকেটের জন্য উপযুক্ত, সে প্রশ্ন থাকছেই।

জয়ের জন্য ৯৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা ভারতের ইনিংসের শুরুটা ভাল হয়নি। শুরুতেই আউট হয়ে যান বিরাট কোহলি (৫ বলে ১)। আইপিএলে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু হল ব্যর্থতা দিয়ে। তবে রোহিত এবং তিন নম্বরে নামা ঋষভ পন্থ ২২ গজের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে দলের ইনিংসকে এগিয়ে নিয়ে যান। আয়ারল্যান্ডের ইনিংসের সময় ভারতীয় বোলারদের বিপজ্জনক দেখালেও আইরিশ বোলারদের ততটা ভয়ঙ্কর দেখাল না। আয়ারল্যান্ডের ইনিংসের সময় নিউ ইয়র্কের আকাশ ছিল মেঘলা। ভারতের ইনিংসের সময় রোদ উঠে যায়। তবু নিউ ইয়র্কের মাঠের মান নিয়ে প্রশ্ন থাকবে। পিচে অসমান বাউন্স। আউট ফিল্ড অত্যন্ত মন্থর। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের জন্য উপযুক্ত। এ ভাবে বিশ্বকাপের আয়োজনে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটও কার্যত উত্তেজনাহীন। মাঠও ছিল ফাঁকা। সব মিলিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেল।

কোহলির মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে ব্যর্থ বলেন সূর্যকুমার যাদবও। ২ রান করে আউট হলেন বেন হোয়াইটের বলে। আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে হেলায় জয়ের মধ্যেও তৈরি হল উদ্বেগ। ৩৭ বলে ৫২ রান করার পর কাঁধে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়তে হল অধিনায়ক রোহিতকে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে যা ভাল ইঙ্গিত নয়। ৪টি চার এবং ৩টি ছক্কা মারেন রোহিত। শেষ পর্যন্ত ২২ গজে ছিলেন ঋষভ পন্থ এবং শিবম দুবে। পন্থ অপরাজিত থাকলেন ২৬ বলে ৩৬ রান করে। ৩টি চার এবং ২টি ছক্কা মারলেন তিনি। শিবম রান করার সুযোগই পেলেন না। আয়ারল্যান্ডের সফলতম বোলার হোয়াইট ৬ রানে ১ উইকেট নিলেন। অ্যাডেইর ১ উইকেট নিলেন ২৭ রান খরচ করে।

নাসাউয়ের উইকেটের অসমান বাউন্স এবং ভারতীয় বোলারদের দাপট— জোড়া ফলার সামনে অসহায় দেখাল আইরিশ ব্যাটারদের। আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে রোহিত ছ’জন বোলারকে ব্যবহার করলেন। রবীন্দ্র জাডেজা ছাড়া সকলে উইকেট পেলেন। ৫০ রানেই ৮ উইকেট হারিয়ে ম্যাচের ভবিষ্যৎ এক রকম নিশ্চিত করে দেন আইরিশ ক্রিকেটারেরা। শেষ দিকে গুজরাত টাইটান্সের জশ লিটিল এবং গ্যারেথ ডেলানির মরিয়া চেষ্টা কিছুটা মুখ রক্ষা করল আয়ারল্যান্ডের। আইরিশ ইনিংসের তৃতীয় ওভারে জোড়া ধাক্কা দেন আরশদীপ সিংহ। তার পর নিয়মিত ব্যবধানে উইকেট হারিয়ে ১৬ ওভারে শেষ হয়ে যায় আয়ারল্যান্ডের ইনিংস।

আরশদীপের পর যশপ্রীত বুমরা, হার্দিক পাণ্ড্য, মহম্মদ সিরাজও অস্বস্তিতে রাখলেন আয়ারল্যান্ডের বোলারেরা। অ্যান্ডি বলবির্নি (৫), পল স্টার্লিং (২), লোরকান টাকার (১০), হ্যারি টেক্টর (৪), কার্টিস ক্যাম্ফার (১২), জর্জ ডকরেল (৩), মার্ক অ্যাডেইর (৩), ব্যারি ম্যাককার্থিরা (শূন্য) কেউ দলকে ভরসা দিতে পারলেন না। একটা সময় দেখে বিশ্বাস করা যাচ্ছিল না, বিশ্বকাপের কোনও ম্যাচ বলে। ৫০ রানে ৮ উইকেট হারানোর পরও আয়ারল্যান্ড ৯৬ রান তুলল লিটল এবং ডেলানির জন্য। লিটলই প্রথম কিছুটা আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের চেষ্টা করেন। মারার জন্য বেছে নেন আইপিএলে প্রাক্তন অধিনায়ক হার্দিককে। ২টি চারের সাহায্যে ১৩ বলে ১৪ রান করেন। ডেলানি করেন ১৪ বলে ২৬ রান। মারেন ২টি করে চার এবং ছক্কা।

ভারতের সফলতম বোলার হার্দিক ২৭ রানে ৩ উইকেট নিলেন। ৬ রানে ২ উইকেট বুমরার। ৩৫ রানে ২ উইকেট আরশদীপের। নিজের চতুর্থ ওভারে একটু মার খেয়ে যান তিনি। ৩ রানে ১ উইকেট অক্ষর পটেলের। ১৩ রানে ১ উইকেট সিরাজের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.