বাংলায় তৃণমূলকে ছাপিয়ে যাচ্ছে বিজেপি, ভোট শেষ হতেই আভাস দিল বিবিধ সংস্থার বুথফেরত সমীক্ষা

দেড় দশক পর এই প্রথম কি বাংলার কোনও বড় ভোটে দ্বিতীয় স্থানে নেমে যেতে চলেছে তৃণমূল? তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে বিভিন্ন বুথফেরত সমীক্ষা। অধিকাংশ সমীক্ষারই ইঙ্গিত, সদ্য শেষ হওয়া সাত দফার লোকসভা ভোটে বাংলার ৪২টি আসনের লড়াইয়ে তৃণমূলকে ছাপিয়ে যেতে চলেছে বিজেপি। শনিবার সপ্তম দফার ভোট শেষ হতেই বিভিন্ন সংস্থার সমীক্ষা প্রকাশিত হতে শুরু করেছে। আনন্দবাজার অনলাইন তার মধ্যে থেকে তিনটি সংস্থার সমীক্ষা তুলে ধরছে। সেই তিনটি সমীক্ষাতেই স্পষ্ট, আসনের বিচারে এ বার সবার উপরে থাকছে বিজেপি। তৃণমূল দু’নম্বরে। আসন সংখ্যা থেকে ভোট শতাংশ— দু’টি ক্ষেত্রেই রাজ্যের শাসকদলকে পিছনে ফেলে দিচ্ছে কেন্দ্রের শাসকদল।

ভারতীয় গণতন্ত্রের ইতিহাস বলছে, বুথফেরত সমীক্ষার ইঙ্গিত যে সব সময় মেলে, এমন নয়। বুথফেরত সমীক্ষা একেবারে ভুল প্রমাণিত হওয়ার উদাহরণও অসংখ্য। বুথফেরত সমীক্ষার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নিয়েও অনেক প্রশ্ন রয়েছে। তবে বুথফেরত সমীক্ষার পূর্বাভাস মিলে যাওয়ার উদাহরণও রয়েছে। ভোট পণ্ডিতদের একাংশ মনে করেন, এই ধরনের সমীক্ষায় মোটের উপর ভোটারের মনের একটি আভাস পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

এবিপি-সি ভোটারের বুথফেরত সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, বাংলার ৪২টি লোকসভার মধ্যে বিজেপি পেতে পারে ২৩-২৭টি আসন। ভোট হতে পারে ৪২.৫ শতাংশ। তৃণমূলের ২২ থেকে কমে হতে পারে ১৩-১৭টি আসন। ভোট শতাংশও কমতে পারে বলে আভাস মিলেছে এই সমীক্ষায়। তৃণমূল পেতে পারে ৪১.৫ শতাংশ ভোট। বাম-কংগ্রেসের মিলিত ভোট হতে পারে ১৩.২ শতাংশ। ১-৩টি আসন জিততে পারে তারা।

নিউজ় ২৪ এবং চাণক্যের বুথফেরত সমীক্ষায় আভাস, বাংলায় বিজেপি পেতে পারে ২৪ (+-৫)টি আসন। তৃণমূল পেতে পারে ১৭ (+-৫)টি আসন। আর কংগ্রেসের দুই থেকে কমে হতে পারে একটি আসন। বিজেপির ঝুলিতে আসতে পারে ৪৪ শতাংশ ভোট। তৃণমূলের ভোট কিছুটা ক্ষয়ে হতে পারে ৪১ শতাংশ। আর বাম-কংগ্রেসের মিলিত ভোট হতে পারে ১১ শতাংশ।

ইন্ডিয়া টুডে-অ্যাক্সিস মাই ইন্ডিয়ার বুথফেরত সমীক্ষায় ইঙ্গিত, তৃণমূল পেতে পারে ১১-১৪টি আসন। বিজেপি পেতে পারে ২৬-৩১টি আসন। আর বাম-কংগ্রেস জোট পেতে পারে ০-২টি আসন। এই সমীক্ষায় আভাস, তৃণমূলের ঝুলিতে আসতে পারে ৪০ শতাংশ ভোট, বিজেপি পেতে পারে ৪৬ শতাংশ ভোট এবং বাম-কংগ্রেসের মিলিত ভোট হতে পারে ১২ শতাংশ। অন্যেরা পেতে পারে ২ শতাংশ ভোট।

প্রতিটি সমীক্ষাতেই উল্লেখ করা হয়েছে, তৃণমূলের বিরুদ্ধে যে বিবিধ দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, তা বাংলার শাসকদলের আসন এবং ভোট কমানোর ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নিতে পারে। কিছু কিছু আসনে সংখ্যালঘু ভোটও তৃণমূলের থেকে সরে থাকতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে সমীক্ষায়।

২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে রাজ্যে বিজেপি পেয়েছিল ১৮টি আসন। পদ্মশিবিরের প্রাপ্ত ভোট ছিল ৪০.৬ শতাংশ। তৃণমূল পেয়েছিল ২২টি আসন। বাংলার শাসকদলের ঝুলিতে ভোট ছিল ৪৩.৭ শতাংশ। কংগ্রেস পেয়েছিল দু’টি আসন। বামেরা ছিল শূন্য। গত বার বাম-কংগ্রেসের মিলিত (যদিও জোট ছাড়াই লড়েছিল) ভোট ছিল প্রায় ১৩ শতাংশ।

এ বার সেই ভোট শতাংশে বদলের আভাস মিলল। দেখা গেল, বিজেপির ভোট বেশ খানিকটা বৃদ্ধি পেতে পারে। সমান ভাবে কমতে পারে তৃণমূলের ভোট। তবে বাম-কংগ্রেসের মিলিত ভোটের খুব একটা হেরফের দেখা যাচ্ছে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.