রাতভর তাণ্ডবের পরে সকালেও দুর্যোগ পুরোপুরি কাটেনি। এর মধ্যে এক মাসের মেয়েটার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তাকে নিয়ে বাবা-মা তাই ছুটে আসেন হাসপাতালে। অভিযোগ, সেখানে চিকিৎসকের দেখা মেলেনি, ঠিকমতো মেলেনি অক্সিজেনও। ফলে বিনা চিকিৎসায় শিশুটির মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সোমবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগর গ্রামীণ হাসপাতালে। মৃতার নাম তুলিকা মোহতা।
ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক অংশুমান বসু বলেন, ‘‘ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। আমার কাছে অভিযোগ এসেছে। বিষয়টি তদন্ত করে কেউ যদি দোষী হয়ে থাকেন, তাঁর যথাযথ শাস্তির জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট পাঠাব।’’ ডায়মন্ড হারবার স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জয়ন্ত সুকুল বলেন, ‘‘বিষয়টি শুনেছি। বাচ্চাটিকে অক্সিজেন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নেবুলাইজ়ারের গ্যাস দিতে দেরি হয়েছিল শুনলাম। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।’’
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সাগরের খানসাহেব আবাদ এলাকার বাসিন্দা শিবশঙ্কর মোহতার মেয়ে তুলিকা। শ্বাসকষ্টজনিত কারণে এ দিন সকালে শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। অভিযোগ, হাসপাতালে মেয়েকে নিয়ে গিয়ে শিবশঙ্কর দেখেন, জরুরি বিভাগে চিকিৎসক নেই। মেয়ের তখন অক্সিজেন প্রয়োজন।
শিবশঙ্করের দাবি, হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মী জানান, দুর্যোগের কারণে বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল না। ফলে, অক্সিজেন দেওয়া সম্ভব নয়। তিনি শিবশঙ্করদের বাইরে থেকে নেবুলাইজ়ারের ওষুধ কিনে আনতে বলেন। এও বলেন, বাইরে থেকে কিনে আনলেও তা দিতে সময় লাগবে। শিবশঙ্করের অভিযোগ, হাসপাতালে জরুরি ব্যবস্থা থাকলেও তা ব্যবহার করা হয়নি। আধ ঘণ্টা পরে চিকিৎসক এসে চিকিৎসা শুরু করার আগেই তুলিকা মারা যায় বলে তাঁর দাবি। অভিযোগ, মেয়েটি মারা যাওয়ার পরে জেনারেটর চালু করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবিলায় প্রশাসনের তরফে জরুরি ব্যবস্থায় জেনারেটর থাকার কথা। সেখানে ওই হাসপাতালে জেনারেটর থাকলেও সময়ে তা ব্যবহার করা হয়নি কেন, সেই প্রশ্ন উঠেছে। এর আগেও সাগর গ্রামীণ হাসপাতালে পরিষেবা নিয়ে নানা অভিযোগ সামনে এসেছে। শিবশঙ্কর বলেন, ‘‘বিনা চিকিৎসায় মেয়েটা মারা গেল। এর জন্য দায়ী কে? আর কত দিন সাগরের বাসিন্দাদের কপালে এই পরিষেবা জুটবে!’’ তিনি জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সব জানানো হয়েছে। শিবশঙ্করের আক্ষেপ, ‘‘আর যেন বিদ্যুতের অভাবে কারও প্রাণ না যায়।’’